ভোজ্যতেলের দাম লিটারে ৫ টাকা বাড়ানোর প্রস্তাব ব্যবসায়ীদের
আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বৃদ্ধির কারণে দেশে সয়াবিন ও পামওয়েলের দাম লিটারে আরও ৫ টাকা বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছে জাতীয় মূল্য পর্যবেক্ষণ ও নির্ধারণ কমিটি।
বুধবার বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের সভাকক্ষে কমিটি ও ব্যবসায়ীরা একটি মিটিং করে।
মিটিংয়ে অংশগ্রহণকারীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বৃদ্ধি প্রস্তাবনাটি নিয়ে আলোচনা হলেও জাতীয় মূল্য পর্যবেক্ষণ ও নির্ধারণ কমিটি তেলের দাম বৃদ্ধির বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেনি। আন্তর্জাতিক বাজার ও মূল্য নির্ধারণে আনুষঙ্গিক কিছু বিষয় নিয়ে আরও পর্যবেক্ষণ করে তবেই কমিটি সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে।
এ বিষয়ে টিকে গ্রুপের পরিচালক (ফাইন্যান্স ও অপারেশন) মো. শফিউল আতহার তাসলিম বলেন, 'আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বৃদ্ধির কারণে আমরা বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছি। একইসঙ্গে বোতলের দাম পুননির্ধারণেরও প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। কমিটি সেটা পর্যবেক্ষণ করছে।'
দেশে প্রথমবারের মতো গত ১৭ ফেব্রুয়ারি জাতীয় মূল্য পর্যবেক্ষণ ও নির্ধারণ কমিটি তেলের সর্বোচ্চ দাম বেঁধে দেয়। বেঁধে দেয়া দাম অনুযায়ী প্রতি লিটার খোলা সয়াবিন তেল ১১৫ টাকা, এক লিটারের বোতল ১৩৫ টাকা, পাঁচ লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেল ৬৩০ টাকা এবং প্রতি লিটার খোলা পাম ওয়েল ১০৪ টাকার মধ্যে বিক্রি হচ্ছে।
বর্তমান দামের সঙ্গে লিটারে আরও ৫ টাকা বাড়ানোর প্রস্তাবনা দিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। তারা জানান, বর্তমানে আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতি টন অপরিশোধিত সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে ১১৯০ ডলারে। এর আগে যখন দাম নির্ধারণ করা হয়, প্রতি টনের দাম ছিল ১০৯০ ডলার।
জানা গেছে, করোনাকালে চীন নিজেদের চাহিদার তুলনায় অতিরিক্ত তেল কিনে রিজার্ভ করেছে। যে কারণে গত ছয় মাসের বেশি সময় ধরেই আন্তর্জাতিক বাজারে অস্থিরতা তৈরি হয়।
বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত ছয় মাসেই আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম বেড়েছে প্রায় ৬৫ শতাংশ। কিন্তু দেশের বাজারে দাম বেড়েছে ৪০ শতাংশ।
বাংলাদেশের তুলনায় ভারতে আরও চড়া দামে তেল বিক্রি হচ্ছে বলে জানান ব্যবসায়ীরা। মেঘনা গ্রুপের এজিএম মো. তাসলিম শাহরিয়ার (অ্যাকাউন্টস) বলেন, 'ভারতে ৭০ শতাংশ তেল নিজেদের উৎপাদিত এবং ৩০ শতাংশ আমদানি করে পরিশোধন করা হয়। তারপরও ভারতে তেলের দাম বেশি। বাংলাদেশে শতভাগ আমদানি হলেও সে তুলনায় দাম বেশি বাড়েনি।'
জানা গেছে, মিটিংয়ে ব্যবসায়ীরা তেলের দাম বৃদ্ধির পাশাপাশি বোতলের দাম বাড়ানো এবং ডিস্ট্রিবিউশন চ্যানেলের মার্জিন বাড়ানোর প্রস্তাবনাও দিয়েছে। বর্তমানে ১ লিটারের বোতলের দাম ১৫ টাকা এবং ৫ লিটারের বোতলের দাম ৫০ টাকা নির্ধারিত রয়েছে।
ট্যারিফ কমিশন সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশে শুধু সয়াবিন তেল ও পাম ওয়েলের মোট চাহিদা রয়েছে ১৮-২০ লাখ টন। রমজান মাসের চাহিদা রয়েছে ২.৫-৩ লাখ টন।
জানা গেছে, আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বৃদ্ধির প্রভাবে যেন দেশে তেলের সরবরাহ কমে না যায়, সে ব্যাপারেও ব্যবসায়ীদের নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ইতোমধ্যে চিঠি দিয়ে সব ভোজ্যতেলের ব্যবসায়ীকে প্রয়োজনীয় তেল আমদানির নির্দেশনা দিয়েছে। কারণ এপ্রিলের মাঝামাঝিতে রোজা শুরু হবে। সে সময় যেন সরবরাহে কোনো সংকট তৈরি না হয়, সেদিকেও খেয়াল রাখছে সরকার।
জানা গেছে, গত জানুয়ারি মাসে প্রায় দেড় লাখ টন অপরিশোধিত সয়াবিন ও পামওয়েল এবং ফেব্রুয়ারিতে ২ লাখ টনের বেশি তেল আমদানির জন্য এলসি খোলা হয়েছে। আমদানি করা কিছু তেল স্টকেও রয়েছে।
বাংলাদেশ এডিবল ওয়েল লিমিটেডের হেড অব ফাইন্যান্স অ্যান্ড অ্যাকাউন্টস মোহাম্মদ দবিউল ইসলাম বলেন, 'আমরা চাহিদা অনুযায়ীই তেল আমদানি করছি। সরবরাহে কোনো সংকট হবে না।'