দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমে ৩৭ বিলিয়ন ডলার
চলমান ডলার সংকটের মধ্যে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ আরও কমে ৩৭ বিলিয়ন ডলারে নেমেছে।
এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নে (আকু) ১.৭৩ বিলিয়ন ডলার পরিশোধের পর রিজার্ভ এ পর্যায়ে নেমেছে।
বৃহস্পতিবার দিনশেষে রিজার্ভ দাঁড়িয়েছে ৩৭ দশমিক শূন্য ৬ বিলিয়ন ডলারে। বুধবার যা ৩৮ দশমিক ৯৪ বিলিয়ন ডলার ছিল।
যদিও এক্সপোর্ট ডেভেলপমেন্ট ফান্ড ঋণসহ বিভিন্ন তহবিলে দেওয়া অর্থ বাদ দিয়ে রিজার্ভের হিসাব করলে দেশের ব্যবহারযোগ্য রিজার্ভ এখন ৩০ বিলিয়ন ডলার।
এদিকে বিদায়ী ২০২১-২২ অর্থবছর শেষে বাণিজ্য ঘাটতি হয়েছে ৩৩.২৫ বিলিয়ন ডলার, যা দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ। একই সময় বৈদেশিক লেনদেনের চলতি হিসাবের ভারসাম্যের (কারেন্ট অ্যাকাউন্ট) ঘাটতিও সাড়ে ১৮ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে গেছে।
বিদায়ী অর্থবছরে ৭.৬ বিলিয়ন ডলার ব্যাংকগুলোর কাছে বিক্রি করতে হওয়ায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক রিজার্ভ বড় ধরনের ঘাটতির মুখোমুখি হয়েছে । এছাড়া চলতি অর্থবছরে এখন পর্যন্ত ২.৭ বিলিয়নের বেশি বিক্রি করছে।
দেখা যায়, দেশের রপ্তানি আয়ের তুলনায় আমদানি ব্যয় বেশি ও রেমিট্যান্স কমতির কারণে বিদায়ী অর্থবছরে ডলারের ব্যাপক সংকট দেখা দিয়েছে।
পরিসংখ্যান ঘেঁটে দেখা যায়, আগের অর্থবছরের জুলাই থেকে জুন পর্যন্ত সময়ে রপ্তানি বেড়েছে ৩৩ দশমিক ৪৫ শতাংশ। অন্যদিকে আমদানি বেড়েছে ৩৫ দশমিক ৯৫ শতাংশ। আলোচিত সময়ে রপ্তানি থেকে দেশ আয় করেছে ৪৯.২৫ বিলিয়ন ডলার। তবে একই সময়ে আমদানির ব্যয় হয়েছে ৮২.৫০ বিলিয়ন ডলার। রেমিটেন্স কমেছে ১৫ শতাংশ বেশি। যার ফলে রিজার্ভ কমতির দিকে যা ডলার সংকট তৈরি করেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাব অনুযায়ী, দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৩৭ বিলিয়ন ডলারের ঘর অতিক্রম করে ২০২০ সালের ২৮ জুলাই। কোভিডের মধ্যে তা বেড়ে ২০২১ সালের আগস্টে ৪৮ দশমিক শূন্য ৬ বিলিয়ন ডলারে ওঠে। তবে আমদানি ব্যয় অনেক বেড়ে যাওয়ায় এবং প্রবাসী আয় কমে যাওয়ায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক রিজার্ভ থেকে প্রতিনিয়ত ডলার বিক্রি করছে।
গতকালও কয়েকটি ব্যাংকের কাছে ৮০ মিলিয়ন ডলার বিক্রি করা হয়। এ নিয়ে চলতি অর্থবছরের এ পর্যন্ত ২. ৭৬ বিলিয়ন ডলার বিক্রি করল কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
আকু হলো একটি আন্তঃদেশীয় লেনদেন নিষ্পত্তি ব্যবস্থা। এর মাধ্যমে বাংলাদেশ, ভুটান, ভারত, ইরান, মালদ্বীপ, মিয়ানমার, নেপাল, পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কার মধ্যকার লেনদেনের দায় পরিশোধ করা হয়। ইরানের রাজধানী তেহরানে আকুর সদরদপ্তর। এই ব্যবস্থায় সংশ্নিষ্ট দেশগুলোর কেন্দ্রীয় ব্যাংক প্রতি দুই মাস অন্তর আমদানির অর্থ পরিশোধ করে।
জানা গেছে, জুলাই-আগস্ট সময়ের ১. ৭৩ বিলিয়ন ডলারের আকুর দায় পরিশোধ করা হয় বুধবার। আর তা সমন্বয় করা হয় বৃহস্পতিবার। যে কারণে গতকালের রিজার্ভের ওপর এর প্রভাব পড়েছে।
এর আগে গত ১২ জুলাই আকুতে ১. ৯৬ বিলিয়ন ডলার পরিশোধের পর রিজার্ভ ৪০ বিলিয়ন ডলারের নিচে নামে।
এর আগে গত ১০ মে আকুতে ২. ২৪ বিলিয়ন ডলার পরিশোধ করা হয়। তখন রিজার্ভ কমে দাঁড়ায় ৪১ দশমিক ৯৫ বিলিয়ন ডলারে।