স্বর্ণালঙ্কার রপ্তানিতেও প্রণোদনা চান ব্যবসায়ীরা
শ্রমঘন শিল্প বিবেচনায় তৈরি পোশাকসহ কয়েকটি খাতের পণ্য রপ্তানি প্রণোদনা দিচ্ছে সরকার। তবে স্বর্ণালঙ্কার রপ্তানিতেও এবার প্রণোদনা চাইলেন স্বর্ণ ব্যবসায়ীরা।
যদিও তাদের বক্তব্যে ক্ষুব্ধ হয়ে এর বিরোধিতা করেছেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান আবু হেনা রহমতুল মুনিম।
তিনি বলেন, 'সোনা আমদানিতে সরকার নীতিগত সহায়তা দিলেও কোনো কাজে আসেনি। অভ্যন্তরীণ সোনার বাজারে অনেক অদেখা বিষয় আছে এবং লেনদেন ও বিক্রিতে স্বচ্ছতা আসেনি। ফলে কোনো প্রণোদনা এ খাতকে স্বচ্ছতা দেবে না।'
রোববার ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেট প্রণয়নের লক্ষে আয়োজিত প্রাক বাজেট বাজেট আলোচনায় সোনা আমদানি-রপ্তানি সহজ করা ও প্রণোদনা দেওয়ার দাবি জানান গোল্ড ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টাস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি।
দেশে বছরে ২০ থেকে ২৪ মেট্রিক টন স্বর্ণের চাহিদা থাকলেও এর মাত্র ১০ শতাংশ পুরনো অলঙ্কার গলিয়ে সংগ্রহ করা হয়। চাহিদার বাকি ৯০ শতাংশ আসে ব্যাগেজ রুলসের মাধ্যমে ও চোরাই পথে।
অবৈধপথে আমদানি ঠেকাতে ডিলারশিপ লাইসেন্স দিয়ে বাণিজ্যিকভাবে আমদানির সুযোগ দিয়ে ২০১৯ সালে স্বর্ণ নীতিমালা প্রণয়ন করে সরকার। বৈধভাবে স্বর্ণ আমদানিতে ২০১৯ সালে একটি ব্যাংকসহ ১৯টি প্রতিষ্ঠানকে লাইসেন্স প্রদান করে বাংলাদেশ ব্যাংক। প্রতি ভরি স্বর্ণ আমদানিতে বর্তমানে ২ হাজার টাকা সম্পূরক শুল্ক দিতে হয়।
লাইসেন্স পাওয়ার পর গত বছরে দুটি প্রতিষ্ঠান ২৫ হাজার গ্রাম স্বর্ণ বৈধভাবে আমদানি করলেও নানা জটিলতায় এরপর বন্ধ হয়ে যায় আমদানি।
এনবিআর আয়োজিত প্রাক বাজেট আলোচনায় স্বর্ণালঙ্কার রপ্তানিকারকরা অভিযোগ তোলেন, ডিলারশিপ লাইসেন্স দেওয়া হলেও শুল্ক কর দিয়ে স্বর্ণ আমদানিতে জটিলতার কারণে অবৈধভাবে বেশি আমদানি হচ্ছে।
বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতির সাবেক সভাপতি গঙ্গাচরণ মালাকার বলেন, 'একজন সোনা আমদানিকারক হতে হলে কমপক্ষে ১০০ কোটি টাকা থাকতে হবে। কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংক যাদের লাইসেন্স দিয়েছে, বেশিরভাগেরই সেই সক্ষমতা নেই।'
ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়ে এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, 'বৈধভাবে স্বর্ণ আমদানিতে অনেক সুযোগ দেওয়া হলেও কোনো লাভ হয়নি। স্বচ্ছতা আসেনি স্বর্ণ কেনা-বেচায়। গোল্ডের সঙ্গে শুধু পলিসি সাপোর্ট যথেষ্ট নয়। গোল্ডের সঙ্গে আরও অনেক অদেখা বিষয় আছে। সেই বিষয়গুলো থেকে উতরিয়ে উঠতে না পারলে এই গোল্ড সেক্টরে কিচ্ছু হবে না!'
'গতবার সোনা আমদানিতে এত সুবিধা দেওয়া হলো, কয়টা ইমপোর্ট করছেন? ডমেস্টিক মার্কেটেই স্বচ্ছতা আসেনি। এখন আন্তর্জাতিক বাজারের অনেক কিছু করার কথা বলা হচ্ছে। আরও সাপোর্ট দিলেও কিছু হবে না,' বলে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম।
বাজেট আলোচনায় স্বর্ণ ব্যবসায়ী ছাড়াও অ্যাগ্রো প্রসেসর, চামড়া, বীজ , মিষ্টি, বেকারি ও রঙ শিল্পসহ ১৫টি খাতের প্রতিনিধিরা অংশ নেয়।
চামড়াজাত পণ্য রপ্তানিতে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে সব প্রতিষ্ঠানের জন্য সাধারণ বন্ডেড ওয়্যারহাউস সুবিধা ও করপোরেট কর হার কমানোর দাবি জানান চামড়াজাত পণ্য ও পাদুকা শিল্প খাতের প্রতিনিধিরা।
চামড়া শিল্প মালিকরা এ খাতের জন্য কর অবকাশ সুবিধা বাড়ানোর দাবি করলে তারও বিরোধিতা করেন এনবিআর চেয়ারম্যান।
রহমতুল মুনিম বলেন, 'নীতিগত সহায়তা দেওয়ার পরেও কমপ্লায়েন্ট না হওয়ায় চামড়া শিল্প রপ্তানির বাজারে সুবিধা করতে পারছে না। শুল্ক বাধা নয়, নিজেদের সমস্যার কারণেই এই খাত বিপর্যস্ত। রাজস্ব ক্ষতি করে প্রণোদনা দিলেও কাজ হচ্ছে না। ফলে এসব সুযোগ আর দেওয়া হবে না।'
ফসলের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিতে আলু, গম, ভুট্টা, মরিচ, তরমুজসহ বিভিন্ন শস্যবীজ আমদানির ক্ষেত্রে শুল্ক মুক্ত সুবিধা নিশ্চিতে অযৌক্তিক শর্ত প্রত্যাহারের অনুরোধ জানান বীজ আমদানিকারক সমিতি।
হস্তচালিত বেকারিতে উৎপাদিত পাউরুটি, বনরুটি, ১৫০ টাকার প্রতি কেজি বিস্কুট এবং প্রতি কেজি কেক (পার্টিকেক ছাড়া) ভ্যাটের আওতামুক্ত রাখার প্রস্তাব দিয়েছেন বাংলাদেশ ব্রেড, বিস্কুট ও কনফেকশনারী প্রস্তুতকারক সমিতির সভাপতি মোহাম্মদ জালাল উদ্দিন।
জালাল উদ্দিন বলেন, 'হস্তচালিত বেকারি শিল্পের অদক্ষ, অশিক্ষিত বেকার যুবকদের কর্মসংস্থান ও এই শিল্পের ক্রমবিকাশের কথা ও বাংলাদেশসহ বিশ্বব্যাপী কোভিড-১৯ মহামারির কথা বিবেচনা করে ২০২১-২০২২ অর্থবছরের জাতীয় বাজেটে সম্পূর্ণরূপে ভ্যাট মুক্ত রাখার জোরাল দাবি জানাচ্ছি।'
সভাপতির বক্তব্যে এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, 'বাজেটে দেশীয় অর্থনীতি শক্তিশালী করার লক্ষ্যে স্থানীয় শিল্পকে গুরুত্ব দিতে চাই আমরা। কোন কোন খাতে সহায়তা দিলে স্থানীয় উৎপাদন বাড়বে এবং পরনির্ভরশীলতা কমে আসবে- সে বিষয়ে কাজ করছি।'