চলতি বছর বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানি প্রবৃদ্ধি ১৫ শতাংশে নামতে পারে

২০২১ সালে পোশাক রপ্তানিতে ৩০ শতাংশের বেশি শক্তিশালী প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছিল বাংলাদেশ। চলতি বছরে তা ১৫ শতাংশে নেমে আসতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের ভোক্তাদের জীবনযাপনের ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় রপ্তানি কমার এই আশঙ্কা বার্তাসংস্থা রয়টার্সকে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট খাতের ব্যবসায়ী নেতারা।
বাংলাদেশের মোট রপ্তানির প্রায় ৮০ শতাংশের বেশি করে গার্মেন্টস শিল্প। আমদানিকারক বৈশ্বিক ব্র্যান্ডগুলির মধ্যে রয়েছে ওয়ালমার্ট, গ্যাপ ইনকরপোরেশন, এইচঅ্যান্ডএম, ভিএফ কর্পোরেশন, জারা, আমেরিকান ঈগল আউটফিটার্সের মতো নামজাদা প্রতিষ্ঠান।
কিন্তু, মূল্যস্ফীতির চাপে উন্নত বিশ্বের ভোক্তারা মৌলিক পণ্য ও সেবার দিকে ঝুঁকে পড়ায় এসব প্রতিষ্ঠানের অনেকেই তাদের বিক্রিবাট্টা দুর্বল হয়ে পড়ার তথ্য জানিয়েছে।
অথচ করোনাভাইরাস মহামারির পর বিপুল হারে বাড়ছিল বাংলাদেশ থেকে পোশাক রপ্তানি। উন্নত বিশ্বের সরকারগুলোর দেয়া প্রণোদনা সহায়তাও এর পেছনে অবদান রাখে। ভোক্তাদের হাতে এতে করে বাড়তি অর্থ থাকায় পোশাক কেনার চাহিদাও বেড়েছিল।
কিন্তু, এখন বিশ্ব অর্থনীতির নাজুক অবস্থা। মূল্যস্ফীতিও চরমে। এই বাস্তবতায় বাংলাদেশের পোশাক প্রস্তুত ও রপ্তানিকারক সমিতি (বিজিএমইএ)-র সহ-সভাপতি মিরান আলী রয়টার্সকে বলেছেন, ' চলতি পঞ্জিকাবর্ষে আমরা ১৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধির মুখ দেখতে পারি– যা একেবারেই সাধারণ হবে। গত বছর রপ্তানি স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক বেড়েছিল'।
চীনের পর বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহৎ পোশাক রপ্তানিকারক হলো বাংলাদেশ। গতবছর ৩০.৪ শতাংশ প্রবৃদ্ধি নিয়ে ৩৫.৮ বিলিয়ন ডলারের পোশাক রপ্তানি হয়। বার্ষিক হিসাবে যা ছিল ২৫ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ।
১৯৯৪ সাল থেকে বিজিএমইএ'র নিজস্ব তথ্য বিশ্লেষণ করে রয়টার্স জানিয়েছে, যে বছর বাংলাদেশ রপ্তানিতে বড় উল্লম্ফন দেখেছে, পরের বছরেই সে তুলনায় প্রবৃদ্ধিও কমতে দেখা গেছে।
প্লামি ফ্যাশনসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং বাংলাদেশের নিট পোশাক প্রস্তুত ও রপ্তানিকারকদের সমিতি (বিকেএমইএ)-র সাবেক সভাপতি ফজলুল হক বলেছেন, চলতি বছর রপ্তানি ১৫ শতাংশ বাড়বে বলে তিনি ধারণা করছেন।
উৎপাদন খরচের চাপ:
ফজলুল হক জানান, বিদেশি ক্রেতা প্রতিষ্ঠানগুলি কার্যাদেশ গ্রহণের সময় এক মাস করে পিছিয়ে দিচ্ছে অথবা অর্ডারের পরিমাণ কমাচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের একটি বড় ক্রেতা প্রতিষ্ঠান প্রথমে চলতি মাসে একটি ছোট চালান নিতে চেয়েছিল; কিন্তু পরে সেটি ডিসেম্বর পর্যন্ত পিছিয়ে দেয়।
প্লামি ফ্যাশনস এসময় প্রতিষ্ঠানটিকে জরিমানাসহ অন্যান্য চার্জের ব্যাপারে সতর্ক করলে তারা মাত্র এক মাস পর ডেলিভারি নিতে সম্মতি দেয়।
'এত ছোট অর্ডারও যদি তারা কয়েক মাস পেছায়–তার মানে সেখানকার পরিস্থিতি ভালো নয়। এজন্য তারা ছোট চালান বিক্রি করতে পারবে কিনা- তা নিয়েই উদ্বেগে ছিল'।
আরেকটি বড় উদ্বেগ হয়ে উঠেছে উৎপাদনের বাড়তি খরচ। গত শনিবার থেকে বাংলাদেশে জ্বালানি তেলের ৫০ শতাংশের বেশি বর্ধিত মূল্য কার্যকর হয়েছে। অথচ বাংলাদেশের পোশাক শিল্পের কোম্পানিগুলোর মোট ব্যয়ের প্রায় ১০ শতাংশ জ্বালানি কিনতে খরচ হয়। বিশেষত, লোডশেডিংয়ের সময় ডিজেল জেনারেটর চালাতে হয় বলে উল্লেখ করেন ফজলুক হক।
বিজিএমইএ'র আরেকজন সহ-সভাপতি শহিদুল্লাহ আজিম বলেন, ' তেলের দাম অস্বাভাবিকভাবে বাড়ানোর পর উৎপাদন খরচও তীব্রভাবে বাড়বে। আমরা এরমধ্যেই যেসব কার্যাদেশ পেয়েছি, সেগুলিতে এখন লোকসান দিতে হবে'।
তিনি মনে করেন, চলতি বছর পোশাক রপ্তানি ৩৮ থেকে ৪০ বিলিয়ন ডলার হতে পারে। 'কিন্তু পরের বছর যদি বিশ্ব অর্থনীতি মন্দার কবলে পড়ে তাহলে এটি অনেক কমে যাবে'- যোগ করেন আজিম।
পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কার পর গত মাসে দক্ষিণ এশিয়ার তৃতীয় দেশ হিসেবে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) থেকে ঋণ সহায়তা চেয়েছে বাংলাদেশ। বাণিজ্য ঘাটতি বেড়ে যাওয়া চাপের মধ্যে রয়েছে দেশের বৈদেশিক মুদ্রা রিজার্ভ। রিজার্ভকে স্থিতিশীল রাখতে এ সহায়তা চেয়েছে ঢাকা।
- সূত্র: রয়টার্স