রেমিট্যান্স প্রবাহের গতি অব্যাহতভাবে কমছে
রেমিট্যান্স প্রবাহ অব্যাহত ভাবে কমছে। মহামারির সময় অর্থ বছরের শুরুতে যে বড় উলম্ফন দেখা গিয়েছিল, অক্টোবর থেকেই তা ধারাবাহিক ভাবে কমতে শুরু করেছে।
জানুয়ারিতে রেমিট্যান্স আয় দুই বিলিয়ন ডলারের নিচে চলে যায়। ফেব্রুয়ারিতে তা আরও কমেছে। তবে বিগত বছরের ফেব্রুয়ারির তুলনায় বেড়েছে ২২ দশমিক ৬১ শতাংশ।
মাস ভিত্তিক রেমিট্যান্সের উচ্চ গতি কমে আসলেও চলতি অর্থ বছরের প্রথম আট মাসে গেল অর্থ বছরের (২০১৯-২০) একই সময়ের তুলনায় রেমিট্যান্স প্রবাহ বেড়েছে ৩৩ শতাংশের বেশি। ২০১৯-২০ অর্থবছরের প্রথম আট মাসে এই প্রবৃদ্ধি ছিল ২০ শতাংশ।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে পিআরআই'র নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর দ্যা বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "কোভিডের কারণে হুন্ডির মাধ্যমগুলো বন্ধ থাকা ও সরকারের ২ শতাংশ প্রণোদনার জন্য বৈধ পথে রেমিট্যান্স আয় গেল বছরের আট মাসের তুলনায় বেড়েছে,"
আগামীতেও এই বৃদ্ধি অব্যাহত থাকবে উল্লেখ করে এর কারণ হিসেবে বলেন, "প্রবাসীদের অনেকে সঞ্চয়ের টাকা দেশে বিভিন্ন মাধ্যমে বিনিয়োগ করছেন। কারণ বাংলাদেশে ওই সব দেশ থেকে রিটার্ন অনেক ভালো।"
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, চলতি অর্থবছরের জুলাই-ডিসেম্বর সময়ে প্রবাসী বাংলাদেশিদের দেশে বিনিয়োগের পরিমাণ আগের অর্থ বছরের একই সময়ের তুলনায় প্রায় ২০ শতাংশ বেড়েছে।
এদিকে চলতি অর্থবছরের শুরুতে রেমিটেন্সের প্রবাহের যে উচ্চ হার ছিল সেটি কমে আসার পেছনে যে কয়েকটি কারণ ছিল তা এখন আর কাজ করছে না বলে উল্লেখ করেন আহসান এইচ মনসুর।
তিনি বলেন, "ওই সময় কোভিডের কারণে অনেক প্রবাসী তাদের সঞ্চয় নিয়ে দেশে চলে এসেছিলেন। অনেকে চাকরিচ্যুত হয়ে হাতে থাকা সব অর্থ নিয়ে দেশে এসেছেন,"
"আবার, বন্যা ও করোনার ফলে অনেক পরিবারগুলোর জন্য বিদেশে থাকা আত্মীয় স্বজনেরা আগের চেয়ে বেশি অর্থ পাঠিয়েছেন। এখন এই প্রবণতা কমে আসছে, যার প্রভাবে রেমিটেন্সের উচ্চ প্রবাহ কমছে।"
একই ধরনের মন্তব্য করেছেন সিপিডির সম্মানীয় ফেলো ড. মুস্তাফিজুর রহমান। তিনি দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "এসব কারণের পাশাপাশি রেমিট্যান্স প্রবাহের অবৈধ পথগুলো আগামীতে খুলে যাবে। তখন রেমিটেন্স প্রবাহ আরও কমবে। এখন বৈধ পথে রেমিট্যান্স বেশি আসায় উচ্চ প্রবাহ দেখা যাচ্ছে,"
পরিবারগুলোর ক্রয় ক্ষমতা বাড়ানোর ক্ষেত্রে রেমিট্যান্স ভূমিকা রাখছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, "এই ক্রয় ক্ষমতা অভ্যন্তরীণ চাহিদা বাড়াচ্ছে। যার ফলে অর্থনীতির ঘুরে দাঁড়ানো সহজ হচ্ছে। সার্বিক ভাবে সামষ্টিক অর্থনীতির স্থিতিশীলতায় ভূমিকা রাখছে রেমিট্যান্স।"
রেমিট্যান্স প্রবাহ বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বাড়াতে সরাসরি ভূমিকা রাখছে। ২৮ ফেব্রুয়ারি এর স্থিতি ৪৪ দশমিক ১২ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে।
গত ২৪ ফেব্রুয়ারি প্রথম বারের মত রিজার্ভ ৪৪ বিলিয়ন ডলারের মাইল ফলক স্পর্শ করে। রেমিট্যান্স আয় চলতি বছরেই ৫০ বিলিয়ন ডলারে চলে যাবে বলে আশা করছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।
রোববার কেন্দ্রীয় ব্যাংক প্রকাশিত রেমিট্যান্স সংক্রান্ত মাসিক প্রতিবেদনে বলা হয়, উচ্চ রিজার্ভ সামষ্টিক অর্থনীতির স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে ভূমিকা রাখছে।বিশেষ করে আট মাসের বেশি আমদানি ব্যয় মেটানোর সক্ষমতা তৈরি হওয়া এবং মুদ্রা বিনিময় হার স্থিতিশীল রাখার ক্ষেত্রে রিজার্ভের ভূমিকার কথা প্রতিবেদনে তুলে ধরা হয়।
রিজার্ভ বাড়ায় ডলারের মজুদ বৃদ্ধি পাচ্ছে। এতে ডলারের চাহিদা না বাড়ায় টাকা শক্তিশালী হওয়ার কথা থাকলেও বাজার থেকে ডলার কিনে টাকার মান স্থিতিশীল রাখছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
এই পরিস্থিতি বাজারে মুদ্রার যোগান বাড়িয়ে মূল্যস্ফীতি উসকে দেয়ার আশঙ্কা থাকলেও, কেন্দ্রীয় ব্যাংক মনে করছে কোভিডের কারণে মানুষের আয় কমে যাওয়া মূল্যস্ফীতি বাড়বে না।
তবে ড. মুস্তাফিজুর রহমান জানান, বাংলাদেশ ব্যাংক ডলার কিনে কৃত্রিমভাবে টাকার মান ধরে না রাখলে এটি যে কোন সময় বেড়ে যেতে পারে। টাকার মান বাড়লে রপ্তানির ক্ষেত্রে সুবিধা পাওয়া গেলেও আমদানি ব্যয় বেড়ে যাবে।