রপ্তানিকারকদের দাবি উপেক্ষা, রেমিট্যান্সের ডলার রেট কমেছে ৫০ পয়সা
১০৮ টাকার অভিন্ন হার ঘোষণার দুই সপ্তাহ পর ব্যাংকগুলো রেমিট্যান্সের ক্ষেত্রে মার্কিন ডলারের হার ৫০ পয়সা কমিয়েছে। আগামী অক্টোবর থেকে ১০৭.৫০ টাকায় সংগ্রহ করা হবে রেমিট্যান্স বা প্রবাসী আয়। তবে রপ্তানিকারকদের বারবার আহ্বান সত্ত্বেও এক্সপোর্ট প্রসিড এনক্যাশমেন রেট বা রপ্তানি আয় নগদকরণের হার বাড়ানো হয়নি।
সোমবার (২৬ সেপ্টেম্বর) অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স, বাংলাদেশ (এবিবি) এবং বাংলাদেশ ফরেন এক্সচেঞ্জ ডিলার অ্যাসোসিয়েশনের (বাফেদা) মধ্যে এক বৈঠকে রেমিট্যান্সের এই নতুন হারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
বাফেদা বলছে, রপ্তানি আয় আগের মতোই ৯৯ টাকায় এনক্যাশ হবে এবং রেমিট্যান্স ও এক্সপোর্ট প্রসিডের ক্ষেত্রে ডলারের হারের গড় পরিমাপ করে যা আসে, তার চেয়ে এক টাকা বেশি হবে আন্তঃব্যাংক রেট।
বাফেদারর চেয়ারম্যান ও সোনালী ব্যাংক লিমিটেডের ব্যাবস্থাপনা পরিচালক মো. আফজাল করিম বলেন, আমদানি ব্যয় কমানো এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নানান শর্তের কারণে আমদানি লেনদেনের চাপ আগের তুলনায় কমেছে। যার কারণে ডলারের চাহিদাও কিছুটা কমেছে। তাই রেমিট্যান্সে ডলারের দাম কমানো হয়েছে।
যদিও রপ্তানিকারকরা বলছেন, রপ্তানি আয় এনক্যাশ বা নগদ করার ক্ষেত্রে রেট কম দেওয়ায় তাদের ক্ষতি হচ্ছে। তারা জানান, ব্যাক টু ব্যাক এলসি খুলতে ডলার কিনতে হয় ১০৪ টাকা দরে। অথচ এক্সপোর্ট প্রসিড এনক্যাশমেন্টের মূল্য আসছে মাত্র ৯৯ টাকা। এতে রপ্তানিতে জটিলতা সৃষ্টি হবে এবং রপ্তানিকারকরা আগ্রহ হারিয়ে ফেলবেন বলে জানান তারা।
বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিকেএমইএ)-এর নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম টিবিএসকে বলেন, "বাফেদার দেওয়া রেমিট্যান্স ও এক্সপোর্ট প্রসিড এনক্যাশমেন্টের আলাদা হার কোনোভাবেই কাম্য নয়। আমরা রপ্তানিকারকরা রেমিট্যান্সের তুলনায় রপ্তানির নিম্ন হারের প্রতিবাদ জানাচ্ছি। আমরা চাই বাংলাদেশ ব্যাংক এই হার নির্ধারণ করুক।"
তিনি আরও বলেন, ডলারের এমন বৈষম্যমূলক হার দেশের রপ্তানিকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে।
এদিকে, একাধিক বেসরকারি ব্যাংকের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ডলার ও এক্সপোর্ট প্রসিড এনক্যাশমেন্টের একক রেট নির্ধারণের পর প্রবাসীরা রেমেট্যান্স পাঠানো কিছুটা কমিয়েছে। তারা রেমিট্যান্স সে দেশেই জমিয়ে রাখাছেন। তাদের ধারণা, এ রেট আরও বাড়তে পারে। তাই রেমিট্যান্সের রেট কমানো হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, চলতি সেপ্টেম্বরের ২২ তারিখ পর্যন্ত প্রবাসীরা রেমিট্যান্স পাঠিয়েছে ১.২৬ বিলিয়ন ডলার। যদিও আগের মাসে একই সময়ে রেমিট্যান্স পাঠানোর এই পরিমাণ ছিল প্রায় ১.৫০ বিলিয়ন ডলার।
বাফেদা ব্যাংকগুলোর ৫ দিনের রেমিট্যান্স ও এক্সপোর্ট প্রসিডের পরিমাণ গড় করে একটি এলসি আন্তঃব্যাংক রেট এবং এলসি রেট দিয়ে থাকে। তবে ব্যাংকাররা ৫ দিনের জায়গায় ১৫ দিনের ডলারের রেট গড় করতে চাচ্ছেন। এই বিষয়ে সভায় মোটামুটি সবাই একমত হয়েছেন।
এসময় তারা বলেন, ৫ দিনের গড় নিলে রেটটা অনেক বেশি ওঠা-নামা করে। এ কারণে সময় বাড়ানোর কথা বলা হচ্ছে।
সভার একটি সূত্র জানায়, মঙ্গল বা বুধবার বাফেদা নিজেদের মধ্যে একটি সভায় বসবে। সেখানে 'ওয়েইটেড এভারেজ' বা গড় নিয়ে একটি প্রস্তাবনা তৈরি করে সেটি বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে উপস্থাপন করা হবে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক অনুমোদন দিলে সেটিই কর্যকর হবে।
এর আগে, গত ১১ সেপ্টেম্বর ব্যাংকারদের সভায় এক্সপোর্ট প্রসিডে ৯৯ টাকা ও রেমিট্যান্সের ডলার ১০৮ টাকায় কেনার সিদ্ধান্ত হয়। পরদিন থেকে ব্যাংকগুলো সেটি বাস্তবায়ন শুরু করে।
রোববার (২৫ সেপ্টেম্বর) ৫৫টি ব্যাংকের ডলার কেনার গড় এসেছে ১০২.০৯ টাকা। ব্যাংকভেদে ডলার কেনার দাম পড়েছে সর্বনিম্ন ৯৯ টাকা ও সর্বোচ্চ ১০৬.৭৫ টাকা। এই রেট থেকে সর্বোচ্চ ১ টাকা বেশি দামে আমদানি এলসি নিষ্পত্তি করে ব্যাংকগুলো।