মহামারি সত্ত্বেও স্বাস্থ্য খাতে এডিপির সীমিত বাস্তবায়ন
দেশে চলমান মহামারির মধ্যেও অর্থবছরের ১০ প্রথম মাসে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) বরাদ্দের ৭৫ শতাংশ অর্থও ব্যয় করতে পারেনি স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ। একইসময়ে বরাদ্দের ৫০ শতাংশ অর্থ ব্যয় করতে পারেনি স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগ।
এ বাস্তবতায় বাস্তবায়ন সক্ষমতার অভাবে কোভিড পরিস্থিতিতেও আগামী অর্থবছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) স্বাস্থ্য খাতের বরাদ্দ বাড়েনি। মোটি এডিপির মাত্র ৭.৬৮ শতাংশ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে এ খাতে। চলতি অর্থবছরের সংশোধিত এডিপিতে স্বাস্থ্য খাতের বরাদ্দ ছিল ৭.৫৫ শতাংশ।
দারিদ্র্য বিমোচন, ডিজিপি প্রবৃদ্ধি ত্বরান্বিতকরণ এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে পরিবহন ও যোগাযোগ খাতের প্রকল্পগুলোকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে আগামী ২০২১-২২ অর্থবছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) অনুমোদন দিয়েছে সরকার। মোট এডিপির এক চতুর্থাংশের বেশি বরাদ্দ পেয়েছে এ খাত।
আজ মঙ্গলবার (১৮ মে) প্রধানমন্ত্রীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের সভায় (একনেক) নতুন এ এডিপি অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণভবন থেকে এবং অন্যান্য মন্ত্রী ও সচিবরা শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষ থেকে সভায় অংশ নেন।
সভা শেষে পরিকল্পনা মন্ত্রী এম এ মান্নান অনুমোদিত এডিপির বিষয়ে সাংবাদিকদের অবহিত করেন।
অনুমোদন পাওয়া নতুন এডিপির আকার ২,২৫,৩২৪ কোটি টাকা। এর মধ্যে সরকারি তহবিল থেকে যোগান দেওয়া হবে ১,৩৭,২৯৯.৯১ কোটি টাকা এবং বৈদেশিক সহায়তা থেকে আসবে ৮৮০২৪.২৩ কোটি টাকা। নতুন এডিপি চলতি অর্থবছরের মূল এডিপির তুলনায় ৯.৮৪ শতাংশ এবং সংশোধিত এডিপির তুলনায় ১৪ শতাংশ বেশি।
আগামী অর্থবছরে এডিপি'তে স্বায়ত্তশাসিত সংস্থা ও কর্পোরেশনের নিজস্ব অর্থায়নে ১১,৪৬৯ কোটি টাকার প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হবে। স্বায়ত্তশাসিত সংস্থা ও কর্পোরেশনের প্রকল্পসহ এডিপির আকার হচ্ছে ২,৩৬,৭৯৩ কোটি টাকা।
পরিকল্পনামন্ত্রী জানান, জনগণের সঙ্গে সম্পৃক্ত প্রকল্পগুলোকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব এডিপি বাস্তবায়নের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কোভিডের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত প্রকল্পগুলোকেও বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।
এছাড়া, স্বাস্থ্য, কৃষিখাতসহ বিভিন্ন খাতে গবেষণার বরাদ্দ বিষয়েও গুরুত্বারোপ করছেন প্রধানমন্ত্রী। এ বিষয়ে পরিকল্পনামন্ত্রী জানান, "গবেষণায় শুধু পর্যাপ্ত বরাদ্দ রাখলেই হবে না, সে বরাদ্দ ব্যবহারও করতে হবে। এজন্য গবেষকও থাকতে হবে।"
এডিপিতে সর্বোচ্চ বরাদ্দ পাওয়া খাতসমূহ:
এবারের এডিপিতে সর্বোচ্চ ৬১,৭২১ কোটি টাকা বা ২৭.৩৯ শতাংশ বরাদ্দ পেয়েছে পরিবহন ও যোগাযোগ সেক্টর।
রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের কারণে এবার দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বরাদ্দ পেয়েছে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাত।
রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প এতদিন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি খাতে থাকলেও, এবারই প্রথমবারের মতো বিদ্যুত ও জ্বালানি খাতে যোগ হয়েছে। অবশ্য, আগের মতোই বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের অধীনে পরমাণু শক্তি কমিশনই এ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে। এ খাতে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৪৫৮৬৭.৮৪ কোটি টাকা, যা মোট বরাদ্দের ২০.৩৬ শতাংশ।
এছাড়া, গৃহায়ন ও সামাজিক সুবিধাবলী ২৩,৭৪৭ কোটি টাকা বা ১০.৫৪ শতাংশ, শিক্ষা খাতে ২৩,১৭৮ কোটি টাকা বা ১০.২৯ শতাংশ, স্বাস্থ্য খাতে ১৭,৩০৭ কোটি টাকা বা ৭.৬৭ শতাংশ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
নতুন এডিপিতে ১৫টি খাতের মধ্যে সবচেয়ে কম বরাদ্দ পেয়েছে সামাজিক সুরক্ষা খাত। এখাতে এডিপির ০.৭৩ শতাংশ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
সর্বোচ্চ বরাদ্দ পাওয়া মন্ত্রণালয় বা বিভাগ:
মন্ত্রণালয় ও বিভাগ হিসাবে এবারের এডিপিতে সর্বোচ্চ বরাদ্দ পেয়েছে স্থানীয় সরকার বিভাগ। এবিভাগ বরাদ্দ পেয়েছে ৩৩ হাজার ৮৯৬ কোটি টাকা। এরপর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ২৮ হাজার ৪২ কোটি টাকা বরাদ্দ পেয়েছে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ ।
এছাড়া, বিদ্যুৎ বিভাগ ২৫,৩৪৯ কোটি টাকা, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় ২০,৬৩৪ কোটি টাকা, রেলপথ মন্ত্রণালয় ১৩,৫৫৮ কোটি টাকা, স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ ১৩ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ পেয়েছে।
সর্বোচ্চ বরাদ্দ পাওয়া প্রকল্প:
একক প্রকল্প হিসেবে সর্বোচ্চ বরাদ্দ পেয়েছে রূপপুর পারমাণবিক প্রকল্প। এ প্রকল্পে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ১৮৪২৬ কোটি টাকা।
দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বরাদ্দও পেয়েছে বিদ্যুৎ খাতের আরেকটি প্রকল্প- মাতারবাড়ি বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্প। এখানে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৬,১৬২ কোটি টাকা। শিক্ষা খাতের চতুর্থ প্রাথমিক শিক্ষা কর্মসূচি ৫,০৫৪ কোটি টাকা বা তৃতীয় সর্বোচ্চ বরাদ্দ পেয়েছে।
এরপর, পর্যায়ক্রমে সর্বোচ্চ বরাদ্দ পেয়েছে, মেট্রোরেল (এমআরটি-৬), পদ্মা রেল সংযোগ, বঙ্গবন্ধু রেল সেতু, পদ্মা সেতু, ঢাকা-আশুলিয়া উড়াল সড়ক।
এডিপিতে প্রকল্প সংখ্যা:
১,৪২৬টি প্রকল্প বরাদ্দসহ এডিপিতে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। এরমধ্যে, বিনিয়োগ প্রকল্প ১,৩০৮টি এবং কারিগরি প্রকল্প রয়েছে ১১৮টি। এছাড়া বরাদ্দ পেয়েছে স্বায়ত্বশাসিত সংস্থা বা কর্রোরেশনের নিজস্ব অর্থায়নের ৮৯ প্রকল্প।
বরাদ্দহীন অননুমোদিত নতুন প্রকল্প:
আগামী এডিপিতে অননুমোদিত প্রকল্প সংখ্যা ৫৯৬টি। এসব প্রকল্প পর্যায়ক্রমে অনুমোদন দেওয়া হবে। তবে সরকারি তহবিলের অর্থায়নে ১,২৯১টি প্রকল্প অননুমোদিত প্রকল্প তালিকায় অন্তভুর্তির জন্য প্রস্তাব করেছিল বিভিন্ন মন্ত্রণালয় বিভাগ। এছাড়া, বৈদেশিক সহায়তা পাওয়ার সুবিধার্থে অননুমোদিত প্রকল্প তালিকায় রাখা হয়েছে আরও ১৪১ কোটি টাকা।