শুল্ক ছাড়েও বাড়েনি চাল আমদানি
চাল আমদানিতে শুল্ক ছাড়ের সুবিধা পেয়েও আমদানিকারকরা সরকার অনুমোদিত এক-চতুর্থাংশ পরিমাণ চালও আমদানি করতে না পারায়, স্থানীয় বাজারে বেড়েছে চালের দাম।
স্থানীয় বাজারে চালের দাম স্থিতিশীল রাখতে গত ৩০ আগস্ট ৪১৫টি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে ১৭ লাখ দুই হাজার টন চাল আমদানির অনুমতি দেয় সরকার। খাদ্য মন্ত্রণালয়ের সূত্রানুসারে, যার মধ্যে এখন পর্যন্ত মাত্র ৩.৮৬ লাখ টন চাল আমদানি করা হয়েছে।
এছাড়া, সরকার চাল আমদানির শুল্ক ৬২ দশমিক ৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২৫ শতাংশ নির্ধারণ করে। ৩০ অক্টোবর পর্যন্ত শুল্কছাড়ের এই সুবিধা দেওয়া হয়।
মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা ও আমদানিকারকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে যে, অনুমতি থাকা সত্ত্বেও আমদানিতে আগ্রহী ছিলেন না চাল ব্যবসায়ীরা। এছাড়া, চলমান মহামারির কারণে ভারত থেকে চাল আমদানির সুযোগও কমেছে।
এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সহকারী সচিব মো. মাহবুবুর রহমান দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "স্থানীয় বাজারে চালের দাম কিছুটা কমায় আমদানি থেকে সরে আসে চাল আমদানিকারকরা। তখন আন্তর্জাতিক বাজারে চালের দাম উল্লেখ করে তারা জানান, আমদানি করা চাল স্থানীয় চালের চেয়ে বেশি দামে বিক্রি করতে হবে।"
তবে ভিন্ন কথা বলছে, মন্ত্রণালয়ের খাদ্য পরিকল্পনা ও পরিধারণ ইউনিট (এফপিএমইউ)। ৩ নভেম্বর পর্যন্ত এফপিএমইউ-এর তথ্য অনুযায়ী ভারত, থাইল্যান্ড ও ভিয়েতনাম থেকে আমদানিকৃত প্রতিকেজি চালের দাম হতো ৩২.৮৮ - ৩৭.৭৭ টাকা। শুল্ক ও অন্যান্য খরচ যোগ করার পর যা ৪০ টাকায় বিক্রি করা যেত। অথচ, ঢাকার বাজারে বর্তমানে মোটা জাতের চালের দাম ৪৮ - ৫০ টাকা কেজি।
ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) তথ্য অনুযায়ী, গত এক মাসে চালের দাম বেড়েছে ২ দশমিক ১৫ শতাংশ। এরমধ্যে মাঝারি মানের চালের দাম বেড়েছে ০.৯৭ শতাংশ। অন্যদিকে, উন্নত মানের চালের দাম ৩ দশমিক ২৮ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে।
চাল আমদানিকারক ও একটি অটো রাইস মিল মালিক চিত্ত মজুমদার দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে জানান, ভারত থেকে তিনি দেড় লাখ টন চাল আমদানি করে ৪০ থেকে ৪০.১০ টাকা কেজিতে বিক্রি করেছেন।
"বন্দরে জটিলতা থাকায় ভারত থেকে চাল আমদানি সহজ ছিল না। সেখানে প্রতিটি চালান এক মাস দেরিতে আসে," বলেন তিনি।
খাদ্য মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, অভিজ্ঞতা কম এমন আমদানিকারকরা শুরুতে আমদানির বিষয়ে আগ্রহ প্রকাশ করলেও, বাজার বিশ্লেষণের পর মুনাফা কম দেখে তাদের আগ্রহ কমে। সেসময় ভারতে কোভিডের কারণে লকডাউন থাকায় অনেকেই লেটার অব ক্রেডিট (এলসি) খুলতে ব্যর্থ হন।
তবে, চাল আমদানি কম হলেও খাদ্য মন্ত্রণালয় অসন্তুষ্ট নয়।
বিষয়টি বিস্তারিত ব্যাখ্যা করে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব মোছাম্মৎ নাজমানারা খানুম দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "মজুদকারীদের অনেকেই বাজারে চালের দাম বাড়ানোর অপেক্ষায় ছিলেন। কিন্তু, সরকার আমদানির অনুমতি দেওয়ায় তারা মজুদ করা চাল বাজারে ছাড়তে শুরু করেন। ফলে সরবরাহ বাড়ে।"
তিনি আরও বলেন, সরকার পাঁচ লাখ টন চাল আমদানি করেছে। অন্যদিকে, বেসরকারি আমদানিকারকরা প্রায় চার লাখ টন চাল আমদানি করে, যা খাদ্য চাহিদা পূরণে যথেষ্ট।
"আমন ধান কাটার মৌসুম শুরু হওয়ায় চালের বাজারে অস্থিরতা দেখা দেওয়ার শঙ্কা নেই," বলেন তিনি।
গত বোরো মৌসুমে সরকার ২০ লাখ টন ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করলেও তার অর্ধেকও সংগ্রহ করা যায়নি। ফলে সরকারের চালের মজুদ তলানিতে পৌঁছে। পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে বাজারে কৃত্রিম সংকটের সৃষ্টি করে অসাধু ব্যবসায়ীরা। মিল মালিকরা নির্ধারিত হিসাবে সরকারি গুদামে চাল সরবরাহ না করায় চাল আমদানির সিদ্ধান্ত নেয় সরকার।