২০২১ সালে বিশ্বের সবচেয়ে বড় ১০ কোম্পানি

প্রতিবছরের মতো এবারও বিশ্বের বৃহত্তম ১০ কোম্পানির তালিকা প্রকাশ করেছে যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক ব্যবসায়ীক খাত নিয়ে প্রকাশিত ফরচুন ম্যাগাজিন।
ফরচুনের বার্ষিক 'গ্লোবাল ৫০০' সমীক্ষায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের কোম্পানিগুলোর আধিপত্য চোখে পড়ার মতো। শীর্ষ ১০ বৃহত্তম ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৮টিই যুক্তরাষ্ট্র এবং চীনের।
চলুন দেখে নেওয়া যাক ২০২১ সালে এসে বিশ্বের শীর্ষ ১০ কোম্পানির তালিকায় জায়গা করে নিতে পেরেছে কারা-
১. ওয়ালমার্ট
দেশ: মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র
আয়: ৫২,৪০০ কোটি মার্কিন ডলার।
টানা অষ্টম বছরের মতো এই তালিকার শীর্ষস্থান ধরে রেখেছে ওয়ালমার্ট।

স্যাম ওয়ালটনের হাতে প্রতিষ্ঠিত এই সুপার মার্কেট ফ্র্যাঞ্চাইজি বিশ্বের সবচেয়ে বড় কোম্পানিগুলোর একটি। ১৯৬২ সালে একটি পারিবারিক স্টোর হিসাবে আত্মপ্রকাশ করা এ কোম্পানির এখন বিশ্বব্যাপী ২৪টি দেশে ২৩ লাখেরও বেশি কর্মচারী রয়েছে।
২. চীনের রাষ্ট্রায়ত্ত গ্রিড
দেশ: চীন
আয়: ৩৮,৪০০ কোটি মার্কিন ডলার।
চীনের রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন বৈদ্যুতিক ইউটিলিটি কর্পোরেশন কেবল বিশ্বের সবচেয়ে বড় বিদ্যুৎ সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানই না, এটি চীনের বৃহত্তম এবং বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম কোম্পানি।
বেইজিং ভিত্তিক এই রাষ্ট্রায়ত্ত গ্রিড কোম্পানির নির্মাণ ও বিভিন্ন অংশের পরিচালনায় নিয়োজিত আছে প্রায় নয় লাখ কর্মচারী।
বিশ্বের বৃহত্তম কোম্পানিগুলোর একটি হওয়া সত্ত্বেও গত বছরের শুরুর দিকে রাজস্বে টান পড়েছিল এই রাষ্ট্রীয় সংস্থার। করোনাভাইরাসের উত্থানের পর মুনাফা ৮১ শতাংশ হ্রাস পেয়েছিল তাদের।
৩. অ্যামাজন
দেশ: মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র
আয়: ২৮,১০০ কোটি মার্কিন ডলার
করোনাকালীন সময়ে যুক্তরাষ্ট্রসহ উন্নত বিশ্বে অ্যামাজনের জনপ্রিয়তা তুঙ্গে উঠেছে। লকডাউনের সময় এসব দেশের সিংহভাগ নাগরিকই নির্ভর করেছে অ্যামাজনের ডেলিভারির উপর।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রতিষ্ঠিত এই কোম্পানি মানুষের কেনাকাটার ধরণই বদলে দিয়েছে সম্পূর্ণরূপে। ১৯৯৪ সালে আত্মপ্রকাশ করার পর থেকে শুধু শক্তিশালীই হয়েছে এই প্রতিষ্ঠানটি।

অ্যামাজনের প্রতিষ্ঠাতা জেফ বেজোস সিইও হিসাবে তার দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি নিয়েছেন সম্প্রতি। তার স্থলাভিষিক্ত হয়েছেন অ্যান্ডি জ্যাসি।
৪. চায়না ন্যাশনাল পেট্রোলিয়াম
দেশ: চীন
আয়: ৩৭,৯০০ কোটি মার্কিন ডলার।
চায়না ন্যাশনাল পেট্রোলিয়াম এমনিতে বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম তেল কোম্পানি হলেও বর্তমানে বিশ্বের চতুর্থ বৃহত্তম কোম্পানিই বনে গেছে এটি।

এই শীর্ষস্থানীয় চীনা কোম্পানির মোট ৩০টি দেশে তেল ও গ্যাসের মজুদ রয়েছে। যে কারণে আন্তর্জাতিক পেট্রোলিয়াম শিল্পেও এটি একটি প্রভাবশালী ভূমিকা পালন করে থাকে।
৩৩ বছর বয়সী এই প্রতিষ্ঠানটিকে ২০১৩ সাল থেকে নেতৃত্ব দিয়ে আসছেন সিইও ঝু জিপিং।
৫. সিনোপেক গ্রুপ
দেশ: চীন
আয়: ৪০,০০০ মার্কিন ডলার।
সিনোপেক গ্রুপও তেল ও গ্যাস ব্যবসার সাথে জড়িত।
১৯৯৮ সালে প্রতিষ্ঠিত এই চীনা কোম্পানি একটি কার্বন-নিরপেক্ষ ভবিষ্যতের জন্য কাজ করছে। বর্তমানে হাইড্রোজেন উৎপাদনের দিকে বেশি মনোযোগ দিচ্ছে তারা। ২০২৫ সালের মধ্যে পাঁচ লাখ টন পরিবেশ-বান্ধব হাইড্রোজেন উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করেছে সিনোপেক।
বিশ্বের সবচেয়ে বড় কোম্পানিগুলোর একটি হিসেবে স্বীকৃত রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন এই প্রতিষ্ঠান এবছর ফরচুনের র্যাঙ্কিংয়ে তিন ধাপ নিচে নেমে গিয়েছে।
৬. অ্যাপল
দেশ: মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র
আয়: ২৬,০০০ মার্কিন ডলার
যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষস্থানীয় পাঁচ টেক কোম্পানির মধ্যে বর্তমানে অ্যাপল দ্বিতীয়। অ্যাপল বিশ্বের সবচেয়ে বড় ব্যক্তিমালিকানাধানী প্রতিষ্ঠানগুলোর একটি।
১৯৭৬ সালে স্টিভ জবসের হাত ধরে আত্মপ্রকাশ করার পর গত পাঁচ দশকে অনেক দূর এগিয়েছে এই টেক কোম্পানি। বন্ধু এবং সহ-প্রতিষ্ঠাতা স্টিভ উজনিয়াকের বাসায় বসে জবসের কম্পিউটার তৈরির মাধ্যমে উদ্ভব হওয়া অ্যাপলের বর্তমান মূল্যমান দুই লাখ কোটি মার্কিন ডলারের চেয়েও বেশি।
পূর্বে বহুবার বিশ্বের সবচেয়ে মূল্যবান কোম্পানি, রাজস্বের দিক থেকে বিশ্বের সবচেয়ে বড় টেক কোম্পানিসহ নানান তকমা পেয়েছে খ্যাতনামা এই কোম্পানিটি।
৭. সিভিএস হেলথ
দেশ: মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র
আয়: ২৫,৭০০ কোটি মার্কিন ডলার
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সিভিএস হেলথ স্বাস্থ্য শিল্পে বিশ্বের সবচেয়ে বড় কোম্পানি।
ফরচুনের গ্লোবাল ৫০০'র মধ্যে এটিই প্রথম কোম্পানি যার সিইও একজন নারী। ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে এই পদে অধিষ্ঠিত হয়েছেন ক্যারেন লিঞ্চ। ফরচুনের মহিলা সিইও'র র্যাঙ্কিংয়ে তাই স্বাভাবিকভাবেই সবার উপরে অবস্থান করছেন এই মার্কিনী।
৮. ইউনাইটেড হেলথ গ্রুপ
দেশ: মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র
রাজস্ব: ২৪,২০০ কোটি মার্কিন ডলার
যুক্তরাষ্ট্রে প্রতিষ্ঠিত ইউনাইটেড হেলথ গ্রুপ স্বাস্থ্যসেবা পণ্য এবং স্বাস্থ্য বীমা পরিষেবা প্রদান করে থাকে।
৪৪ বছর আগে প্রতিষ্ঠিত এই বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানটির বর্তমান সিইও স্যার অ্যান্ড্রু উইটি। এই ব্রিটিশ ব্যবসায়ী ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে দায়িত্ব নিয়েছেন প্রতিষ্ঠানটির।
৯. টয়োটা মোটর
দেশ: জাপান
আয়: ২৭,৫০০ কোটি মার্কিন ডলার।
বর্তমানে বিশ্বজুড়ে একটি স্বনামধন্য অটোমোবাইল ব্র্যান্ড হিসেবে স্বীকৃত হলেও টয়োটা কিন্তু আসলে যাত্রা শুরু করেছিল টেক্সটাইল ব্যবসার মাধ্যমে। ১৯২৬ সালে প্রতিষ্ঠাতা সাকিচি টয়োডার হাত ধরে যাত্রা শুরু করেছিল এই জাপানি কোম্পানিটি।
প্রায় এক শতাব্দী পরে, টয়োটা মোটর এখন জাপানের বৃহত্তম কোম্পানি এবং বিশ্বের সবচেয়ে বড় কোম্পানিগুলোর মধ্যে একটি। ২০২০ সালে টয়োটার বিশ্বব্যাপী বিক্রির হার ১০.৫ শতাংশ কমে গেলেও সেবছর তারা মোট ৯৫ লাখ গাড়ি উত্পাদন করেছে। যার মানে, বর্তমান বিশ্বের সবচেয়ে বড় গাড়ি প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান টয়োটা।
১০. ভক্সওয়াগন
দেশ: জার্মানি
আয়: ২৮,৩০০ কোটি মার্কিন ডলার।
দ্বিতীয় গাড়ি প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান হিসেবে এই তালিকায় জায়গা পাওয়া ভক্সওয়াগন জার্মানির সবচেয়ে বড় কোম্পানি।
২০২০ সালে মোট ৮৯ লাখ গাড়ি উৎপাদন করলেও পূর্বের বছরের তুলনার এর উৎপাদন কমেছে প্রায় ১৮ শতাংশ।
১৯৩৭ সালে জার্মান লেবার ফ্রন্ট (নাৎসি পার্টির অধীনস্থ একটি সংগঠন) দ্বারা প্রতিষ্ঠিত এই কোম্পানি ভক্সওয়াগন বিটলসহ অনেক বিখ্যাত গাড়ির জন্য বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয়তা পেয়েছে।
সূত্র: সিইও ম্যাগাজিন ডটকম