মর্টগেজ ওভারভ্যালুয়েশনের ফাঁদে ব্যাংক
গাজীপুরের টঙ্গী এলাকার জ্যাকার্ড নিটেক্স লিমিটেড ২০১০ সালে জনতা ব্যাংক টঙ্গী শাখা থেকে ৮৫ কোটি টাকার ঋণ নেয়। ওই ঋণের বিপরীতে টঙ্গীর নিশাতনগর এলাকায় ১১৩ কাঠা জমি ব্যাংকের কাছে বন্ধক রাখে প্রতিষ্ঠানটি।
প্রতি কাঠা জমির এক কোটি টাকা বাজারদর দেখানো হয়। এই দাম দেখিয়ে বন্ধক দলিল সম্পাদন করা হয়। একইসাথে ঋণ পরিশোধে ব্যর্থ হলে ওই সম্পত্তি যাতে ব্যাংক বিক্রয় করতে পারে, সে জন্য পাওয়ার অব এটর্নি নেওয়া হয় প্রতিষ্ঠানটির কাছ থেকে।
ঋণ পরিশোধ না করায় ২০১৯ সালে জ্যাকার্ড নিটেক্স লিমিটেডের এর কাছে জনতা ব্যাংকের সুদে-আসলে ঋণের পরিমাণ দাঁড়ায় ১৮৩ কোটি টাকা। ওই বছরই খেলাপী ঘোষণা করে ক্রেডিট ইনফরমেশন ব্যুরোর (সিআইবি) শীর্ষ খেলাপীদের তালিকায় নাম ওঠে প্রতিষ্ঠানটির।
অর্থঋণ আদালত আইনের ১২(৩) ধারা অনুযায়ী জনতা ব্যাংক টঙ্গীর নিশাতনগর এলাকায় জ্যাকার্ড নিটেক্স লিমিটেডের বন্ধক রাখা ১১৩ কাঠা জমি নিলামে তোলে। তিনবার নিলামের নোটিশ দেওয়া হলেও ওই নিলামে কেউ অংশ নেয়নি।
জনতা ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ের একজন আইন কর্মকর্তা দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, ওই জমির আসল বাজারদর প্রতি কাঠা ৩০ লাখ টাকা। সে হিসেবে ওই বন্ধকি সম্পত্তির মোট মূল্য প্রায় ৩৩ কোটি টাকা। কিন্তু ব্যাংকের পাওনা প্রায় ১৮৩ কোটি টাকা।
তিনি বলেন, ফলে ওই জমি নিলামে তুলে বিক্রয় সম্ভব হয়নি। এরপর ২০১৯ সালের নভেম্বর মাসে প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপক পরিচালক (এমডি) এনায়েত উদ্দিনের বিরুদ্ধে গাজীপুর অর্থঋণ আদালতে মামলা করে জনতা ব্যাংক। মামলাটির বিচার এখনো শুরু হয়নি।
শুধু জনতা ব্যাংকের কাছে মর্টগেজ ওভারভ্যালুয়েশন দেখিয়ে ঋণ নেয়নি জ্যাকার্ড নিটেক্স লিমিটেড। ২০০৯ সালে এবি ব্যাংক, ২০১১ সালে ইসলামী ব্যাংক, ২০১০ সালে সিটি ব্যাংক ও ২০১২ সালে অগ্রণী ব্যাংকের কাছ থেকে আরও ১৮০ কোটি টাকা ঋণ নিয়েছে।
সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের আইন কর্মকর্তারা টিবিএকে বলেন, প্রতিটি ব্যাংক থেকে ঋণ নেওয়ার জন্য বন্ধকের ওভারভ্যালুয়েশন দেখানো হয়েছে। পাঁচটি ব্যাংকের কাছে ৫৭৭ কোটি টাকার খেলাপি হয়েছে জ্যাকার্ড নিটেক্স লিমিটেড।
এবি ব্যাংক, ইসলামী ব্যাংক, সিটি ব্যাংক ও অগ্রণী ব্যাংক তাদের পাওনা আদায়ের জন্য বিভিন্ন সময় বন্ধক রাখা সম্পত্তি নিলামে বিক্রয়ের চেষ্টা করলেও তা পারেনি। ফলে টাকা আদায়ে ঢাকার অর্থঋণ আদালতে মামলা করেছে এই চারটি ব্যাংক।
কোম্পানী ও ব্যাংক আইন বিশেষজ্ঞ ব্যারিস্টার তানজীব-উল আলম দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, সিঅইবির তালিকাভুক্ত শীর্ষ খেলাপিদের বিরুদ্ধে আদালতে দায়ের হওয়া মামলাগুলো পর্যালোচনা করে দেখা যাবে, তাদের বেশীরভাগই ঋণ নেওয়ার সময় যে স্থাবর সম্পত্তি বন্ধক রেখেছে তার ওভারভ্যালুয়েশন করা হয়েছে।
তিনি বলেন, এসব প্রভাবশালী ঋণগ্রহীতা ও খেলাপিদের সাথে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকগুলোর প্রভাবশালী কেউ না কেউ জড়িত। ব্যাংকের ওই প্রভাবশালী ব্যক্তি বা কর্মকর্তারা নিজেরা অসৎভাবে লাভবান হয়ে এসব ঋণ অনুমোদনের ব্যবস্থা করে থাকে বলে অভিযোগ রয়েছে। এই অভিযোগের অনেক প্রমানও রয়েছে।
বন্ধকি সম্পত্তি যাচাইয়ে মানা হয় না আইন
ব্যাংক কোম্পানী আইন বিশেষজ্ঞ ও সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী শাহ মোহাম্মদ আহসানুর রহমান টিবিএসকে বলেন, প্রচলিত আইন ও বিধি অনুযায়ী কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান যে পরিমাণ স্থাবর সম্পত্তি বন্ধক রাখবে, তার বিপরীতে সর্বোচ্চ ৭০ শতাংশ ঋণ দিতে পারবে ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান। আর কোন কোম্পানী বা কারখানা ঋণ পাবে তার মূলধনের সর্বোচ্চ ২৫ শতাংশ পরিমাণ।
তিনি বলেন, এছাড়াও ঋণ অনুমোদনের আগে বন্ধক রাখার জন্য ব্যাংকের পক্ষ থেকে সম্পত্তি পরিদর্শন করে একটি প্রতিবেদন দিতে হয়। মূলত সেখানেই একটা বড় কারচুপি হয়।
তিনি আরো বলেন, ঋণ আবেদনের আগে একজন গ্রহীতাকে বন্ধক রাখার জন্য ওই সম্পত্তির মালিকানার ধারাবাহিকতার দলিলাদি, বন্ধক দাতার নামে নামজারি খতিয়ান, জমির সিএস, আরএস, ডিসিআর হালনাগাদ, খাজনা পরিশোধের রশিদ জমা দিতে হয়।
ব্যাংকের আরোও বড় দায়িত্ব হলো সংশ্লিষ্ট এলাকার সম্পত্তির সরকারি মূল তালিকা অনুসরণ করে জমির দাম নির্ধারন করা। এছাড়াও ওই সম্পত্তি অন্য কোনো ব্যাংকের কাছে বন্ধক রাখা আছে কিনা, ব্যাংক তার আইনজীবীকে দিয়ে সেটিও যাচাই করবে। চূড়ান্ত পর্যায়ে গিয়ে ব্যাংক ইঞ্জিনিয়ার বা সার্ভেয়ার দিয়ে ওই সম্পত্তির 'ভ্যালুয়েশন' নির্ধারণ করবে।
এরপর সম্পত্তি হস্তান্তর আইন, ১৮৮২ এর ৫৮ (a) ধারা অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে ব্যাংকের নামে একটি বন্ধক দলিল নিবন্ধন করবে। দলিল সম্পন্ন হওয়ার পর ওই সম্পত্তি বিক্রয়ের ক্ষমতা পেতে ব্যাংক ঋণ গ্রহীতার কাছ থেকে একটি পাওয়ার অব এটর্নি নেবে, যাতে করে ঋণ পরিশোধে সমস্যা হলে যে কোনো সময় ব্যাংক ওই বন্ধকি সম্পত্তি বিক্রয় করতে পারে।
এই বিশেষজ্ঞ বলেন, ঋণ দেওয়ার ক্ষেত্রে একজন জামিনদার নির্ধারণ করতে হবে।
বেসরকারি গবেষণা সংস্থা পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, এসব ঋণের ক্ষেত্রে কোনো নিয়ম মানা হয় না, এটি মোটামুটি 'ওপেন-সিক্রেট বিষয়'। আলোচিত খেলাপি ঋণের প্রায় সবগুলোতেই এরকম অনিয়ম হয়েছে।
তিনি বলেন, এসব অনিয়মের সাথে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের যারা জড়িত, তাদের কাউকে এখন পর্যন্ত আইনের আওতায় এনে বিচারের মুখোমুখি করার নজির নেই বললেই চলে। ফলে ব্যাংকিং খাতে এই অরাজকতা থামানো যাচ্ছে না।
এই বিশেষজ্ঞ বলেন, অর্থমন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ব্যাংক ও সংশ্লিষ্টদের তৎপরতা বা উদ্যোগও সেভাবে নজরে আসে না, তাদের উচিত বড় বড় ঋণের বিষয়ে নজরদারি বাড়ানো। সেইসাথে অতীতে যারা এসব কেলেঙ্কারির সাথে জড়িত, তাদের বিষয়ে কঠোর আইন পদক্ষেপ নিতে হবে।
মর্টগেজ ওভারভ্যালুয়েশনের আরও ঘটনা
সোনালী ব্যাংকের সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা ঋণ কেলেঙ্কারির ঘটনায় হলমার্ক গ্রুপের যেসব সম্পত্তি বন্ধক রাখা ছিল, সেগুলোর বাজারমূল্যের চেয়ে ১৫০ থেকে ২০০ গুণ বেশী দাম দেখিয়ে বন্ধক রাখার ঘটনা বেশ আলোচিত। বেসিক ব্যাংকের সাড়ে চার হাজার কোটি টাকা ঋণ কেলেঙ্কারির ঘটনায় প্রতিটি ঋণের ক্ষেত্রে ভুয়া বন্ধক তৈরি করে ঋণ প্রদানের ঘটনা ঘটেছে বলে দুর্নীতি দমন কমিশন জানিয়েছে।
আলোচিত ক্রিসেন্ট গ্রুপ ঋণের নামে জনতা ব্যাংক থেকে ৩ হাজার ৪৪৩ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। এই ঋণের ক্ষেত্রেও কম মূল্যের সম্পত্তি কয়েকশ গুণ বেশী মূল্য দেখিয়ে বন্ধক রাখার ঘটনা দুদকের তদেন্তে উঠে এসেছে। চট্টগ্রামের আলোচিত ব্যবসায়ী আসলাম চৌধুরী তার দুই প্রতিষ্ঠানের নামে ১০টি ব্যাংক ও সাতটি নন-ব্যাংকিং আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে প্রায় ১৬০০ কোটি টাকা ঋণ নিয়ে খেলাপি হওয়ার পর প্রায় ৩০টি মামলা রয়েছে। এসব মামলার মধ্যে দুইটি মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন যেখানে দুইটি ব্যাংকের প্রায় ৫০০ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ আনা হয়েছে।
দুদক বলেছে, আসলাম চৌধুরী ব্যাংকের ৫০০ টাকা ঋণ নিয়েছিল ভুয়া বন্ধক দলিল তৈরি করে। এছাড়াও বাকি ১১০০ কোটি টাকার ঋণ নিয়েছে বন্ধকি সম্পত্তির মূল্য কয়েকশ গুণ বেশি দেখিয়ে।
অ্যাননটেক্স গ্রুপের কয়েক হাজার কোটি টাকা ঋণ কেলেঙ্কারির ক্ষেত্রেও মর্টগেজ ওভারভ্যালুয়েশন করা হয়েছে বলে দুদক জানিয়েছে।
আলোচনায় না আসা কিছু ঘটনা
প্রতারণা করে গ্রাহকের প্রায় আড়াই হাজার কোটি টাকা আত্মসাত করেই ক্ষান্ত হয়নি বিতর্কিত যুব কর্মসংস্থান সোসাইটি (যুবক)। ব্যাংকের কাছ থেকে ঋণ নিয়ে সুদ আসলে প্রায় সাড়ে ৪০০ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ রয়েছে প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে। ২০০৪ সালের মে মাসে ঢাকা ব্যা্ংকের নেতৃত্বে আরও চারটি ব্যাংক ও নন-ব্যাংকিং আর্থিক প্রতিষ্ঠান যুবকের অস্তিত্বহীন 'টেলিবার্তা' প্রকল্পে ৩০০ কোটি টাকার সিন্ডিকেট ঋণ দিয়েছিল। অভিযোগ রয়েছে ঢাকা ব্যাংকের একজন প্রতিষ্ঠাতা সদস্যের তদবিরে ওই ঋণ অনুমোদন দেওয়া হয়েছিল।
রাজধানীর তেজগাঁও শিল্প এলাকায় একটি ভবনসহ একটি প্লট ও পুরানা পল্টন লেনের তিন তলা ভবন সহ একটি প্লট বন্ধক রাখে যুবক।
এই টাকা আদায়ে ব্যাংক মামলা করলে ওই দুটি সম্পত্তি নিলামে বিক্রয়ের রায় দেয় ঢাকার অর্থঋণ আদালত। গত ২৫ জানুযারি সম্পত্তি দুটি নিলামে তোলা হলে কেউ সেটি ক্রয়ের জন্য অংশ নেয়নি।
সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানান, ওই সম্পত্তির বাজারমূল্য প্রায় ১৫০ কোটি টাকা।
আরেকটি সূত্র জানিয়েছে, ঋণ অনুমোদরে সময় ঢাকা ব্যাংকের একজন প্রভাবশালী পরিচালকের হস্তক্ষেপে বন্ধকি সম্পত্তি মূল্য বেশি দেখিয়ে ওই ঋণ অনুমোদন ও বিতরণের ব্যবস্থা করা হয়।
চট্টগ্রামের মাহিন এন্টারপ্রাইজ নামের একটি প্রতিষ্ঠান কয়েকটি ব্যাংকের কাছে ৯৩৫ কোটি টাকার ঋণ খেলাপি। ২০১৯ সালের সিআইবির তালিকায় শীর্ষদের মধ্যে নাম আসে প্রতিষ্ঠানটির।
গাজীপুরের সুপ্রভ কম্পোজিট নিট লিমিটেড বিভিন্ন ব্যাংকের কাছে ৮৬২ কোটি টাকার ঋণ খেলাপি হয়েছে। চট্টগ্রামের এসএ ওয়েল রিফাইনারি লিমিটেড ৫টি ব্যাংকের কাছে ৮৭৬ কোটি টাকার ঋণ খেলাপি।
বাংলাদেশ ব্যাংকের আইনজীবী ব্যারিস্টার খান মোহাম্মদ শামীম আজিজ টিবিএসকে বলেন, ২০২০ ও ২০১৯ সালে সিআইবির তালিকায় নাম থাকা এরকম প্রায় ১০০০ হাজার ঋণ খেলাপির মধ্যে ৭০% এর মতো খেলাপিরা ঋণ নেওয়ার জন্য বন্ধক রাখা সম্পত্তির মূল্য শতগুণ বা তার বেশি দেখিয়ে ঋণ নিয়েছে। এসব খেলাপিদের বিরুদ্ধে মামলা চলমান। এছাড়াও অস্তিস্ত্বহীন সম্পত্তি বন্ধক রাখারও অনেক ঘটনা রয়েছে।
তিনি বলেন, মামলা করার আগে এসব সম্পত্তি নিলামে বিক্রয়ের ব্যাংক উদ্যোগ নেওয়ার পর এই বন্ধক জালিয়াতির বিষয় ধরা পড়ে।
তিনি বলেন, গত বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত অর্থঋণ আদালতগুলোতে ব্যাংকগুলোর দায়ের করা প্রায় ৭৪ হাজার মামলা বিচারাধীন রয়েছে, যার বিপরীতে প্রায় এক লাখ ২৫ হাজার কোটি টাকা খেলাপি ঋণ আটকে আছে। এসব মামলার মধ্যে প্রায় ২২ হাজার মামলা হাইকোর্টের আদেশে স্থগিত রয়েছে বলে জানা গেছে। এসব মামলা পর্যালোচনা করে দেখা যায়, প্রায় প্রতিটি ঋণের ক্ষেত্রে বন্ধকি সম্পত্তির ওভারভ্যালুয়েট করা হয়েছে।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন টিবিএসকে বলেন, 'যে কোনো ধরনের ঋণ দেওয়ার আগে প্রস্তাবগুলো অধিক যাচাই-বাছাই করা জরুরি। এ ছাড়া এ ধরনের জালিয়াতির সঙ্গে একশ্রেণির ব্যাংক ও ব্যাংক মালিকেরই সংশ্লিষ্টতা রয়েছে বলে অভিযোগ আছে। সে বিষয়েও খতিয়ে দেখা দরকার।' এ ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের ঋণ তদারকি বিভাগের পাশাপাশি বাংলাদেশ ব্যাংকের নজরদারিও আরও বাড়াতে হবে বলে তিনি মনে করেন। সেই সঙ্গে ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদে রাজনৈতিক বিবেচনায় লোক না নিয়ে অপেক্ষাকৃত যোগ্যদের নিয়োগ দেওয়া উচিত বলে তিনি মনে করেন।
নিবন্ধন হয় না বন্ধকি সম্পত্তির
কোম্পানী আইন বিশেষজ্ঞ অ্যাডভোকেট প্রবীর নিয়োগী টিবিএসকে বলেন, কোম্পানী আইন-১৯৯৪ এর ১৬৯, ১৬০ ও ১৬৮ ধারা অনুযায়ী কোনো ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান সম্পত্তি বন্ধক পাওয়ার পর সেটি বন্ধকি দলিল 'দ্য অফিস অফ দ্য রেজিস্ট্রার অফ জয়েন্ট স্টক কোম্পানিজ এন্ড ফার্মস'র নিবন্ধন শাখায় নিবন্ধন (চার্জ ক্রিয়েট) করার কথা।
আইনের ১৭৫ ধারা অনুযায়ী দ্য অফিস অফ দ্য রেজিস্ট্রার অফ জয়েন্ট স্টক কোম্পানিজ এন্ড ফার্মসের নিবন্ধন শাখা এই সম্পত্তি পরিদর্শন করতে পারবে।
তিনি বলেন, আইনের এই বিধানের উদ্দেশ্য হলো, যাতে করে বন্ধক নেয়া সম্পত্তি নিয়ে কোনো প্রতিষ্ঠান প্রতারণা বা ক্ষতির সম্মুখীন না হয়। তাই চার্জ ক্রিয়েটের বিষয়টি বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। কোনো আর্থিক প্রতিষ্ঠান বন্ধক নেওয়ার পর চার্জ ক্রিয়েট না করলে আইনে জরিমানার বিধানও রয়েছে।
এছাড়াও ২০১০ সালে হাইকোর্ট এক রায়ের পর্যবেক্ষণে এই চার্জ ক্রিয়েট র বিষয়ে 'দ্য অফিস অফ দ্য রেজিস্ট্রার অফ জয়েন্ট স্টক কোম্পানিজ এন্ড ফার্মস' ও বাংলাদেশ ব্যাংককে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলেছেন।
তবে চার্জ ক্রিয়েট করার ঘটনা খুবই কম বলে উল্লেখ করেন এই বিশেষজ্ঞ।
'দ্য অফিস অফ দ্য রেজিস্ট্রার অফ জয়েন্ট স্টক কোম্পানিজ এন্ড ফার্মস' এর নিবন্ধক জাকির হোসেন টিবিএসকে বলেন, আইন অনুযায়ী সকল বন্ধকি সম্পত্তির চার্জ ক্রিয়েট করা কথা থাকলেও সেটি হয় না। এ নিয়ে বিভিন্ন ব্যাংক ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সাথে কয়েক দফা আলোচনাও করা হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র সিরাজুল ইসলাম টিবিএসকে বলেন, বিভিন্ন ঋণ কেলেঙ্কারির ঘটনা আলোচনায় আসার পর থেকে বাংলাদেশ ব্যাংকের তদারকি বিভাগ বন্ধক সংক্রান্ত বিষয়ে কাজ করছে।