হারিয়ে যাচ্ছে নস্টালজিয়ার ইকোনো বলপেন
বাজার থেকে হারিয়ে যাচ্ছে একসময়ের জনপ্রিয় ইকোনো বলপয়েন্ট কলম। তুমুল প্রতিযোগিতামূলক বাজারে ইকোনোর স্বত্বাধিকারী প্রতিষ্ঠান জিকিউ পণ্যে নতুনত্ব আনতে ব্যর্থ হওয়ায় কলমটি বাজার হারাচ্ছে।
১৯৮১ সালে যাত্রা শুরু করা প্রতিষ্ঠানটির বিক্রি এক দশকে বিস্ময়করভাবে ৭৮ শতাংশ পর্যন্ত কমেছে। ২০১৬ সাল থেকেই প্রতিষ্ঠানটি লোকসান গুনছে।
১০ বছর আগে জিকিউয়ের বার্ষিক আয় ৩০ কোটি টাকা হলেও ২০২০-২১ অর্থবছরে প্রতিষ্ঠানটির আয় মাত্র সাত কোটি টাকায় নেমে আসে।
জিকিউ বলপেনের ২০১৯-২০ অর্থবছরের বার্ষিক আর্থিক বিবৃতিতে প্রতিষ্ঠানটির বহিঃনিরীক্ষক মাহফেল হক অ্যান্ড কোং জানায়, আর্থিক অবস্থা বিবেচনায় প্রতিষ্ঠানটি ব্যবসা চালিয়ে যেতে পারবে কি না তা নিয়ে তারা সন্দিহান।
ইকোনোর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী মেটাডর বলপয়েন্ট কলম ১৯৯৮ সালে যাত্রা শুরু করে বর্তমানে বাজারের শীর্ষ অবস্থানে রয়েছে।
তবে জিকিউ বলপেন কোম্পানির সেক্রেটারি উজ্জ্বল কুমার সাহা প্রতিষ্ঠানটিতে ধস নামার বিষয়ে মন্তব্য করতে চাননি।
২০১৯-২০ অর্থবছরের অডিট রিপোর্টে জিকিউ জানায়, উৎপাদনে অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে ব্যবস্থাপনা কমিটি ব্যবসা পুনরুদ্ধারের চেষ্টা করে। কিন্তু কোভিড মহামারির কারণে তা সম্ভব হয়নি।
প্রতিষ্ঠান সংশ্লিষ্ট একজন জানান, কাজী সালিমুল হক এবং সালমা হক ১৯৮১ সালে জিকিউ বলপেন প্রতিষ্ঠা করেন। কাজী সালিমুল হক কামাল মাগুরা-২ আসনে বিএনপির সাবেক সাংসদ ছিলেন। স্থানীয়ভাবে তিনি ইকোনো কামাল নামে পরিচিত। ২০১৮ সালে দুর্নীতির মামলায় তার ১০ বছরের কারাদণ্ড হয়।
প্রতিষ্ঠানটির বর্তমান অবস্থার জন্য কাজী সালিমুল হককে দায়ী করেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সাবেক একজন কর্মকর্তা।
"ব্র্যান্ড ভ্যালু কাজে লাগিয়ে প্রতিষ্ঠানটি এখনো ঘুরে দাঁড়াতে পারে। এর জন্য বিনিয়োগের প্রয়োজন হবে। কিন্তু কোনো আর্থিক প্রতিষ্ঠানই দুর্বল কোম্পানিকে ঋণ দিতে আগ্রহী নয়," বলেন তিনি।
তিনি জানান, আগে প্রতিষ্ঠানটিতে দেশজুড়ে ৩০০ জনের বেশি কর্মী ও সেলস রিপ্রেজেন্টেটিভ ছিল। কিন্তু এখন তা মাত্র ১০০ জনে নেমে এসেছে।
পুঁজিবাজারের তালিকাভুক্ত পুরোনো কোম্পানিগুলোর মধ্যে জিকিউ বলপেন অন্যতম। ১৯৮৬ সালে প্রতিষ্ঠানটি পুঁজিবাজারের অন্তর্ভুক্ত হয়।
কয়েক বছর ধরে লোকসানের সম্মুখীন হলেও প্রতিষ্ঠানটি রিটেইন্ড আর্নিংস থেকে অংশীদারদের নিয়মিত নগদ লভ্যাংশ প্রদান করে আসছে।
কিন্তু এর স্পন্সর ও পরিচালকরা কোনো লভ্যাংশ পাচ্ছেন না। ঘোষিত লভ্যাংশের কারণে সেকেন্ডারি মার্কেটে 'এ' ক্যাটাগরির কোম্পানি হিসেবে জিকিউ বলপেনের শেয়ার লেনদেন হয়ে থাকে।
স্মল ক্যাপ প্রতিষ্ঠান হওয়ায় এর শেয়ারে ফটকা বিনিয়োগকারীদের রয়েছে ব্যাপক আগ্রহ।
২০২০ সালের জুনে প্রতিটি শেয়ারের মূল্য ছিল মাত্র ৬৬ টাকা। কিন্তু চার মাস পর গত বছর জুনে শেয়ার দর ২৭৬ শতাংশ বেড়ে ২৪৮ টাকায় দাঁড়ায়। বিআরবি গ্রুপ প্রতিষ্ঠানটি অধিগ্রহণ করতে যাচ্ছে এমন গুজবে শেয়ারের দাম বাড়ে।
সোমবার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে লেনদেন শেষে প্রতিষ্ঠানটির শেয়ারের দাম দাঁড়ায় ১০৪.৫০ টাকা।
বলপয়েন্ট বাজার
খাত সংশ্লিষ্টদের মতে, প্রতি চার দিনে এক কোটি শিক্ষার্থী এক কোটি বলপয়েন্ট কলম কিনে। এছাড়া অসংখ্য অফিস নিয়মিতভাবে বলপেন কিনে থাকে। তবে, বাজারে আমদানিকৃত কলমের আধিপত্যের কারণে পুরো বাজার ধরা সম্ভব হয়নি।
স্থানীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে প্রাণ-আরএফএল, জননী এবং কুমু দৈনিক ২৫ লাখ কলম তৈরি করে। ২০১৯ সালে বলপয়েন্ট কলমের বাজারে প্রবেশ করে মেঘনা গ্রুপ। 'ফ্রেশ' ব্র্যান্ডনামে প্রতিষ্ঠানটি কলম বাজারজাত করছে।
আমদানিকৃত কলমের কারণে বাজারে তুমুল প্রতিযোগিতার সৃষ্টি হওয়ায় অলিম্পিক ইন্ডাস্ট্রিজ এবং রোজ হেভেন বলপয়েন্ট কলম উৎপাদন বন্ধ করে দিয়েছে।