গমের দাম কমার সুফল লাভের অপেক্ষায় বাংলাদেশ

কৃষ্ণসাগর দিয়ে ইউক্রেনের খাদ্যশস্য রপ্তানিতে রাশিয়া-ইউক্রেন চুক্তির পর শুক্রবার গমের দাম কমে যাওয়াকে ইতিবাচকভাবে দেখছে বাংলাদেশ।
খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার শনিবার যুদ্ধরত দুই রাষ্ট্রের মধ্যকার চুক্তিকে আগামী দিনের জন্য ভালো কিছুর ইঙ্গিত হিসেবে স্বাগত জানিয়েছেন।
বার্ষিক ৮.৫ মিলিয়ন টন চাহিদা নিয়ে গম বাংলাদেশের দ্বিতীয় প্রধান খাদ্যশস্য। তবে বিশেষজ্ঞদের মতে বাংলাদেশ এখনই বিষয়টি উদযাপন করার মতো অবস্থায় আসেনি। তারা জানান, ডলারের ঊর্ধ্বমুখী দামের কারণে বাংলাদেশে পণ্যের দামে খুব বেশি প্রভাব পড়বে না। তবে বিশ্ববাজারে খাদ্যপণ্যের দাম কমে আসলে ধীরে ধীরে দেশেও কমে আসার সম্ভাবনা রয়েছে।
জাতিসংঘ ও তুরস্কের মধ্যস্থতায় শুক্রবার কিয়েভ ও মস্কোর মধ্যে কৃষ্ণসাগর ব্যবহারে ইউক্রেনীয় খাদ্যশস্য পরিবহনের চুক্তি স্বাক্ষর হওয়ার কথা জানিয়েছে এএফপি।
চুক্তি স্বাক্ষরের খবর ছড়িয়ে পড়তেই শিকাগোতে বুশেল প্রতি গমের দাম ৫.৯ শতাংশ কমে ৭.৫৯ ডলারে নেমে আসে। অন্যদিকে প্যান-ইউরোপীয় বাজার ইউরোনেক্সটে গমের দাম প্রতি টন ৬.৪ শতাংশ কমে ৩২৫.৭৫ ডলারে নেমে এসেছে।
বাংলাদেশে খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার বলেন, ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের ভুক্তভোগী সারা বিশ্ব। তবে এখন তুরস্কের মধ্যস্থতায় একটি সমঝোতার ক্ষেত্র তৈরি হয়েছে। ইউক্রেন ও রাশিয়া খাদ্যপণয় রপ্তানিতে সম্মত হয়েছে, যা আমাদের জন্য সস্তির সংবাদ। গম আমদানি নিয়ে আমাদের আর বেশিদিন ভুগতে হবে না।
শনিবার বিকালে চট্টগ্রামের পতেঙ্গায় এক লাখ ১৪ হাজার ৩শ মেট্রিক টন ধারণ ক্ষমতা সম্পন্ন গমের আধুনিক স্টিল সাইলো নির্মাণ কাজের ভিত্তি স্থাপন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি মন্ত্রী এই সব কথা বলেন।
মন্ত্রী জানান, দেশে ২১ লাখ মেট্রিক টন খাদ্যশস্য সংরক্ষণের সক্ষমতা রয়েছে। ২০২৫ সালের মধ্যে ৩৫ লাখ মেট্টিক টন খাদ্য শস্য মজুদের লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে কাজ করছে সরকার।
তবে নতুন সাইলোগুলো পূর্ণ করার জন্য পর্যাপ্ত মজুদ থাকবে কি না তা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে।
দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির সঙ্গে লড়াই করছে বাংলাদেশ। দেশে গমের মজুদ গত মাসে ১৬৬,০০ টনে নেমে আসে, যা গত তিন বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন।
মিশর ও ইন্দোনেশিয়ার পরে বাংলাদেশ ইউক্রেন থেকে গমের তৃতীয় বৃহত্তম আমদানিকারক। ২০২১ সালে বাংলাদেশ ২.৩ মিলিয়ন টন আমদানি করে।
ইউএসডিএ-র একটি প্রতিবেদন অনুসারে, ২০২০-২১ অর্থবছরে বাংলাদেশের মোট গম আমদানির ৪২ শতাংশ রাশিয়া ও ইউক্রেন থেকে আসে।
দেশের শীর্ষ ভোগ্যপণ্য আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান বিএসএম গ্রুপের চেয়ারম্যান আবুল বাশার চৌধুরী বলেন, 'এই চুক্তির প্রভাব ভোগ্যপণ্যের বাজারে পড়তে সময় লাগবে'।
তিনি আরও বলেন, 'রাশিয়া-ইউক্রেনের সাথে ব্যবসার জন্য বাংলাদেশ থেকে বেসরকারি পর্যায়ে সাধারণত সরাসরি কোনো ঋণপত্র খোলা হয় না। বাংলাদেশ থেকে যেসব ঋণপত্র খোলা হয় সেগুলো ভায়া হয়ে অর্থাৎ সিঙ্গাপুর, নেদারল্যান্ড ও যুক্তরাজ্য হয়ে খোলা হয়। ফলে চট্টগ্রাম বন্দরের থেকে রাশিয়া-ইউক্রেন পর্যন্ত মাঝখানে দুই-তিনটি বন্দর থাকে'।
তবে সরকারি পর্যায়ে চাইলে সরাসরি আমদানি সম্ভব বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
তাছাড়া যুদ্ধাবস্থায় দুই দেশের বন্দরগুলোর অবকাঠামো কতটা রপ্তানি উপযোগী সেই বিষয়টিও বাজারে প্রভাব ফেলবে বলে তিনি মনে করেন। তবে এই খবরে আন্তর্জাতিক বাজারে ভোগ্যপণ্যের দামে প্রভাব পড়বে এবং পণ্যের দাম কমে আসবে।
তবে আবুল বাশার চৌধুরী বলেন, 'আমি মনে করি এটি বাংলাদেশের জন্য খুব বেশি সুফল বয়ে আনবে না। কারণ ডলারের দাম বৃদ্ধির কারণে আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যের দাম কমলেও আমাদের বাড়তি টাকা দিয়ে আমদানি মূল্য পরিশোধ করতে হচ্ছে'।
ভোগ্যপণ্য আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান মেসার্স এ জামান এন্ড ব্রাদার্স'র স্বত্বাধিকারী নুরুল আলম বলেন, পণ্য রপ্তানিতে কৃষ্ঞসাগর ব্যবহারে যুদ্ধরত রাশিয়া-ইউক্রেনের চুক্তি ভোগ্যপণ্যের বৈশ্বিক বাজারে ইতিবাচক প্রভাব রাখবে। বিশ্বের অন্যতম খাদ্যশস্য যোগানকারী দুই দেশ থেকে খাদ্যের সরবরাহ বৃদ্ধি পেলে ভোগ্যপণ্যের দাম কমে আসবে। বিশেষ করে প্রধান দুই খাদ্যপণ্য গম এবং ভোজ্যতেলের দাম আরো সহনীয় পর্যায়ে চলে আসবে। তবে এই প্রভাব পড়তে আরো কিছুটা সময় লাগবে।