যশোরের সাতমাইল সবজি হাট: দাম পেয়ে খুশি সবজি চাষীরা
দেশের অন্যতম বৃহৎ সবজি বাজার যশোরের সাতমাইল-বারীনগর। এখানে বছরে পাঁচশত কোটি টাকার সবজি কেনা-বেচা হয়।
ওই অঞ্চলের চাষীরা ধান-পাটের বদলে সারা বছর সবজি আবাদ করে থাকেন। বর্তমানে সবজির ভরা মৌসুমে পাইকাররা যে দাম দিচ্ছেন, তাতে খুশি এলাকার চাষীরা। তবে শহরের বড় বাজারে সবজির এই দামে খুব একটা খুশি নন ক্রেতারা। তারা বলছেন, গত ১০ বছরের সবজির দাম এত বেশি হয়নি।
যশোর শহর থেকে ১০ কিলোমিটার দূরে সাতমাইল-বারিনগর সবজি হাট। বর্তমানে প্রতিদিন বসে হাটটি। বাজারও বশে চাঙা। পাইকাররা দাম দিচ্ছেন আশানুরূপ। ফলে ক্ষেত থেকে সবজি তুলে তা বাজারজাত করতে ব্যস্ত সময় পার করছেন বারীনগর, চুড়ামনকাটি, হৈবতপুর, আব্দুলপুরসহ আশপাশের এলাকার কৃষকরা।
রোববার (২৪ নভেম্বর) হাটটি ঘুরে দেখা গেছে, ৭ মণ ফুলকপি নিয়ে আসেন এক কৃষক, বিক্রি করেছেন প্রতি কেজি ৬০ টাকা দরে। একই গ্রামের জাহাঙ্গীর আলম শিম এনেছিলেন ৫ মণ। বিক্রি করেছেন ৩৫ টাকা কেজিতে।
বড়হৈবতপুর গ্রামের চাষী আলাউদ্দিন মন্ডল এবার দেড় বিঘা জমিতে শিম, এক বিঘা জমিতে বেগুন আর ১৫ কাঠা জমিতে পটল চাষ করেছেন। বাজারে ৯০ কেজি শিম এনেছেন। তিনি জানান, এদিন বিক্রি করেছেন ৩৪ টাকা দরে।
চট্টগ্রামের পাইকার নূরে আলম জানান, বাজারে সবজির মূল্য বেশি। তিনি দীর্ঘদিন বারীনগর বাজার থেকে সবজি কিনে ফেনী ও চট্টগ্রামের বিভিন্ন বাজারে সরবরাহ করেন। মাঝে বর্ষার কারণে সবজির উৎপাদন কমে গেছে। এখন বাজারে মূল্য অনেক বেশি। এই সময়ে ফুলকপি প্রতি কেজি ১০ থেকে ১২ টাকা হওয়ার কথা। কিন্তু বিক্রি হচ্ছে ৫৫ টাকায়। ১৮-২০ টাকার ঝাঁল (কাঁচা মরিচ) বিক্রি হচ্ছে ২৮-৩০ টাকায়।
বেপারি খাইরুল ইসলাম জানান, বর্তমানে সবজির মূল্য বেশ চড়া। বারীনগর বাজারে মুলা ৩০ টাকা কেজি, বেগুন ৩২ টাকা, লাউ প্রতিটি ৩০ টাকা, পটল ৩২ টাকা, শিম ৩৫ টাকা, উচ্ছে ৫০ টাকা, ফুলকপি ৫৫ থেকে ৬০ টাকা, বাঁধাকপি ২০ টাকা পিস, মানকচু ২০-৩০ টাকা কেজি, মেটেআলু ৬০ টাকা কেজিতে বিক্রি হয়েছে।
চুড়ামনকাটি ইউনিয়নের আব্দুলপুর গ্রামের নাজমুল ইসলাম জানান, এবার তিনি ৫ বিঘা জমিতে বাঁধাকপির চাষ করেছেন। গতকাল সেগুলো ২২ টাকা পিস হিসেবে বিক্রি করেছেন। এতে তিনি লাভবান হবেন। তার দাবি, সবজির রাজ্য হিসেবে পরিচিত হৈবতপুর ও চুড়ামনকাটি এলাকায় একটি হিমাগার থাকলে সবজি আবাদ করে অনেক লাভবান হতেন এখানকার চাষীরা।
যশোর আঞ্চলিক কৃষি অফিস সূত্র জানায়, এবার জেলায় ২০ হাজার হেক্টর জমিতে সবজি চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ হয়। এবারও সবচেয়ে বেশি পরিমাণে চাষ হয়েছে সদর উপজেলার চুড়ামনকাটি, হৈবতপুর ও কাশিমপুর ইউনিয়নে। হৈবতপুর ইউনিয়নে ১ হাজার ৬৩০ হেক্টর, চুড়ামনকাটি ইউনিয়নে ৮২৮ হেক্টর ও কাশিমপুর ইউনিয়নে ৫৫৩ হেক্টর জমিতে শীতকালীন সবজির চাষ হয়েছে।
সাতমাইল সবজি হাটের ইজারাদার শাহজাহান জানান, এখানে প্রতি হাটে কমপক্ষে এক থেকে দেড় কোটি টাকার সবজি পাইকারি বিক্রি হয়ে থাকে। দেশের বিভিন্ন স্থানের পাইকাররা আমাদের হাট থেকে সবজি ট্রাকযোগে ঢাকা, খুলনা, চট্টগ্রাম, ফরিদপুর, বরিশাল, রাজশাহী, সিলেটসহ বিভিন্ন অঞ্চলে নিয়ে যায়।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর যশোরের উপ-পরিচালক এমদাদ হোসেন বলেন, জেলায় এবার ২০ হাজার হেক্টর জমিতে সবজি চাষ হচ্ছে। আগাম সবজি চাষে প্রতিকূল পরিবেশের বিষয়টি কৃষকের মাথায় রাখতে হয়। সে ক্ষেত্রে অবশ্য কৃষক তার উৎপাদিত পণ্যের জন্য ভালো দাম পায়, যেমন এখন পাচ্ছে। আর শীতকালীন সবজি চাষে এখন অনুকূল পরিবেশ। যশোরে সারা বছর সবজি আবাদ হয়ে থাকে।
এদিকে যশোর শহরের বড় বাজারে সবজির বাজার চড়া। শংকর কুমার নামে এক আড়তদার জানান, ফুলকপি প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৭০ টাকায়। কাঁচামরিচ ৩০ টাকা, মুলা ৫০ টাকা, বেগুন ৬০ টাকা, লাউ প্রতি পিস ৫০ টাকা, পটল ৫৫ টাকা, শিম ৬০ টাকা, করল্লা ৮০ টাকা, বাঁধাকপি ৩৫ টাকা পিস, মানকচু ৪৫ টাকা কেজি, মেটেআলু ১০০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে।
বড় বাজারে সবজি কিনতে আসা ক্রেতা শহরের বেজপাড়া এলাকার মুনির আহমেদ জানান, এ বছর সবজির বাজার অনেক চড়া, যা গত ১০ বছরেও দেখিনি। এখন সবজি উৎপাদনের ভরা মৌসুম। অথচ সবজির গায়ে আগুন। আগে ২০০ টাকার সবজি কিনলে এক সপ্তাহ চলত, এখন সেখানে ৫০০ টাকা লাগছে।