‘টয়লেট পেপার’ এখন দামি উপহার
করোনা ভাইরাস সংক্রমণের আতঙ্ক এখন এশিয়ার অর্থনৈতিক ব্যবসার কেন্দ্রগুলোতে নিত্যনতুন সংবাদের শিরোনাম তৈরি করছে। আর্থিকখাতের ব্যবসায় এশিয়ায় শীর্ষে হংকং ও সিঙ্গাপুরের ক্ষেত্রে এটি আরও স্পষ্ট।
নগর রাষ্ট্র সিঙ্গাপুরে এখন করোনা ভীতির প্রকোপে মন্টব্লাঙ্কের ফাউন্টেন কলম বা চামড়ার ওয়ালেটের মতো দামি উপহারের কদর নেই। বরং ব্যাগভর্তি ‘মামুলি’ টয়লেট পেপার বা পেয়েই বেজায় খুশি হচ্ছেন সিঙ্গাপুরবাসী।
করোনা বা কোভিড-১৯ প্রতিরোধে চিকিৎসা বিজ্ঞান এখন মানুষকে আরও বেশি পরিচ্ছন্নতা মেনে চলার আহবান জানাচ্ছে। দেয়া হয়েছে খাদ্য গ্রহণ ও বাথরুমের আগে এবং পরে হাত-মুখ পরিষ্কার রাখার পরামর্শ।
এই প্রেক্ষিতে এশিয়ায় আর্থিক ব্যবসার বৃহৎ দুই কেন্দ্র হংকং এবং সিঙ্গাপুরে সুপারমার্কেটগুলোয় দেখা যাচ্ছে টয়লেট পেপার, পেপার টাওয়েল, হ্যান্ড স্যানিটাইজার লিকুইড এবং মাস্কের সংকট।
গ্রাহক এবং কর্মচারীদের উপহার দেয়ার চল রয়েছে এশিয়ার বেশ কিছু দেশে। আর্থিকখাতের কোম্পানিগুলো নতুন গ্রাহক তৈরি করতেও এমন উপহার দিয়ে থাকে। তাই সুযোগ বুঝে গ্রাহকদের সঙ্গে সম্পর্ক আরও মজবুত করার লক্ষ্যে তাদের টয়লেট পেপারসহ অন্যান্য পরিচ্ছন্ন থাকার সামগ্রী উপহার দেওয়ার চল শুরু হয়েছে সিঙ্গাপুরে।
সর্বপ্রথম এই উদ্যোগ নেয় অনলাইনে ফরেক্স ট্রেডিং সেবা প্রদানকারী ব্যবসা আইজি গ্রুপ। গ্রাহক ও কর্মচারীদের বিপুল পরিমাণ সার্জিক্যাল মাস্ক, ডিজিটাল থার্মোমিটার এবং ডেটল অ্যান্টিসেপটিক হ্যান্ডওয়াশ ভর্তি বিশেষ স্বাস্থ্য সুরক্ষা প্যাকেজ উপহার দেয় কোম্পানিটি। সঙ্গে বিপুল টয়লেট পেপারও ছিল।
ভাইরাস প্রতিরোধে সিঙ্গাপুর সরকার ‘অরেঞ্জ অ্যালার্ট’ জারি করার সঙ্গে সঙ্গেই এই উদ্যোগ নেয় আইজি। কোম্পানির স্থানীয় ব্যবস্থাপকদের উদ্ভাবিত এই কৌশল এত জনপ্রিয়তা লাভ করে যে এখন আইজি গ্রাহকদের কাছ থেকে বিপুল সারা পাচ্ছে। ধন্যবাদ জানিয়ে বা আরও সুরক্ষা প্যাকেজ পাওয়ার অনুরোধ জানিয়ে অজস্র ইমেইল আসছে তাদের ঠিকানায়।
আইজির আইডিয়া নিয়ে অনেক বাণিজ্যিক ব্যাংকও একই পদক্ষেপ নিয়েছে। করোনা ভীতিতে এসব বাণিজ্যিক ব্যাংকের কার্যালয় বন্ধ থাকলেও তাদের কর্মীরা এখন ঘরে বসে অনলাইনে দাপ্তরিক কাজ করছেন। প্রাথমিকভাবে এসব কর্মীদের সুরক্ষার জন্যেই বিশেষ সুরক্ষা প্যাকেজ দেওয়া শুরু করা হলেও তা এখন গ্রাহকেরাও পাচ্ছেন।
সিঙ্গাপুরে এমন উদ্যোগকে সঠিক সময়ে নেওয়া যথার্থ বাজার কৌশল বলে প্রশংসা করেছেন জোয়েল ওয়ার্নার। তিনি হংকংয়ে একটি বিনিয়োগ ব্যবস্থাপনা কোম্পানি পরিচালনা করেন। স্থানীয় সুপার মার্কেটে সরবরাহ সংকটের কারণে তিনি গত ১০ ফেব্রুয়ারি অ্যামাজনের অনলাইন বিপণী থেকে ২১৬ রোল টয়লেট পেপার কিনেছেন। এর অর্ধেক তিনি নিজের জন্য রাখছেন, বাকি অর্ধেক ঘনিষ্ঠ গ্রাহক এবং বন্ধুদের উপহার দেবেন।
এই ব্যাপারে তিনি বলেন, এক বোতল দামি ওয়াইনের চাইতে এখন টয়লেট পেপার উপহার পেয়েই মানুষ বেশি আনন্দিত হচ্ছেন।