দেশের ই-কমার্স বাজার ২০২৬ সালের মধ্যে দ্বিগুণের বেশি বাড়বে: গবেষণা
সরাসরি গ্রাহকের কাছে পণ্য ও সেবা পৌঁছে দেওয়া (বিটুসি) ই-কমার্স খাত বাৎসরিক ১৭ দশমিক ৬১ শতাংশ হারে বৃদ্ধি পেয়ে ২০২২ সালে ৬৫ হাজার ৯৬৬ কোটি টাকার বাজারে পরিণত হবে উঠে এসেছে এক সাম্প্রতিক বাজার গবেষণায়।
২০২১ সালে ই-কমার্স বাজারের আকার ছিল প্রায় ৫৬ হাজার ৮৭০ কোটি টাকা। ডাবলিন-ভিত্তিক বাণিজ্য গবেষণা প্রতিষ্ঠান রিসার্চ অ্যান্ড মার্কেটস ডট কমের মতে, ২০২৬ সালের মধ্যে তা প্রায় দেড় লাখ কোটি টাকার বাজারে পরিণত হবে।
'বাংলাদেশ বিটুসি ইকমার্স মার্কেট রিপোর্ট ২০২২'-শীর্ষক প্রতিবেদনটিকে নিবন্ধিত ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ছাড়াও অনিবন্ধিত অনলাইন প্ল্যাটফর্ম এবং সোশ্যাল মিডিয়া-ভিত্তিক ট্রেডিং পেজগুলো অন্তর্ভুক্ত করার কথা জানিয়েছে গবেষণা প্রতিষ্ঠানটি।
ই-কমার্সের পণ্য ও পরিষেবাগুলোর মধ্যে রয়েছে খুচরা কেনাকাটা, ভ্রমণ ও আতিথেয়তা, অনলাইন ফুড সার্ভিস, বিনোদন ও গণমাধ্যম, স্বাস্থ্যসেবা, বিভিন্ন গ্যাজেট ও কারিগরি পরিষেবা ইত্যাদি।
স্থানীয় শীর্ষ ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান দারাজ বাংলাদেশের প্রধান বিপণন কর্মকর্তা মো. তাজদিন হাসান দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, সহজে কেনাকাটা ও অর্থ পরিশোধের ব্যবস্থা বাজার সম্প্রসারণে সাহায্য করবে কেননা সুষ্ঠু গ্রাহক পরিষেবা ই-কমার্সে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব তপন কান্তি ঘোষ টিবিএসকে বলেন, প্রতিবেদনটি বাংলাদেশের ই-কমার্সের সামগ্রিক অবস্থাকে সুষ্ঠুভাবে তুলে ধরেছে।
গত বছর ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ই-ক্যাব)-এর প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন অনুসারে, বাংলাদেশে ২,৫০০টিরও বেশি ই-কমার্স প্ল্যাটফর্মের মধ্যে এক শতাংশ বড় ব্যবসা, ৪ শতাংশ মাঝারি এবং ৯৫ শতাংশ বিভিন্ন ছোট ব্যবসায়ী উদ্যোগ। প্রায় ১,৬০০ ই-কমার্স উদ্যোক্তা ই-ক্যাবের সদস্য ছিলেন।
ই-কমার্স প্ল্যাটফর্ম ইভ্যালি ২০১৮ সালের শেষের দিকে বাংলাদেশে কার্যক্রম শুরু করে। প্ল্যাটফর্মটি দ্রুতই বিভিন্ন লোভনীয় অফার ও বিশাল ডিসকাউন্ট প্রদানের মাধ্যমে বাজারের এক বড় প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে ওঠে। পরবর্তীতে জালিয়াতি ও দুর্নীতির অভিযোগের পর বর্তমানে এর কার্যক্রম স্থগিত রয়েছে।
আলেশা মার্ট, ই-অরেঞ্জ, কিউকম, দালাল প্লাস, ধামাকা শপিং এবং সিরাজগঞ্জ শপসহ আরও বেশ কয়েকটি ই-কমার্স প্ল্যাটফর্মের বিরুদ্ধে একইরকম অভিযোগ ওঠে। অভিযুক্ত সাইটগুলোর বেশিরভাগই এখন বন্ধ হয়ে গেছে।
ভোক্তা অধিকার নিশ্চিত করতে ২০১৮ সালে সরকার ই-কমার্স ওয়েবসাইটগুলোর নির্দেশিকা হিসেবে ডিজিটাল কমার্স পলিসি প্রকাশ করে।
২০২১ সালের জুন মাসে বাংলাদেশ ব্যাংক গ্রাহক অধিকার নিশ্চিত করার পাশাপাশি প্রতারণামূলক কার্যক্রম বন্ধ করতে পেমেন্ট গেটওয়ে 'এসক্রো সার্ভিস' চালু করে।
তবে তপন কান্তি ঘোষ বলেন, এখনও অনেক অনিবন্ধিত সোশ্যাল মিডিয়াভিত্তিক ই-কমার্স ফার্ম, অনলাইন চিকিৎসা সেবাদানকারী ও পর্যটন ব্যবসা রয়েছে যেগুলো প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোর আওতায় আসেনি।
বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন রেগুলেটরি কমিশনের (বিটিআরসি)-র একজন কর্মকর্তা জানান, বাংলাদেশে প্রায় ৫০ হাজার ফেসবুক পেজ রয়েছে যেগুলো খুচরা ও পাইকারি পণ্য বিক্রি বা সরবরাহ করে।
তাঁর অনুমান ফেসবুকভিত্তিক এই উদ্যোগগুলোর বার্ষিক কর ও মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা হতে পারে।
'একবার আমাদের ই-কমার্স নীতি সম্পূর্ণরূপে বাস্তবায়িত হলে, সরকার সব ধরনের ব্যবসা থেকে রাজস্ব সংগ্রহ করতে সক্ষম হবে,' বলেন তপন কান্তি ঘোষ।
পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর বলেন, দেশের ই-কমার্স খাতের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ হলো ভোক্তা আস্থা নড়বড়ে হওয়া।
তিনি আরও বলেন, 'বিশ্বব্যাপী অনলাইন শপিং খুব দ্রুত জনপ্রিয়তা পাচ্ছে। এটা স্বাভাবিক যে সামনের বছরগুলোতে বাংলাদেশেও এই খাত সম্প্রসারিত হবে'।