স্বরূপে ফিরেছে চট্টগ্রাম বন্দর
চট্টগ্রাম বন্দরের গেইটগুলোতে গেলে এখন মিলবে কয়েক হাজার কাভার্ড ভ্যান, লরি ও ট্রাকের দীর্ঘ সারি। পণ্য ডেলিভারি নিতেই বন্দরের বিভিন্ন গেইটে এই সব পণ্য বহনকারী গাড়ির অপেক্ষা।
বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই নগরীর বারেক বিল্ডিং মোড় থেকে সল্ট গোলা ক্রসিং পেরিয়ে বিমানবন্দর সড়কে সৃষ্টি হয়েছে দীর্ঘ জট।
করোনা পরিস্থিতিতে টানা এক মাসেরও বেশি সময় ধরে থমকে ছিল চট্টগ্রাম। কন্টেইনার আর জাহাজ জটে পড়ে চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দর। গত দুই দিনে চট্টগ্রাম বন্দর ফিরে পেয়েছে তার চিরচেনা রুপ।
স্বাভাবিক সময়ের মতোই বন্দরের ইয়ার্ড থেকে ডেলিভারি হচ্ছে ৪৫০০ টিউস (টুয়েন্টি ফুট ইকুইভ্যালেন্ট ইউনিট) পণ্যবাহী কন্টেইনার, হ্যান্ডেলিং হচ্ছে ছয় হাজারেরও বেশি টিউস কন্টেইনার। আর বন্দরের এই স্বাভাবিক রুপে ফেরাতে ব্যবসায়ীদেরকে বন্দর স্টোর চার্জ মওকুফ করেছে প্রায় ১৩৮ কোটি টাকা। নিয়েছে আরো অনেক পদক্ষেপ। সঠিক সিদ্ধান্তেই যেন প্রাণ ফিরে পাচ্ছে দেশের প্রধান সমুদ্র বন্দর।
চট্টগ্রাম বন্দরের তথ্য অনুযায়ী, বৃহষ্পতিবার সকাল ৮টা পর্যন্ত ২৪ ঘন্টায় কন্টেইনার ডেলিভারি হয় চার হাজার ২৪২ টিউস (২০ ফুট সাইজের কন্টেইনার)। একই সময়ে হ্যান্ডেলিং হয় ছয় হাজার ৮৭৪ কন্টেইনার। ২৯ এপ্রিল ডেলিভারি হয় চার হাজার ৪৪০ টিউস কন্টেইনার। যা লকডাউনে ডেলিভারি নেমে এসেছিল ১০০০ টিউস কন্টেইনারের নিচে। ৩০ এপ্রিল কন্টেইনার ছিলো ৪৫ হাজার ২৬৫টি। যা এখনো স্বাভাবিক ধারণ ক্ষমতার চেয়ে প্রায় ১৫,০০০ টিউস কন্টেইনার বেশি।
চট্টগ্রাম বন্দরের সচিব ওমর ফারুক বলেন, স্বাভাবিক সময়ে চট্টগ্রাম বন্দর থেকে প্রতিদিন চার হাজার থেকে চার হাজার ৫০০ কন্টেইনার ডেলিভারি হতো। বর্তমানে সেই স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে এসেছে। এই অবস্থা ধরে রাখতে আমদানিকারক এবং সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতি আহ্বান জনিয়েছেন তিনি।
তিনি বলেন, "আমরা ব্যবসায়ীদের আহ্বানে সাড়া দিয়ে প্রায় ১৩৮ কোটি টাকার স্টোর রেন্ট মওকুফ করেছি।"
করোনা পরিস্থিতিতে চট্টগ্রাম বন্দরে কন্টেইনার জট সৃষ্টি হওয়ায় ইয়ার্ডে আটকে থাকা সকল ধরনের পণ্যবাহী কন্টেইনারের শতভাগ স্টোর রেন্ট আগামী ৪ মে পর্যন্ত মওকুফ করে চট্টগ্রাম বন্দর। এর পাশাপাশি সকল ধরনের পণ্য বেসরকারি আইসিডিতে (ইনল্যান্ড কন্টেইনার ডিপো) স্থানান্তরের সিদ্ধান্ত দেয় জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
সচল করা হয় চট্টগ্রাম কাস্টম হাউজের কার্যক্রমও। ইয়ার্ড থেকে রমজানের প্রায় দুই হাজার ৫০০ কন্টেইনার পণ্য ডেলিভারি নিতে সংশ্লিষ্ট আমদানিকারক, সিএন্ডএফ এজেন্ট, চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রিজ এর বরাবর চিঠি দেয় বন্দর কর্তৃপক্ষ। বন্দরের সার্বিক পরিস্থিতি সরেজমিন দেখতে আসেন নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খলিদ মাহমুদ চৌধুরী।
চট্টগ্রাম বন্দর সূত্র জানায়, কন্টেইনার জট কমিয়ে আনতে নানামুখী উদ্যোগের ফলে গত এক সপ্তাহ থেকে ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে কন্টেইনার ডেলিভারি সংখ্যা। গত ২৫ এপ্রিল দুই হাজার ২৩৯টি, ২৬ এপ্রিল দুই হাজার ৭১৪ টি, ২৭ এপ্রিল দুই হাজার ৭৯৩টি, ২৮ এপ্রিল দুই হাজার ৭৫৩টি, ২৯ এপ্রিল চার হাজার ৪৪০টি এবং ৩০ এপ্রিল চার হাজার ২৪২টি কন্টেইনার ডেলিভারি হয়।
চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রিজ এর সভাপতি মাহবুবুল আলম বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনায় সকল ধরনের আমদানীকৃত কন্টেইনারের স্টোর রেন্ট মওকুফের সময় বৃদ্ধির জন্য বন্দর কর্তৃপক্ষকে ধন্যবাদ জানান। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে পণ্য খালাস করে বন্দরের সক্ষমতা ও গতিশীলতা অব্যাহত রাখতে সকল আমদানিকারক ব্যবসায়ীদেরও তিনি আহ্বান জানান।
বেসরকারি কন্টেইনার ডিপো (আইসিডি) মালিকদের সংগঠন বিকডার সচিব রুহুল আমিন শিকদার বলেন, সকল পণ্য বন্দরের ইয়ার্ড থেকে আইসিডিতে স্থানান্তরের নির্দেশনা দেওয়ার পর এই পর্যন্ত আট হাজার ৫০০ কন্টেইনার স্থানান্তর হয়েছে। এখনো ১৯টি আইসিডিতে ২১ হাজার কন্টেইনার রাখার স্থান খালি আছে। গত কয়েকদিনে বন্দরে কন্টেইনার জট পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে।