মহামারিতেও আখাউড়া স্থলবন্দর দিয়ে বেড়েছে রপ্তানি আয়

গেল বছর করোনাভাইরাসের প্রকোপ শুরুর পর দুই দফায় ২০ দিন বন্ধ থাকে দেশের অন্যতম বৃহৎ ও শতভাগ রপ্তানিমুখী ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া স্থলবন্দরের বাণিজ্যিক কার্যক্রম। এরপর মহামারির নেতিবাচক প্রভাবে ভারতে রপ্তানি হওয়া পণ্যের সংখ্যা কমতে থাকে। কেবল হিমায়িত মাছ, রড-সিমেন্ট আর ভোজ্য তেলের মতো হাতে গোনা কয়েকটি পণ্য দিয়ে সচল থাকে দুই দেশের পণ্য আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য। তবে পণ্যের সংখ্যা কমলেও ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে রপ্তানির পরিমাণ।
২০২০-২১ অর্থবছরে আখাউড়া স্থলবন্দর দিয়ে ভারতে রপ্তানি হয়েছে ৬৯৭ কোটি ৭০ লাখ ১৭৫৮ টাকার পণ্য। যা এর আগের অর্থবছরের তুলনায় ১৫৫ কোটি টাকারও বেশি। মূলত বেশি পরিমাণে মাছ রপ্তানি হওয়ার ফলে রপ্তানি আয় বেড়েছে। ২০২০-২১ অর্থবছরে ভারতে রপ্তানি হওয়া পণ্যের পরিমাণ ছিল ১৩ লাখ ২৩ হাজার ৯২৫ টন।
আখাউড়া স্থলবন্দরের মাছ রপ্তানিকারক অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক ফারুক মিয়া জানান, স্থলবন্দর দিয়ে পাঙ্গাস, রুই, কাতল, মৃগেল, সিলভার কার্প, কার্ফু ও পাবদাসহ বিভিন্ন প্রজাতির হিমায়িত মাছ রপ্তানি হয় ভারতে। ২০২০-২০২১ অর্থবছরে প্রতিদিন গড়ে ৮০ থেকে ৯০ টন মাছ রপ্তানি হয়েছে। এর মধ্যে গড়ে ৩০ টন ছিল পাঙ্গাস মাছ।
সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, ১৯৯৫ সালে আখাউড়া স্থল শুল্ক স্টেশন দিয়ে ভারতে পণ্য রপ্তানি কার্যক্রম শুরু হয়। পরবর্তীতে ২০১০ সালে পূর্ণাঙ্গ বন্দর হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করে আখাউড়া স্থলবন্দর। এরপর থেকে প্রতিদিন কয়েক কোটি টাকার হিমায়িত মাছ, রড, সিমেন্ট, পাথর, প্লাস্টিক, তুলা, ভোজ্য তেল, কয়লা ও বিভিন্ন খাদ্যসামগ্রীসহ অর্ধশতাধিক পণ্য রপ্তানি হতে থাকে ভারতে। এসব পণ্য ত্রিপুরা থেকে সরবরাহ করা হয় দেশটির উত্তর-পূর্ব রাজ্যগুলোতে।
তবে উত্তর-পূর্ব রাজ্যগুলোর মধ্যে সড়ক ও রেলপথে যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো হওয়ার ফলে বছর চারেক ধরে পণ্য আমদানি কমিয়ে দেন ভারতীয় ব্যবসায়ীরা। অবশ্য কমিয়ে দেওয়ার পরও প্রতিদিন গড়ে ২-৩ লাখ মার্কিন ডলার মূল্যের ১৫-২০ ধরনের পণ্য রপ্তানি হতো। কিন্তু করোনাভাইরাসের কারণে বন্দর দিয়ে রপ্তানিকৃত পণ্যের সংখ্যা আরও কমে যায়।
করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে প্রথম দফায় গত বছরের ২৪ মার্চ থেকে ৩ এপ্রিল এবং দ্বিতীয় দফায় ৭ জুন থেকে ১৫ জুন পর্যন্ত পণ্য আমদানি বন্ধ রাখেন ভারতীয় ব্যবসায়ীরা। পরবর্তীতে ভারতজুড়ে চলা লকডাউনের কারণে অন্য রাজ্য থেকে পণ্য না আসায় বাধ্য হয়ে আখাউড়া স্থলবন্দর দিয়ে মাছ, ভোজ্য তেল, রড, সিমেন্ট, তুলা ও কিছু খাদ্যসামগ্রী আমদানি শুরু করেন সেখানকার ব্যবসায়ীরা। এতে করে প্রাণ ফিরে পায় আখাউড়া স্থলবন্দর।
আখাউড়া স্থল শুল্ক স্টেশন থেকে পাওয়া তথ্যানুযায়ী, ২০২০-২০২১ অর্থবছরে আখাউড়া স্থলবন্দর দিয়ে ভারতে ৬৯৭ কোটি ৭০ লাখ ১৭৫৮ হাজার টাকার পণ্য রপ্তানি হয়েছে। আর আগের ২০১৯-২০২০ অর্থবছরে রপ্তানি হয়েছিল পরিমাণ ছিল ৫৪২ কোটি ১৩ লাখ ২৯ হাজার ৯৩০ টাকার পণ্য।
ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে চলমান লকডাউনের কারণে উত্তর-পূর্ব রাজ্যগুলোর মধ্যে অভ্যন্তরীন যোগাযোগ ব্যবস্থা বন্ধ থাকায় ত্রিপুরা ও এর আশেপাশের রাজ্যগুলোতে বাংলাদেশের নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য সামগ্রীর চাহিদা বেড়েছে। বিশেষ করে মাছের চাহিদা বেড়েছে কয়েকগুণ। ফলশ্রুতিতে রপ্তানি আয় বেড়েছে।
তবে রপ্তানি আয় বাড়লেও আখাউড়া স্থলবন্দর দিয়ে ভারত থেকে পণ্য আমদানির পরিমাণ আরও কমেছে। ২০২০-২১ অর্থবছরে ভারত থেকে ১ কোটি ৯ লাখ ৯২ হাজার ২১৮ টাকার শুটকি ও আদা আমদানি হয়েছে। এ থেকে সরকার রাজস্ব পেয়েছে ৩২ লাখ ৬৮ হাজার ১৯৮ টাকা। আর ২০১৯-২০ অর্থবছরে আমদানি হয়েছিল ১ কোটি ১৭ লাখ ৪৬৩৯ টাকার শুটকি। ওই অর্থবছরে রাজস্ব আয় হয় ৪০ লাখ ৪৯ হাজার ৮০৫ টাকা।
আখাউড়া স্থল শুল্ক স্টেশনের রাজস্ব কর্মকর্তা মোহাম্মদ আলী জানান, ২০১৯-২০ অর্থবছরের তুলনায় ২০২০-২১ অর্থবছরে রপ্তানি আয় বেড়েছে। কিন্তু টাকার পরিমাণ বাড়লেও পণ্যের সংখ্যা ছিল কম। মূলত বেশি পরিমাণ মাছ রপ্তানির ফলে টাকার পরিমাণ বেড়েছে। তবে কী পরিমাণ মাছ রপ্তানি হয়েছে, আলাদা করে সেটির হিসেব করা হয় নি।
আখাউড়া স্থলবন্দরের আমদানি-রপ্তানিকারক অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, "করোনার ভয়াবহতার কারণে ভারতের বিভিন্ন রাজ্যের অভ্যন্তরীণ যোগাযোগ ব্যবস্থা বন্ধ রয়েছে। সেজন্য ত্রিপুরা ও আশপাশের রাজ্যগুলোতে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের চাহিদা মেটানোর জন্য আখাউড়া স্থলবন্দর দিয়ে পণ্য আমদানি বাড়িয়ে দেন সেখানকার ব্যবসায়ীরা। কারণ পণ্য পরিবহনে নিষেধাজ্ঞা না থাকলেও মাছসহ নিত্য প্রয়োজনীয় বিভিন্ন পণ্য ত্রিপুরাতে আসছিল না। ২০২০-২১ অর্থবছরে সবচেয়ে বেশি রপ্তানি হয়েছে হিমায়িত মাছ। সেজন্য রপ্তানি আয় বেড়েছে"।