ভৈরব বাজারের ফুটপাতের কাপড়ের হাটে হাটবারে বিক্রি ৫ কোটি টাকা
কিশোরগঞ্জের ভৈরব উপজেলার ভৈরব বাজারের ভেতরে ফুটপাতে বসা কাপড়ের হাট পার্শ্ববর্তী জেলাগুলোর ক্রেতা-বিক্রেতাদের জন্য বাণিজ্যিক হাব হয়ে উঠেছে। এক দিনের হাটে পাইকারি ও খুচরা মিলিয়ে প্রায় ৫ কোটি টাকার কাপড় বেচাকেনা হয়।
প্রায় ১০ বছর ধরে প্রতি বুধবার বসছে এই কাপড়ের হাট। ক্রেতা-বিক্রেতাদের হাঁকডাকে মুখর থাকে পুরো ভৈরব বাজার। প্রতি হাটবারে ক্রেতাদের উপচে পড়া ভিড়ের কারণে বাজারে তিল ধারণেরও ঠাঁই থাকে না। তুলনামূলক কম দামে কাপড় কিনতে পারায় এই হাটটি জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।
মেঘনা নদীর পাড় ঘেঁষেই ভৈরব বাজারের এ হাটের সব দোকানে শাড়ি, লুঙ্গি, গামছা, শার্ট, গেঞ্জি, থ্রিপিছ, শার্টপিছ ও ফতুয়াসহ সব ধরনের কাপড়ই পাওয়া যায়। হাটে সবচেয়ে বেশি বেচাকেনা হয় ছোট বাচ্চা ও মেয়েদের জামা-কাপড়।
মঙ্গলবার সন্ধ্যা থেকেই নরসিংদী, নারায়ণগঞ্জ ও ঢাকা থেকে পাইকারি বিক্রেতারা হাটে কাপড় নিয়ে আসতে থাকেন। এরপর রাত ১০টা থেকে শুরু হয় বেচাকেনা। আর খুচরা বেচাকেনা শুরু হয় বুধবার সকাল থেকে। তবে পাইকারদের বেচাকেনা বুধবার দুপুর ১২টার মধ্যেই শেষ হয়ে যায়।
হাট সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, হাটের ক্রেতারা কিশোরগঞ্জ, নরসিংদী ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার। প্রতি হাটবারে একেকজন পাইকারি বিক্রেতা ৫০-৬০ হাজার টাকার কাপড় বিক্রি করতে পারেন। আবার কোনো কোনো ব্যবসায়ী ১ লাখ টাকারও বেশি কাপড় বিক্রি করেন। খুচরা ব্যবসায়ীরা বিক্রি করেন ১৫-২০ হাজার টাকার কাপড়।
পাইকারি ক্রেতারা হাট থেকে কাপড় কিনে নিয়ে নিজেদের এলাকায় দোকানে বিক্রি করেন। বিভিন্ন উৎসবের সময় বেচাকেনা দ্বিগুণ হয়।
কিশোরগঞ্জের কুলিয়ারচরের কাপড় ব্যবসায়ী সুজন মিয়া বলেন, "কুলিয়ারচরের একটি গ্রামের বাজারে তার দোকান। তার দোকানে শাড়ি, লুঙ্গি এবং গামছার চাহিদা বেশি। এগুলো ঢাকা অথবা নারায়ণগঞ্জ থেকে আনতে গেলে খরচ বেশি লাগে। সেজন্য ভৈরব বাজারের কাপড়ের হাট থেকেই পাইকারি দরে তিনি শাড়ি, লুঙ্গি ও গামছা কেনেন। এছাড়া কাপড় নিয়ে সড়ক ও নৌ- দুই পথেই সহজে যাতায়াত করা যায়।"
ঢাকার সিয়াম ফ্যাশন অ্যান্ড বেবি কালেকশনের কর্মচারী দেলোয়ার হোসেন জানান, করোনা মহামারির কারণে তার কর্মরত প্রতিষ্ঠানে উৎপাদিত অনেক পোশাক অবিক্রিত রয়ে গেছে। সেগুলো এখন বিভিন্ন এলাকার হাট-বাজারে নিয়ে বিক্রি করছেন তারা। লোকমুখে ভৈরব বাজারের কাপড়ের হাটের কথা শুনে তিনি হাটে এসেছেন কাপড় বিক্রি করতে। সর্বশেষ হাটে তিনি ৩০ হাজার টাকার কাপড় বিক্রি করেছেন বলে জানান।
নরসিংদীর রায়পুরা উপজেলার কাপড় ব্যবসায়ী শুক্কুর মিয়া বলেন, তিনি দীর্ঘদিন ধরে ভৈরব বাজারের কাপড়ের হাটে ব্যবসা করছেন। হাটে আগত পাইকারী বিক্রেতাদের কাছ থেকে কাপড় কিনে আবার এই হাটেই বিক্রি করেন। প্রতি হাটবারে ১০-১২ হাজার টাকার কাপড় বিক্রি করেন বলে জানান তিনি।
আরেক ব্যবসায়ী মো. ফাহিম বলেন, "আমি নারায়ণগঞ্জ থেকে কাপড় এনে হাটে পাইকারি ও খুচরা দরে বিক্রি করি। এখানে বেচাকেনা ভালোই হয়। প্রতি হাটবারে গড়ে ৫০ হাজার টাকার কাপড় বিক্রি হয় আমার দোকান থেকে। এর মধ্যে ছোট বাচ্চা এবং মেয়েদের কাপড় বেশি বেচাকেনা হয়।"
ভৈরব পৌরসভা ১ বছরের জন্য বাজারটি ইজারা দেয়। সর্বশেষ ১ কোটি ৬০ লাখ টাকায় (ভ্যাট-ট্যাক্সসহ) ভৈরব বাজার ইজারা দেওয়া হয়। বাজারের ভেতরে কাপড়ের হাটে পাইকারি বিক্রেতাদের দোকানের আকার অনুযায়ী ৩০০-৫০০ টাকা এবং খুচরা বিক্রেতাদের ১০০-২০০ টাকা দিতে হয় ইজারাদারকে।
ভৈরব বাজারের ইজারাদারের প্রতিনিধি মিলাদ হোসেন অপু বলেন, "করোনা মহামারির কারণে কয়েক মাস হাট বন্ধ রাখতে হয়েছিল। এখন ধীরে ধীরে আগের অবস্থায় ফিরছে। দোকানের আকার অনুযায়ী পাইকারী বিক্রেতারা ৩০০-৫০০ টাকা এবং খুচরা বিক্রেতাদের কাছ থেকে ১০০-২০০ টাকা নেওয়া হয়। এছাড়া হাটে আগত ব্যবসায়ীদের নিরাপত্তাসহ সকল বিষয়ে প্রশাসনের সাথে সমন্বয় করে আমরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিয়ে থাকি"।
ভৈরব চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি হুমায়ুন কবির জানান, তিন-চার বছর ধরে হাটের পরিধি বেড়েছে। দিন দিন হাটে ব্যবসায়ীর সংখ্যা বাড়ছে। ব্যবসায়ীদের লাভ হচ্ছে বলেই তারা হাটে আসছে। বিশেষ করে শীত মৌসুম এবং দুই ঈদে হাটের বেচাকেনা অনেক বেশি হয়।
ভৈরব পৌরসভার মেয়র ইফতেখার হোসেন বেনু বলেন, "কাপড়ের হাটটি জনপ্রিয় হলেও ফুটপাতে দোকান বসানোর কারণে বাজারে অন্যান্য পণ্যের ব্যবসায় সমস্যা তৈরি হয়। কারণ হাটবারে বাজারে ক্রেতাদের উপচে পড়া ভিড়ের কারণে পা ফেলারও জায়গা থাকে না। পৌর এলাকায় বিকল্প কোনো স্থান না থাকায় বাজারের ভেতরেই এই কাপড়ের হাট বসছে"।