যমুনা ‘না’ বলে দেওয়ার পর এখন বিদেশি বিনিয়োগ খুঁজছেন ইভ্যালির সিইও
ইভ্যালিতে বিনিয়োগ করবে না বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছে শিল্পগোষ্ঠী যমুনা গ্রুপ। যমুনা গ্রুপের এ ঘোষণার কয়েক ঘণ্টা পরই ই-কমার্স প্ল্যাটফর্মটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ রাসেল জানিয়েছেন যে তারা বিদেশী বিনিয়োগ খুঁজছেন।
মোহাম্মদ রাসেল মঙ্গলবার দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, 'আমি যমুনা গ্রুপের সিদ্ধান্তের বিষয়ে কোনো মন্তব্য করব না। আমরা প্রতিনিয়ত নতুন বিনিয়োগ টানার চেষ্টা করে যাচ্ছি।'
তিনি আরও বলেন, 'ইভ্যালির নিয়মিত ব্যবসায়িক লেনদেন আছে বলে বিনিয়োগ পাব বলে আশা করছি আমরা। আগেও আমরা বিভিন্ন স্থানীয় কোম্পানির সাথে বিনিয়োগের জন্য কথা বলেছি এবং চেষ্টা চালিয়ে যাব।'
রাসেল আরও বলেন, 'এখন আমরা বিদেশি বিনিয়োগ পাওয়ার চেষ্টা করছি।'
যমুনা গ্রুপের পরিচালক (মার্কেটিং, সেলস অ্যান্ড অপারেশনস) মোহাম্মদ আলমগীর আলম এক ফেসবুক পোস্টে বলেন, ইভ্যালির কাছ থেকে প্রস্তাব পাওয়ার পর প্রাথমিকভাবে বিনিয়োগ করতে আগ্রহী ছিল যমুনা গ্রুপ। কিন্তু 'পরবর্তীতে ইভ্যালির দায়-দেনা, ব্যবসায়িক কৌশল, বিক্রয় ও বিপণন কৌশল গভীরভাবে পর্যালোচনা ও বিচার বিশ্লেষণ করে যমুনা গ্রুপ বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করে' নেয়।
গত ২৬ আগস্ট যমুনা গ্রুপের গ্রুপ পরিচালক মনিকা নাজনীন ইসলাম দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, 'যমুনা গ্রুপ এখনও বিতর্কিত ই-কমার্স প্ল্যাটফর্ম ইভ্যালিতে বিনিয়োগের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়নি।'
তিনি বলেন, 'আমরা এর আগে ইভ্যালির সাথে একটা সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করেছিলাম। চুক্তির ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য আমাদের হাতে এখনও খানিকটা সময় আছে। আমাদের নিরীক্ষা ও হিসাব বিভাগ ইভ্যালির আর্থিক বিবরণী ও সংশ্লিষ্ট অন্যান্য নথিপত্র খতিয়ে দেখছে। অডিট শেষ হলে পরে আমরা আনুষ্ঠানিক বিবৃতি দেব।'
এর আগে গত ২৮ জুলাই এক ফেসবুক পোস্টে ইভ্যালির সিইও মোহাম্মদ রাসেল ঘোষণা করেছিলেন যে যমুনা গ্রুপ ই-কমার্স প্ল্যাটফর্মটিতে ১ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করতে যাচ্ছে। উল্লেখ্য, প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে গ্রাহকদের কাছ থেকে আগাম নেওয়া এবং মার্চেন্টদের কাছে বকেয়া মিলিয়ে ৩৩৮ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ তদন্তাধীন রয়েছে।
পরে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের এক কারণ দর্শানোর নোটিশের জবাবে ইভ্যালি জানায় যে গ্রাহক ও মার্চেন্টদের কাছে তাদের দেনার পরিমাণ যথাক্রমে ১১১ কোটি টাকা ও ২০৬ কোটি টাকা।
সমস্ত সম্পদ বিক্রি করলে প্রতিষ্ঠানটি তার দেনার ২২ শতাংশ পরিশোধ করতে পারবে। বাকি ৪২২ কোটি টাকার বেশি ঘাটতি হিসেবে দাঁড়াবে। ২৬ আগস্ট বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে জমা দেওয়া কোম্পানির ব্যালেন্স শিটে ইভ্যালি তাদের ব্র্যান্ড ভ্যালু দেখিয়েছে ৪২২.৬২ কোটি টাকা।
কিন্তু বিশেষজ্ঞরা বলছেন ভিন্ন কথা।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মিজানুর রহমান দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, ইভ্যালির প্রকৃত ব্র্যান্ড মূল্য ঋণাত্মক। কারণ কোম্পানিটি যে ব্যবসা মডেল অনুসরণ করছিল, তা টেকসই নয়।
তাছাড়া মাত্র দুই বছরে ইভ্যালি যে বিপুল পরিমাণে দেনা করেছে, তাতে প্রতিষ্ঠানটির পক্ষে ভবিষ্যতে কোনো সম্পদ তৈরি করা সম্ভব নয়।
ইভ্যালি তাদের ওয়েবসাইটে বিভিন্ন পণ্যে বিশাল ছাড়ের প্রলোভন ও ৭-৪৫ দিনের মধ্যে ডেলিভারির প্রতিশ্রুতি দিয়ে গ্রাহকদের কাছ থেকে অগ্রিম অর্থ সংগ্রহ করেছে। যদিও ক্রেতারা এখনও তাদের অর্ডার করা জিনিস পাননি।
এছাড়া ইভ্যালির ব্যাংক অ্যাকাউন্টে পর্যাপ্ত তহবিল না থাকায় গ্রাহকদের দেওয়া রিফান্ড চেকও বাউন্স হয়েছে।
এদিকে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ইভ্যালির বিষয়ে সংশ্লিষ্ট নথি চেয়ে বেশ কয়েকটি সরকারি সংস্থাকে চিঠি দিয়েছে।
এছাড়াও ঢাকার একটি আদালত ইভ্যালির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ রাসেল ও প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান শামীমা নাসরিনের ওপর ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছেন।