২০১৯-২০ অর্থবছরের প্রবৃদ্ধির তথ্য অসামঞ্জস্যপূর্ণ: সিপিডি
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) প্রকাশিত তথ্যে গত জুনে সমাপ্ত ২০১৯-২০ অর্থবছরে দেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধিকে বাড়িয়ে দেখানো হয়েছে, বলে অভিমত প্রকাশ করেছেন বিশেষজ্ঞরা। দেশের শীর্ষস্থানীয় বেসরকারি অর্থনৈতিক গবেষণা ও নীতি পরামর্শক সিপিডি বিশেষজ্ঞরা আজ রোববার (১৬ আগস্ট) এমন কথা জানিয়েছেন। রাজনৈতিক সাফল্য তুলে ধরতেই জিডিপি প্রবৃদ্ধির তথ্য প্রকৃত অবস্থার চাইতে ফাঁপিয়ে দেখানো হচ্ছে, বলে মন্তব্য করেন তারা।
ভার্চুয়াল প্রেস কনফারেন্সে সিপিডি দাবি করেছে যে, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) দ্বারা ২০১২-২০১ অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধির ৫.২৪ শতাংশ অনুমান করার জন্য ব্যবহৃত- নানা সংস্থার স্থায়ী-অস্থায়ী তথ্য, কোভিড-১৯ মহামারি জনিত সর্বশেষ অর্থনৈতিক বাস্তবতা প্রতিফলিত করে না।
সিপিডি বলেছে যে, মহামারি আঘাত হানার আগে থেকেই দেশের অর্থনীতি মন্দার মুখোমুখি হয়েছিল। তবে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার কারণে ২০১৯-২০ অর্থবছরের শেষ তিন মাসে প্রবৃদ্ধি নেতিবাচক হয়েছে।
এসব কারণে গত অর্থবছরে মোট দেশজ উৎপাদন প্রবৃদ্ধি ২.৫ শতাংশের বেশি হওয়া সম্ভব নয়, জানিয়েছে গবেষণা সংস্থাটি।
ভার্চুয়াল সম্মেলনে সংস্থার মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সিপিডির সিনিয়র রিসার্চ ফেলো ড. তৌফিকুল ইসলাম খান। তিনি বলছিলেন, ''বড় ও মাঝারি উত্পাদন শিল্পের কোয়ান্টাম ইন্ডাস্ট্রিয়াল ইনডেক্স (কিউআইআইপি) গত এপ্রিল পর্যন্ত ২৪ দশমিক ৫ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে।''
"এপ্রিল-জুনে রফতানি ৫১.২ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে। এ অবস্থায় ৭৬.৮ শতাংশ বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচী (এডিপি) বাস্তবায়নেও মহামারিতে বাৎসরিক বরাদ্দ হ্রাস করা হয়। সুতরাং, জিডিপি প্রবৃদ্ধির অনুমান মোটেই বাস্তবসম্মত নয়" তিনি যোগ করেন।
তিনি আরও জানান যে, বেসরকারি খাতের ঋণ প্রবৃদ্ধি, মূলধনী যন্ত্রপাতি আমদানি, রাজস্ব সংগ্রহ এবং সরকার পরিচালনা ব্যয়ও- জিডিপি নিয়ে দেওয়া তথ্য বিবরণ সমর্থন করে না।
"অনেক দেশের জন্য জিডিপি যথেষ্ট হ্রাস পেয়েছে। ২০২০ অর্থবছরে (জুলাই-জুন) পাকিস্তান নেতিবাচক ০.৪ শতাংশ জিডিপি তথ্য দিতে পারে। ২০২০ সালের জানুয়ারী থেকে জুনের মধ্যে ভিয়েতনামের অর্থনীতিতে কেবল ১.৮১ শতাংশ প্রবৃদ্ধি যুক্ত হয়েছিল," তিনি বলছিলেন।
"উপরোক্ত বিবেচনায়, মহামারি জনিত মন্দার মাঝে ২০১৯-২০ অর্থবছরে যদি বাংলাদেশের অর্থনীতি ২.৫ শতাংশ হারেও বাড়তে পারত- তবে সম্ভবত এটি বিশ্বের সবচেয়ে দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতিগুলির একটিতে পরিণত হত" ড. তৌফিক যোগ করেন।
সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ডাঃ ফাহমিদা খাতুন বলেছেন, জিডিপি তথ্য মহামারি আসার আগে প্রথম নয় মাসের অর্থনৈতিক পারফরম্যান্সের ভিত্তিতে গণনা করা হলেও- এটি এক গত বছরের পুরো সময়ের বার্ষিক প্রবৃদ্ধি হিসাবে উপস্থাপিত হচ্ছে।
ফাহমিদা খাতুন বলেন, মহামারি আসার আগপর্যন্ত গত অর্থবছরের প্রথম নয়মাস যেভাবে অর্থনীতির পার্ফরম্যান্স গণনা করা হয়েছে- সেই হিসাব অপরিবর্তিত রেখেই সম্পূর্ণ বছরের প্রবৃদ্ধির তথ্য হিসেবে উপস্থাপন করা হচ্ছে।
তিনি দাবি করেন, বিবিএস রিপোর্ট অস্থায়ী এবং বেমানান উপাত্ত নিয়ে তৈরি হয়েছিল এবং তা ভাইরাস সৃষ্ট সঙ্কট প্রতিফলিত করে না। সঠিক জিডিপি বৃদ্ধির হার অনুপস্থিত থাকলে- দারিদ্র্য বিমোচন, আর্থ-সামাজিক বৈষম্য হ্রাস, শ্রম ও কর্মসংস্থান সৃষ্টির জন্য কার্যকর নীতিমালা প্রণয়ন করা যায় না- তিনি উল্লেখ করেন।
''সরকারি জরিপ সংস্থার এমন বিভ্রান্তিকর প্রতিবেদন বিদেশি সহায়তা পাওয়ার ক্ষেত্রেও বাঁধা সৃষ্টি করবে'' বলে জানিয়েছেন সিপিডি পরিচালক।
ডাঃ ফাহমিদা বলেছিলেন, জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত একটি সংখ্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। দারিদ্র্য ও বৈষম্যের হার না কমলে এবং নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি না করা গেলে - এধরনের সংখ্যা দেশের উন্নয়নে কোনো কিছু যোগ করতে পারবে না।
(সংক্ষেপিত)
মূল লেখা: Mismatch between GDP growth for FY20, reality: CPD