কঠোর আমদানি নীতির মুখে চার মাসে ফল আমদানি কমেছে ৫০ শতাংশ
বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ হ্রাস ঠেকাতে সরকার নিত্যপ্রয়োজনীয় ছাড়া অন্যান্য পণ্য আমদানিতে কঠোর নিয়ম আরোপ করায় আগস্ট পর্যন্ত চার মাসে ফল আমদানি কমেছে ৫০ শতাংশ।
ফল আমদানিতে আগে নিয়ন্ত্রিত শুল্ক ৩ শতাংশ থাকলেও তা বাড়িয়ে ২০ শতাংশ করে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড। অন্যদিকে বাংলাদেশ ব্যাংকের আদেশে শতভাগ মার্জিনের কমে ফল আমদানির ঋণপত্র (এলসি) খুলছেনা ব্যাংকগুলো।
চলতি বছরের এপ্রিল পর্যন্ত চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে মাসে গড়ে ফল আমদানি হয়েছে প্রায় ৭০ হাজার টন। এ ধরনের নিষেধাজ্ঞার পরিপ্রেক্ষিতে এক মাসের ব্যবধানে আমদানি ৩৫ হাজার টনে নেমে আসে। পতনের প্রবণতা পরের দুই মাস অব্যাহত থাকে। পরবর্তীতে জুলাই মাসে তা ২১ হাজার ৫৭১ টনে নেমে দাঁড়ায় বলে জানায় চট্টগ্রাম কাস্টমস।
আগস্টে ফল আমদানি মাসে ৫৫ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে ৩৩ হাজার ৪৫৪ টন হলেও এপ্রিলের তুলনায় অর্ধেকেরও কম। ব্যবসায়ীরা বলছেন, মে মাসে সরকারের আরোপিত ২০ শতাংশ নিয়ন্ত্রিত শুল্কের কারণে ফলের সামগ্রিক আমদানি শুল্ক ৮৯ শতাংশ থেকে বেড়ে এখন ১১৩ শতাংশ হয়েছে।
এছাড়া ফল আমদানির জন্য এলসি খোলার আগে এখন তাদের পুরো টাকা জমা দিতে হবে। আগে সর্বোচ্চ ১০ থেকে ২০ শতাংশ মার্জিনে ফল আমদানির ঋণপত্র খোলা যেতো। এ কারণে ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তারা এত বেশি নগদ মার্জিন রাখতে না পারায় এখন ফল আমদানি বন্ধ করে দিয়েছেন।
বাংলাদেশ মূলত চীন, অস্ট্রেলিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা, ব্রাজিল, আরজেন্টিনা, নিউজিল্যান্ড, আফগানিস্তান এবং ফ্রান্স থেকে আপেল, অরেঞ্জ, ম্যান্ডারিন, আঙ্গুর এবং নাশপাতি আমদানি করে।
জে এম ট্রেডিং এর স্বত্বাধিকারী জিন্নাত আলী টিবিএসকে বলেন, আগে প্রতি মাসে আমি প্রায় দুই কোটি টাকার বেশি ফল আমদানি করতাম, যার জন্য আমার নগদ টাকার প্রয়োজন ছিল মাত্র ২০ লাখ টাকা। বাকি ১ কোটি ৮০ লাখ টাকার গ্যারান্টি নিত ব্যাংক। কিন্তু এখন শতভাগ মার্জিন বাধ্যতামূলক করার কারণে আমাদের মতো ছোট ও মাঝারি প্রতিষ্ঠানের পক্ষে ফল আমদানি করা অসম্ভব হয়ে পড়েছে।
এদিকে ফল আমদানি কমে যাওয়ায় এর প্রভাব পড়েছে খুচরা বাজারেও। চট্টগ্রাম নগরীর বালুছরা বাজারের খুচরা ফল ব্যবসায়ী বিল্লাল হোসেন বলেন, কয়েক মাসের ব্যবধানে বিদেশি ফলের কেজি প্রতি দাম বেড়েছে ১'শ থেকে দেড়শ টাকা। ক্রেতা পর্যায়ে ফল বিক্রি কমে গেছে অর্ধেকের বেশি।
তিনি আরও বলেন, ৫ মাসের ব্যবধানে কেজি প্রতি আপেল ১৮০ টাকা থেকে বেড়ে ২৫০ টাকা, মাল্টা ১৬০ টাকা থেকে বেড়ে ২২০ টাকা, কমলা ২০০ টাকা থেকে বেড়ে ২৫০ টাকা, আঙ্গুর ৩'শ টাকা থেকে বেড়ে ৫'শ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
চট্টগ্রামের ফল আমদানিকারক জারিফা এন্টারপ্রাইজের স্বত্ত্বাধিকারী জোনায়েদুল হক বলেন, আমরা প্রতি মাসে গড়ে ৩০ কোটি টাকার ফল আমদানি করি। আমদানি ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় এখন ফল আমদানি কমিয়ে দিতে হয়েছে। এই অবস্থায় আমদানিকারকরা আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়ছে।
চট্টগ্রামের বৃহৎ ফলের পাইকারি বাজার ফলমন্ডী ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক তৌহিদুল আলম বলেন, স্বাভাবিক সময়ে চট্টগ্রামে প্রতিদিন গড়ে ২৭ কোটি টাকার ফল বিক্রি হয়। কিন্তু এখন এই পরিমাণ অর্ধেকে নেমে এসেছে।