চট্টগ্রাম বন্দরে কার্গো ডেলিভারির গতি বাড়াতে পারে ডিস্ট্রিবিউশন পার্ক
চট্টগ্রাম বন্দরে একটি ডিস্ট্রিবিউশন পার্ক বা কনটেইনার ফ্রেইট স্টেশন (সিএফএস) গড়ে তুলতে বন্দর কর্তৃপক্ষের কাছে বে টার্মিনালে ১০০ একর জায়গা বরাদ্দ চেয়েছে বাংলাদেশ ফ্রেইট ফরওয়ার্ডার্স অ্যাসোসিয়েশন (বাফা)। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের মতে, এটি নির্মিত হলে বন্দরে শুল্কায়ন শেষে পণ্য ডেলিভারিতে আগের চেয়ে অনেক কম সময় লাগবে।
জাপানের সঙ্গে যৌথ বিনিয়োগে ১০০ কোটি টাকায় আন্তর্জাতিক মানের ডিন্ট্রিবিউশন পার্ক বা সিএফএস স্থাপনের বিষয়টি সম্প্রতি এক চিঠির মাধ্যমে বন্দর কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে বাফা। জমি বরাদ্দ চেয়ে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল এম শাহজাহানের কাছে চিঠি দিয়েছেন বাফার সভাপতি কবির আহমেদ।
বাফা বলছে, ডিস্ট্রিবিউশন পার্ক হলে চট্টগ্রাম বন্দরের পণ্য ২৪ ঘণ্টার মধ্যে কারখানায় পৌঁছানো সম্ভব হবে।
জাতীয় রাজস্বে বোর্ডের টাইম রিলিজ স্টাডির তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে চট্টগ্রাম বন্দরে পণ্য আসার পর শুল্কায়ন শেষে ডেলিভারি নিতে ১০ দিন ৬ ঘন্টা সময়ের প্রয়োজন হয়। পৃথিবীর উন্নত বন্দরে এই সময় লাগে মাত্র এক থেকে দুই দিন।
বাফা বলছে, তারা একটি বন্ডেড এরিয়ার মধ্যে এ ধরনের একটি ডিস্ট্রিবিউশন পার্ক স্থাপন করতে চায়; যেখানে সমুদ্রবন্দর ও বিমানবন্দরসহ অন্যান্য বন্দরের ফ্রেইট ফরওয়ার্ডারা এটি ব্যবহার করবে পারবে। বে টার্মিনালে এই পার্ক স্থাপন করা গেলে চট্টগ্রাম বন্দর, বে টার্মিনাল, চট্টগ্রাম বিমানবন্দরে আমদানি-রপ্তানি পণ্য ডেলিভারিতে সময় এবং ব্যয় দুটোই কমবে।
বাফার তথ্যমতে, ডিস্ট্রিবিউশন পার্ক স্থাপন করা হলে এতে একটি গেট দিয়ে রপ্তানি পণ্যগুলো ওয়্যারহাউজে ঢুকে সেদিক থেকেই বন্দর হয়ে জাহাজে চলে যাবে। একইভাবে, আমদানিকৃত পণ্যগুলোও বন্দর হয়ে ওয়্যারহাউজ দিয়ে বেরিয়ে নির্দিষ্ট গন্তব্যে যাবে।
বাফার ভাইস প্রেসিডেন্ট খায়রুল আলম সুজন টিবিএসকে বলেন, "এতে বন্দরের ভেতরে অতিরিক্ত লোকজন এবং ট্রাকের আনাগোনা, দুটোই কমবে।"
তিনি বলেন, চট্টগ্রাম বন্দরের ভেতর এলসিএল কার্গো খুলে পণ্য ডেলিভারি দিতে গিয়ে দীর্ঘ সময় লাগে। এ সময়ে পণ্য চুরি ও নষ্ট হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এই দায়ভার বন্দর এবং ফ্রেইট ফরওয়ার্ডারদের ওপর পড়ে। ফ্রেইট ফরওয়ার্ডাররা এর জবাব দিতে পারে না। কারণ নিয়ন্ত্রণটা ফ্রেইট ফরওয়ার্ডারদের কাছে নেই।
তিনি আরো বলেন, "আমরা চাই সিঙ্গাপুরের আদলে বাংলাদেশে একটি ডিস্ট্রিবিউশন পার্ক গড়ে তুলতে। এটি যদি বন্দরের নিয়ন্ত্রণাধীন হয়, তাহলে তা সব স্টেকহোল্ডারদের জন্য সুবিধা হবে। সেক্ষেত্রে বন্দরের রাজস্ব বাড়বে, আবার আমদানি-রপ্তানিকারকসহ ফ্রেইট ফরওয়ার্ডারদের কাজগুলোও সহজ হবে।"
বর্তমানে চট্টগ্রামের ১৯ টি ইনল্যান্ড কনটেইনার ডিপোর (আইসিডি) ধারণক্ষমতা ৭৬ হাজার টিইইউ (টুয়েন্টি-ফুট ইউভেলেন্ট ইউনিটস)। বর্তমানে আমদানি রপ্তানি পণ্য হ্যান্ডেলিংয়ে ২৫ শতাংশ পর্যন্ত স্থান খালি রয়েছে আইসিডিগুলোর। তবে দুই ঈদের আগে রপ্তানি পণ্যের চাপ বেড়ে গেলে আইসিডিগুলোতে স্থান সংকুলান হয়না। পণ্য নিয়ে আইসিডি গেইটে ট্রাকগুলোকে ১৫ থেকে ২০ দিন পর্যন্ত অপেক্ষায় থাকতে হয়।
আগামী ২০৩০ সালে ১০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের পণ্য রপ্তানির লক্ষমাত্রা নির্ধারণ করেছে বাংলাদেশ গার্মেন্টস ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিজিএমইএ)। এখনকার রপ্তানি ভলিউমের দ্বিগুণ পণ্য হ্যান্ডেলিং করা বর্তমান আইসিডি দিয়ে কোনোভাবেই সম্ভব নয় বলে জানিয়েছেন পোশাক মালিকরা।
তারা বলছেন, প্রতিবছর রপ্তানির যে প্রবৃদ্ধি হচ্ছে, তা সামাল দেওয়ার জন্য কনটেইনার স্টোরেজ ক্যাপাসিটি বা ধারণক্ষমতা দ্বিগুণ করা প্রয়োজন। স্টোরেজ ক্যাপাসিটি বাড়াতে ডিস্ট্রিবিউশন পার্কই হতে পারে সমাধান।
বিজিএমইএ'র ভাইস প্রেসিডেন্ট সৈয়দ নজরুল ইসলাম টিবিএসকে বলেন, নিয়ম অনুযায়ী ফ্রেইট ফরওয়ার্ডারদের নিজেদের ওয়্যার হাউজ থাকা উচিত। পৃথিবীর অন্যান্য দেশে এটি রয়েছে।
"আমাদের দেশে ফ্রেইট ফরওয়ার্ডারদের এই সুযোগ এখনো হয়ে উঠেনি। ডিস্ট্রিবিউশন পার্ক স্থাপনে বাফার এই উদ্যোগের বিষয়ে আমাদের দ্বিমত নেই। যেহেতু সরকার বাংলাদেশে ১০০ টি ইকোনোমিক জোন করেছে, এর সঙ্গে এ ধরনের সুবিধাগুলোও তৈরি করা দরকার।"
চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি মাহবুবুল আলম বলেন, পৃথিবীর অন্য দেশে ডিস্ট্রিবিউশন পার্ক থাকলে, এই ধারণাটি বাংলাদেশেও বাস্তবায়ন করা যায়। তবে এক্ষেত্রে ব্যবসায়ীরা কতটুকু লাভবান হবেন সেটি বিবেচনায় রাখতে হবে।
বন্দর থেকে ডেলিভারি বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় ডিস্ট্রিবিউশন পার্কে গেলে ব্যবসায়ীরা যাতে জিম্মি না হয় সে বিষয়টি নিশ্চিত করার কথা উল্লেখ করেন তিনি।
এদিকে, চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিযার অ্যাডমিরাল এম শাহজাহান টিবিএসকে বলেন, বে টার্মিনাল প্রকল্প নির্মাণের কাজ এখনো শুরু হয়নি। তাই এখনই জায়গা বরাদ্দ দেওয়ার সুযোগ নেই।
"তাছাড়া সিএফএস স্টেশন তৈরি করতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড এখনো অনুমতি দেয়নি। বে টার্মিনালের কাজ শেষ হলে সরকার যদি অনুমোদন দেয়, তাহলে ডিস্ট্রিবিউশন পার্কের জন্য জমি বরাদ্দ দেওয়ার সুযোগ রয়েছে," যোগ করেন তিনি।