সবজির দাম আকাশছোঁয়া হলেও বাড়েনি কৃষকের আয়
জ্বালানি মূল্যবৃদ্ধির কারণে টানা তিন দিনের পরিবহন ধর্মঘটে সবজির দাম বেড়েছে কয়েক গুণ। সাধারণ নাগরিকের ক্রয়ক্ষমতাকে ব্যাপাকভাবে কমিয়ে দিয়েছে বাড়তি এই দাম।
তবে, প্রায় সব ধরনের সবজির দাম বাড়লেও, কৃষকদের আয় বাড়েনি। এখনও আগের দামেই উৎপাদিত ফসল বিক্রি করছেন তারা। দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে স্থানীয় সংবাদদাতাদের প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এ খবর।
কুষ্টিয়ার বেগুন চাষী মোঃ আকরাম হোসেন গত সপ্তাহে স্থানীয় পাইকারি বিক্রেতাদের কাছে প্রতি কেজি বেগুন বিক্রি করেছেন ৩৫ থেকে ৪০ টাকায়। তিন দিনের পরিবহন ধর্মঘটের ফলে ঢাকায় এসে সেই বেগুন বিক্রি হয়েছে প্রতি কেজি ৯০ থেকে ১০০ টাকায়। অর্থাৎ প্রতি কেজিতে দাম বেড়েছে ২০ থেকে ৩০ টাকা। তবে ঢাকায় বেগুনের দাম বাড়লেও আকরাম হোসেন বেগুন বিক্রি করছেন সেই আগের দামেই।
কুষ্টিয়া, মেহেরপুর, বগুড়া ও রাজশাহীসহ সারাদেশের বাজার ঘুরে স্থানীয় সংবাদদাতারা জানান, ঢাকার বাজারে সবজির দাম আকাশছোঁয়া হলেও সবজি চাষীদের আয়ে কোনো পরিবর্তন আসেনি।
কৃষকেরা প্রতি কেজি বেগুন ৩৫ থেকে ৪০ টাকায়, মটরশুঁটি ৪০ থেকে ৫০ টাকায়, এবং ঝিঙ্গা বিক্রি করছেন ২৫ টাকায়। অথচ ঢাকার বাজারে এসব সবজি প্রতি কেজিতে ১৫ থেকে ৩০ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ১০০ টাকায়।
কারওয়ানবাজারের পাইকারী বিক্রেতা ফয়জুল্লাহ কুষ্টিয়া থেকে সবজি সংগ্রহ করেন। ৭০ থেকে ৮০ কেজির একটি বস্তার জন্য ট্রাক পরিবহন খরচ বাবদ এতদিন ১৫০ টাকা খরচ করতেন তিনি। তবে পরিবহন ধর্মঘটে এ খরচ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২০০ টাকায়।
এতদিন পাবনা থেকে ৫ টন ধারণক্ষমতাসম্পন্ন ট্রাকে পণ্য পরিবহন করতে খরচ হতো ১৬ থেকে ১৮ হাজার টাকা। বর্তমানে সেটি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৪ থেকে ২৫ হাজার টাকায়।
ডিজেল ও কেরোসিনের সাম্প্রতিক মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে, বাস ও ট্রাক মালিকরা পরিবহন ধর্মঘটের ডাক দেন। ফলে রাস্তায় প্রচুর খালি ট্রাক থাকলেও সেগুলোতে ভাড়া করতে গুণতে হয়েছে অতিরিক্ত ৭ থেকে ৮ টাকা।
কারওয়ান বাজারের সবজির পাইকারি বিক্রেতা শহিদুল ইসলাম বলেন, একদিকে পরিবহন ভাড়া বেড়েছে; অন্যদিকে সবজি পরিবহনে দেখা দিয়েছে ট্রাকের সংকট।
এ অবস্থায় শিমের দাম কেজিতে ১০ টাকা বাড়িয়ে পাইকারিতে ১০০ টাকায় বিক্রি করছেন শহিদুল।
এদিকে বউবাজারের খুচরা বিক্রেতারা শিম বিক্রি করছেন প্রতি কেজি ১৩০ টাকায়। বউবাজারের খুচরা বিক্রেতা সাইফুল ইসলাম জানান, তিন দিন আগে তিনি ৮০ টাকা পাইকারি দরে করলা কিনেছিলেন। তবে এখন তা কিনতে হচ্ছে ১০০ টাকায়। পাইকারি দাম বেড়ে যাওয়ায় সবজির দাম ৫ থেকে ১৫ টাকা বাড়িয়েছেন তিনি।
কারওয়ানবাজারের খুচরা বিক্রেতা জাকির হোসেন জানান, দাম বাড়ায় সবজির বিক্রিও কমে গেছে। তিনি বলেন, "আগের তুলনায় মানুষ এখন অনেক কম সবজি কিনছে; বাজারে ক্রেতার সংখ্যাও কমে গেছে।"
সর্বশেষ জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে সারাদেশে পরিবহন ধর্মঘটের মধ্যে রোববারও রাজধানীর কাঁচাবাজারে সবজির দাম বেড়েছে।
তিন দিনে প্রায় সব ধরনের সবজির দাম কেজি প্রতি বেড়েছে ১৫ থেকে ২০ টাকা।
বেশিরভাগ বিক্রেতাদের মতে, পরিবহন ভাড়া বৃদ্ধি ও পাইকারি বাজারে উচ্চ মূল্যের কারণে সবজির দাম বেড়েছে।
কারওয়ান বাজারের সবজি দোকানদার মোঃ ফয়েজ উল্লাহ জানান, কুষ্টিয়া থেকে সবজির আমদানিতে প্রতি বস্তায় খরচ বেড়েছে ৫০ টাকা। তিনি আরও বলেন, প্রতি কেজিতে বস্তার দাম বেড়েছে ১ টাকা।
মগবাজারের আরেক সবজি বিক্রেতা হাসিবুল ইসলাম বলেন, "তিন দিন আগে আমি ৫ কেজি ঢেঁড়স ২০০ টাকা পাইকারি দরে কিনেছিলাম। আজ এর দাম বেড়ে হয়েছে ২৫০ টাকায়। প্রতি ৫ কেজি করলার দাম ৩০০ টাকা থেকে বেড়ে ৩৫০ টাকা হয়েছে।"
তিনি আরও বলেন, সব সবজির পাইকারি দাম কেজিতে ৮ থেকে ১০ টাকা করে বেড়েছে।
কারওয়ান বাজারের সবজির পাইকারি বিক্রেতা সহিদুল ইসলাম বলেন, পরিবহন খরচ বেড়ে যাওয়ায় বিক্রেতারা বেশি দামে পণ্য বিক্রি করছেন। তিনি বলেন, "আমি পাবনা থেকে শিম নিয়ে এসেছি। আগে ৫ টনের ট্রাকের ভাড়া ছিল ১৬ থেকে ১৮ হাজার টাকা। এখন তা বেড়ে হয়েছে ২৪ থেকে ২৫ হাজার টাকা। এমনকি ট্রাক পাওয়াও খুব কঠিন।"
কারওয়ান বাজারের ডিম বিক্রেতা আলমগীর বলেন, ডিমের পাইকারি দাম বেড়েছে ডিম প্রতি এক টাকা।
দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে তিনি বলেন, "আমি আগে ৭৮০ টাকায় ১০০টি ডিম কিনতাম, কিন্তু এখন ১০০টি ডিম কিনতে আমার খরচ হচ্ছে ৮৮০ টাকা। আমি ১১৫ টাকায় এক ডজন ডিম বিক্রি করছি।"
এছাড়া, প্রতি কেজি করলা এখন ৬০ টাকা, বেগুন ৮০ টাকা ও মাঝারি আকারের লাউ বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকায়।
ডিজেল ও কেরোসিনের সর্বশেষ মূল্য বৃদ্ধির প্রতিবাদে গত শুক্রবার থেকে দেশব্যাপী ধর্মঘটের ডাক দেয় দেশের গণ পরিবহন ও পণ্য পরিবহন মালিকরা।