লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১৫০ কোটি টাকা বেশি রাজস্ব আদায় কুমিল্লা কমিশনারেটের
বিগত অর্থবছরের জুন মাসে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১৫০ কোটি টাকা বেশি রাজস্ব আদায় করেছে কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেট কুমিল্লা। ওইমাসে লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩৬৬ কোটি টাকা। আদায় হয় ৫১৬ কোটি টাকা। প্রবৃদ্ধির হার প্রায় ৪১ শতাংশ। ২০১৯-২০২০ অর্থবছরে এ কমিশনারেটে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩৭৪ কোটি টাকা। আদায় হয় ৩১৫ কোটি টাকা। ২০১৯-২০২০ অর্থবছরের জুন মাসের তুলনায় ২০২০-২০২১ অর্থবছরের জুন মাসে অর্জিত রাজস্বের তুলনামূলক প্রবৃদ্ধি প্রায় ৬৪ শতাংশ। কুমিল্লা কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
সূত্র জানায়, ২০২০-২০২১ অর্থবছরে কুমিল্লা কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেট তিন হাজার ১৫০ কোটি টাকা রাজস্ব আদায় করে। এর আগের অর্থবছরে এ কমিশনারেট আদায় করে দুই হাজার ৮৮৩ কোটি টাকা। আগের অর্থবছরের তুলনায় ২০২০-২১ অর্থবছরে ২৬৭ কোটি টাকা বেশি রাজস্ব আদায় হয়। ২০২০-২১ অর্থবছরে আদায়কৃত রাজস্ব যেকোনো সময়ের চেয়ে সর্বোচ্চ।
২০২০-২০২১ অর্থবছরের আদায়কৃত রাজস্বের মধ্যে রয়েছে উৎসে কর্তন ৮২৫ কোটি টাকা। প্রচেষ্টা ও সেবা খাত থেকে আদায় হয় দুই হাজার ৩২৫ কোটি টাকা। সিগারেট ছাড়া রাজস্ব আদায় হয় এক হাজার ৩৩১ কোটি টাকা। সিগারেটে আদায় হয় এক হাজার ৮১৯ কোটি টাকা। তাছাড়া বেভারেজে আদায় হয় ১০০ কোটি, পেট্রলিয়াম গ্যাস ও অন্যান্য গ্যাসে ৪৫ কোটি, ওষুধে ৩০ কোটি, বিস্কুটে সাড়ে ছয় কোটি, বিড়িতে ৭০ কোটি, নন সিরামিক ব্রিকসে ৪০ কাটি, গুঁড়ো দুধে ৩৯ লাখ, ইঞ্জেকশন সিরিঞ্জে ১০ কোটি ও কটন ইয়ার্নে প্রায় তিন কোটি টাকা রাজস্ব আদায় হয়। রেস্টুরেন্ট, হোটেল-মোটেল, প্রেস, পেপার, বই বিতান, উৎপাদিত কাপড় ও মিষ্টান্ন খাতসহ করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত প্রতিষ্ঠান থেকে রাজস্ব আদায় একেবারে কম হয়।
সূত্র আরও জানায়, দেশের ১২টি কমিশনারেটের মধ্যে বিগত অর্থবছরে ভ্যাট আদায়ের ক্ষেত্রে কুমিল্লা টানা ১০ বার চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব অর্জন করে। এর মধ্যে জুলাই মাসে চ্যাম্পিয়ন হয়নি কুমিল্লা। আগস্ট থেকে মে মাস পর্যন্ত এ ১০ মাসে অনলাইনে ভ্যাট রিটার্ন দাখিলে চ্যাম্পিয়ন হয় তারা। জুন মাসের চূড়ান্ত ফলাফল এখনো আসেনি। তবে এবারও চ্যাম্পিয়ন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে কুমিল্লা ভ্যাট কমশিনারেট সূত্রে জানা যায়।
যেভাবে বারবার সফল কুমিল্লা
কুমিল্লা কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেট সূত্রে জানা যায়, ২০২০ সালের জুলাই মাসের মাঝামাঝি সময়ে কুমিল্লা কমিশনারেটের কমিশনার বেলাল হোসাইন চৌধুরী আসার পর থেকে এ পর্যন্ত ৪৭টি জুম মিটিংয়ের আয়োজন করেন তিনি। কমিশনারেটের আওতাভুক্ত ছয় জেলার দক্ষ অফিসারদের বাছাই করা হয়। তাদের রাজস্ব আদায়ের নিয়মকানুন সম্পর্কে আরও প্রশিক্ষিত করে তোলা হয়। পাশাপাশি ভীতি কাটিয়ে কীভাবে মানুষের মন জয় করা যায়, সে বিষয়েও প্রশিক্ষিত করা হয় তাদের। কর্মচারী পর্যায়ে না গিয়ে মালিকের সাথে সম্পর্ক স্থাপন করে রাজস্ব আদায়ে কৌশলী করে তোলা হয়। কিছু সরকারি স্থাপনা, ইটভাটা মালিক- যারা রাজস্ব ফাঁকি দিতো, তাদের চিহ্নিত করে রাজস্বের আওতায় নিয়ে আসা হয়। পাশাপাশি সাহায্য নেওয়া হয় স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের। খুব দ্রুতই এর ফল আসতে থাকে। পরের মাসেই চ্যাম্পিয়ন হয়ে যায় কুমিল্লা। এর আগে সর্বনিম্ন ১২-তম স্থানেও ছিল কুমিল্লা। সেখান থেকে উল্লম্ফন ঘটিয়ে এখনো পর্যন্ত টানা ১০ বার সেরার স্থানটি দখল করে রাখে তারা।
কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেট কুমিল্লার (সদর দপ্তর) সহকারী কমিশনার মোহাম্মদ ছালাউদ্দিন রিপন বলেন, "পর্যাপ্ত লোকবল ও গাড়ি না থাকা সত্ত্বেও সশরীরে গিয়ে বিভিন্ন স্থানে মনিটরিং জোরদার রাখে আমাদের টিম। এছাড়া প্রতিটি বিভাগে একাধিক টিম গঠন করা হয়। তাতেই সাফল্য ধরা দেয়"।
কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেট কুমিল্লার কমিশনার বেলাল হোসাইন চৌধুরী বলেন, "বারবার প্রথম! লক্ষ্যমাত্রার বেশি রাজস্ব আদায়ের জন্য আমাদের অনেক সাধনা করতে হয়েছে। নির্দিষ্ট পরিশ্রমের চেয়ে বেশি পরিশ্রম করতে হয়েছে আমাদের। কিছু কিছু বিষয়ের দিকে নজর দিলে অনায়াসেই রাজস্ব সরকারি কোষাগারে জমা হতো। যেমন, ভারতের সেভেন সিস্টার্সে অনেক কিছুর সঙ্কট রয়েছে। তেল, জ্বালানি, গার্মেন্টস পণ্য, ওষুধ ইত্যাদির। এছাড়া কুমিল্লার সাথে ভারতের দীর্ঘ সীমান্ত রয়েছে। এখানে একটি বন্দরও চালু আছে। কিন্তু কুমিল্লায় আশানুরূপ হারে ইন্ডাস্ট্রি গড়ে ওঠেনি। এক ইপিজেড ছাড়া তেমন কোনো বড় রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান নেই কুমিল্লায়। সময়ের চাহিদায় দ্রুততম সময়ের মধ্যে যদি কুমিল্লায় অনেক ইন্ডাস্ট্রি গড়ে তোলা যায়, শুধুমাত্র ভারতের এসব অনগ্রসর রাজ্যে রপ্তানি করেও বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন সম্ভব। এতে রাজস্ব আদায়ও বহুগুণ বৃদ্ধি পাবে। আমাদেরও আর বেগ পেতে হবে না"।