২০২১-২২ অর্থবছরের মুদ্রানীতির মূল দিকসমূহ
মহামারির অভিঘাত সত্ত্বেও দেশের অর্থনীতি ২০২০-২১ অর্থবছরে ৬.১ শতাংশ প্রকৃত প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে। এমনকি গত বছর ৫.২ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হওয়ার যে আভাস দেওয়া হয় এটি তার চাইতেও উল্লেখযোগ্য পরিমাণ বেশি।
প্রবৃদ্ধিতে সবচেয়ে বেশি অবদান রেখেছে কৃষি ও শিল্প খাত। গেল অর্থবছরে এদুটি খাত সরকার ও বাংলাদেশ ব্যাংকের নজিরবিহীন প্রবৃদ্ধি সহায়ক নীতিমালার সুবিধা পায়।
অন্যদিকে, সিপিআই বা ভোক্তামূল্য ভিত্তিক গড় মূল্যস্ফীতি ২০২০ অর্থবছরে ৫.৬৫ শতাংশ থেকে কমে ৫.৫৬ শতাংশে নেমে এসেছে। তবে ২০২১ অর্থবছরের জন্য যে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল সেই ৫.৪০ শতাংশে নামেনি।
এ বাস্তবতায় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ২০২১-২২ অর্থবছরের মুদ্রানীতি সংক্রান্ত বিবৃতি কী বলছে?
১. ২০২২ অর্থবছরেও বাংলাদেশ ব্যাংকের মুদ্রানীতি আগের সম্প্রসারণমূলক ও সংকুলানমুখী মুদ্রানীতি বাস্তবায়নের পদক্ষেপ অব্যাহত রেখে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে কাঙ্খিত পুনরুদ্ধারে সমর্থন দানের পাশাপাশি মূল্যস্ফীতিকে নির্ধারিত সীমার মধ্যে রাখতে এবং আর্থিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখার লক্ষ্যে প্রণীত হয়েছে।
২. করোনার ডেল্টা ভেরিয়েন্টের প্রাদুর্ভাব ছড়িয়ে পড়ার প্রেক্ষাপটে লকডাউন চালু হওয়ায় অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে পুনরায় মন্থর গতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে, আগামী মাসগুলোতে এ অবস্থায় জীবন ও জীবিকা স্বাভাবিকতা ফিরিয়ে আনাই হবে বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতিনির্ধারকদের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। এজন্য নির্ধারিত উৎপাদনশীলতা অর্জনে দরকারি তহবিল যোগানের উদ্যোগ অব্যাহত রাখা হবে। এছাড়া, বিশ্ববাজারে তেলসহ সকল ধরনের জ্বালানি ও ভোগ্যপণের দাম অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধির পাশাপাশি দেশে প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের কারণে কৃষি শস্যের উৎপাদন ক্ষতির শিকার হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে, যা আগামী দিনগুলোয় মূল্যস্ফীতির চাপ বাড়াবে।
৩. চলমান সম্প্রসারণমূলক আর্থিক ও মুদ্রানীতির ফলে অর্থনীতিতে বিপুল পরিমাণ উদ্বৃত্ত তারল্য থাকার কারণেও আগামী দিনগুলোয় মূল্যস্ফীতির চাপ বাড়তে চলেছে।
৪. ২০২২ সালের জুন নাগাদ সরকারি ও বেসরকারি খাতের বার্ষিক ঋণ প্রবৃদ্ধি যথাক্রমে ৩২.৬ ও ১৪.৮ শতাংশ প্রক্ষেপণ করা হয়েছে।
৫. সরকার ঘোষিত প্রণোদনা প্যাকেজগুলো বাস্তবায়নে চতুর্মুখী পদক্ষেপ নেওয়া কথা জানানো হয়েছে। যার আওতায় নতুন উদ্যোক্তাদের উৎসাহিত করতে এবং নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরিতে নীতিগত সকল উপায় গ্রহণ করে সমর্থন দেবে বাংলাদেশ ব্যাংক।
এগুলোর মধ্যে আছে; (ক) অর্থনীতির অগ্রাধিকার ভিত্তিক খাতসমূহ যেমন- কৃষি, সিএমএসএমই, বৃহৎ শিল্প, রপ্তানিমুখী শিল্প ও সেবা খাতের জন্য ইতোমধ্যে গৃহীত পুনঃঅর্থায়ন স্কীম বর্ধিতকরণের পাশাপাশি করোনার কারণে অধিকতর ক্ষতিগ্রস্থ অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতসমূহ যেমন- ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী, পরিবহন শ্রমিক, হোটেল ও রেস্টুরেন্টের কর্মচারী এবং বেসরকারি পর্যায়ের শিক্ষাখাতের সাথে জড়িত ব্যক্তিবর্গের জন্য বিশেষ পুনঃঅর্থায়ন স্কিম চালুকরণ; (গ) নতুন উদ্যোক্তা ও কর্মসংস্থান সৃষ্টির উদ্দেশ্যে ইতোমধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক গঠিত ৫০০ কোটি টাকার এবং তফসিলি ব্যাংকসমূহের পরিচালন মুনাফার ১ শতাংশ নিয়ে গঠিত স্টার্ট আপ ফান্ডের আকার পর্যায়ক্রমে বর্ধিতকরণ; (ঘ) সিএমএসএমই খাতসমূহ, বিশেষ করে লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং, ক্লাস্টার এন্ড ভ্যালু চেইন এবং নারী উদ্যোক্তা উন্নয়নে ব্যাংকের অর্থায়ন বৃদ্ধিকল্পে বাংলাদেশ ব্যাংকের ক্রেডিট গ্যারান্টি স্কীম কার্যকরভাবে চালুকরণ।
৬. কোভিড-১৯ মহামারি সৃষ্ট প্রতিকূল অর্থনৈতিক পরিস্থিতি আমলে নিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক প্রবৃদ্ধি সহায়ক সম্প্রসারণ ও সংকুলানমূলক মুদ্রানীতি ধরে রেখে বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান সৃষ্টির উদ্যোগকে সমর্থন দিয়ে যাবে। একইসঙ্গে, ব্যবসার অনুকূল আবহ তৈরির মাধ্যমে পণ্য উপাদন বৃদ্ধি ও সরবরাহ চক্র স্থিতিশীল রাখার উদ্যোগ নেবে।