বাড়ির আঙিনার সবজি বাগান আয় বাড়াচ্ছে কৃষকের

মাগুড়া সদর উপজেলার কাশিনাথপুর গ্রামের কৃষক আতিয়ার রহমান সারা বছর আড়াই বিঘা জমিতে ধান, পাট সহ কিছু ফসলের চাষ করেন। কৃষি জমিতে ফসলের আবাদ করলেও বাড়ির সামনের ফাঁকা জমিতে কখনো কিছু করার চিন্তা করেননি।
তবে গত বছর সরকারি সহযোগীতা পেয়ে আঙিনার ফাঁকা দেড় শতক জমিতে একটি সবজি বাগান করেছেন যেখানে পুঁই, ডাটা, কচু শাক, ঢেড়স, ধুন্দল, কাঁচা মরিচসহ বিভিন্ন শাক-সবজির চাষ করছেন।
আতিয়ার রহমানের ৪ জনের পরিবার, ছোট ভাইয়ের তিন সদস্যের পরিবারের চাহিদা মেটায় এই বাগানের সবজি, প্রতিবেশিরাও মাঝে মধ্যে শাক-সবজি নেন এই বাগান থেকে। গত বছরের অক্টোবরে করা এই বাগানের কারণে তার পরিবারের শাক-সবজি কেনার পেছনে যে খরচ হতো তা অর্ধেক নেমে এসেছে। একইসঙ্গে এ কয়েক মাসে শাক-সবজি বিক্রি করে বাড়তি চার হাজার টাকা আয়ও করেছেন।
বসত বাড়ির আঙিনায় সবজি বাগান করে লাভবান হচ্ছেন সারাদেশের এক লাখেরও বেশি পরিবার। যাদেরকে পারিবারিক সবজি পুষ্টি বাগান প্রকল্পের আওতায় সারাবছর চাষের উপযোগী বিভিন্ন শাক-সবজির বীজ, চারা, ফলের গাছ, পোকা দমনের প্রযুক্তি, বাগানে পানি ছিটানোর পাত্র, সার এব বাগানে চারপার ঘিরে রাখার জন্য নেট প্রদান করা হচ্ছে বিনামূল্যে।
এখন পর্যন্ত সারাদেশে ১০১,৪৯৮ টি পরিবার এই সুবিধা পেয়েছেন। প্রতিটি ইউনিয়নে ১০০ টি করে পরিবারে এই বাগান তৈরির লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে প্রায় দেড় বছরে ২২ টি করে বাগান তৈরি করা হয়েছে। যে বাগানগুলোতে তিনটি মৌসুমে গড়ে প্রায় ৩৬৬ কেজি করে শাক-সবজি উৎপাদন হচ্ছে।

খাওয়ার চাহিদা পূরণ করেও অনেকে তিন মৌসুমে চাষ করে প্রায় চার থেকে ৭ হাজার টাকা পর্যন্ত আয় করেছে বলে জানা গেছে। প্রতিটি বাগানে সারা বছর চাষের জন্য মোট ১৫টি সবজির বীজ দেওয়া হচ্ছে বিনামূল্যে।
প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা বলছেন, তিন বছর মেয়াদি এই প্রকল্পের মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৪৩৭ কোটি ৯২ লাখ টাকা। এর মাধ্যমে ৪ লাখ ৮৮ হাজার ৮০০টি বাগান তৈরির লক্ষ্য রয়েছে। যে লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করা গেলে এই বাগানগুলো থেকে বছরে ২ লাখ ১৮ হাজার ২৬৪ টন শাক-সবজির যোগান পাওয়া যাবে।
প্রথম বছরে প্রতিটি বাগানের পেছনে ৫ হাজার টাকা করে খরচ করা হচ্ছে। তাদের উৎপাদন ধরে রাখতে দ্বিতীয় বছরে দুই হাজার টাকার সার-বীজের বিতরণের জন্য বরাদ্দ রাখ হচ্ছে।

এলাকা অনুযায়ী শাক সবজির বিতরণে কিছুটা ভিন্নতা রয়েছে। ডাটা শাক, পুই শাক, কলমি শাক, ঢেড়স, বেগুণ, পাট শাক, পালং শাক, সাতকরা, পেপে সহ আমরা, লেবু, আমলকি, মাল্টা, আম, পেয়ারা, সহ বিভিন্ন ফলের গাছও বিতরণ করা হচ্ছে। একই সঙ্গে পরিমান মত জৈব সারও দেওয়া হচ্ছে চাষাবাদের জন্য। কোন কোন কৃষককে আবার শুধু জৈবসার তৈরির জন্যও প্রণোদনা দেওয়া হচ্ছে।
প্রকল্প পরিচালক ড. মো. আকরাম হোসেন চৌধুরী টিবিএসকে বলেন, 'যথাযথ ব্যবস্থাপনা পদ্ধতির মাধ্যমে কম জায়গায় কিভাবে বেশি ফলন পাওয়া সম্ভব তার একেকটি মডেল হচ্ছে এই পুষ্টিবাগান। পতিত জমি ব্যবহার করে যারা এই বাগান করছেন তারা যাবে একবার চাষ করেই এটা বন্ধ করে না দেয় সেই পরিকল্পনা নিয়েই আমরা কাজ করছি। কারণ পারিবারিক বাগানের মাধ্যমে ব্যপকভাবে শাক-সবজি উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্য নিয়েছি আমরা।'

প্রকল্পের আওতায় যারা বাগান করছেন তাদের কমপক্ষে দেড় শতক জমি থাকতে হবে। ২০২১ সালের জানুয়ারীতে প্রকল্পটি নেওয়া হলেও বাস্তবায়ন শুরু হয় এপ্রিল থেকে।
কুমিল্লার লালমাই উপজেলার কৃষক সাহেব আলী তার বাগানের জন্য দেড় শতক জমিতে শাক-সবজি চাষের জন্য কৃষি কর্মকর্তাদের নির্দেশনা অনুযায়ী ৫টি বেড তৈরি করেন। একেকটি বেডে একেকটি সবজি লাগান। বেডের পাশের চারদিক দিয়ে ফলের গাছ।

সাহেব আলী টিবিএসকে বলেন, 'বাগান করার পর বাগান থেকে শাক কিনতে হয়নি। কোন কোনদিন শাক বিক্রি করে প্রয়োজনীয় সবজি কিনে আনি। এর বাইরে পেপে ও লেবুর গাছ পেয়েছি।'
তিনি বলেন, 'কম জায়গায় এত সুন্দর করে সবজি বাগান করা যায় সেটা আগে জানতাম না। এখন তো অনেক প্রতিবেশিরা এটা দেখে তাদের খালি জায়গায় বাগান করা শুরু করেছে, অনেকে পরামর্শ নিচ্ছেন।'
বগুড়ার মোছা. আতিয়া বেগম তার বাড়ির আঙিনায় বাগান করেছেন। তিনি বিভিন্ন ধরনের শাকের পাশাপাশি লাউ, বেগুণ, পেপে লাগিয়েছেন। সিজনের সময় খাওয়ার পাশাপাশি নিয়মিত লাউ বিক্রির কথাও জানান তিনি।

প্রকল্প পরিচালক ড. মো. আকরাম হোসেন চৌধুরী বলেন, 'সব ধরনের সহযোগীতা দিয়ে যে বাগানগুলো করা হচ্ছে সেটা ধরে রাখাটা বড় চ্যালেঞ্জ। এখন আমরা এটা মনিটরিং করছি, সবকিছু বিনামূল্যে দিচ্ছি। প্রকল্পে শেষে যাতে এসব বাগানে চাষ বন্ধ না হয় সেজন্য আমাদের সারাদেশের কৃষি অফিসাররা নিয়মিত মনিটরিং করছে এবং সব ধরনের পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছে।'
