ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণ ১ লাখ কোটি টাকার বেশি
কোভিডের প্রভাব কমে আসায় ব্যাংকিং খাতে ঋণ বিতরণের পরিমাণ বাড়লেও, কমেনি খেলাপি ঋণ। তিন মাসের ব্যবধানে এ খাতে খেলাপি ঋণ প্রায় দুই হাজার কোটি টাকা বেড়েছে।
চলতি বছরের জুন শেষে ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ৯৯ হাজার ২০৫ কোটি টাকা। তিন মাসের ব্যবধানে সেপ্টেম্বর শেষে খেলাপি ঋণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ১ হাজার ১৫০ কোটি টাকা। যা মোট প্রদত্ত ঋণের ৮ দশমিক ১৭ শতাংশ। তবে খেলাপি ঋণের শতাংশ হিসাবে গত জুন প্রান্তিকের চেয়ে কমেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের খেলাপি ঋণ সংক্রান্ত হালনাগাদ প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন ডেপুটি গভর্নর দ্য বিজনেস স্টান্ডার্ডকে বলেন, মহামারিরর কারণে চলতি বছরের শুরুতে ব্যাংকিং খাতে ঋণ বিতরণ কিছুটা স্লথ গতিতে ছিল। 'এখন পরিস্থিতি অনেকটা স্বাভাবিক হওয়ায় সকল খাতে ঋণের চাহিদা বেড়েছে। এতে ব্যাংকিং খাতে মোট ঋণের পরিমাণ বেড়েছে।'
তিনি আরও বলেন, ঋণের পরিমাণ বাড়ায় খেলাপি ঋণের শতাংশের হিসাব আগের প্রান্তিকের চেয়ে কমে এসেছে। কিন্তু, খেলাপি ঋণ তুলনামূলক বাড়ছে।
করোনাভাইরাসের অর্থনৈতিক প্রভাব মোকাবিলায় বাংলাদেশ ব্যাংকের বিভিন্ন শর্ত শিথিলের কারণে গত বছরজুড়ে ঋণ শোধ না করলেও, কেউ খেলাপি হননি। তবে এ বছর নতুন করে আগের মতো ঢালাও সুযোগ দেওয়া হয়নি। চলতি বছরের সকল ধরনের ঋণের ২৫ শতাংশ প্রদান করলে, কেউ খেলাপি হবেনা বলে নির্দেশনা রয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংকের।
এছাড়া চলতি বছরের প্রথম নয় মাসে ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণ ১২ হাজার ৪১৬ কোটি টাকা বেড়েছে। যা গত বছরের ডিসেম্বরের শেষে ছিল ৮৮ হাজার ৭৩৪ কোটি টাকা। সেই সময়ে খেলাপি ঋণ ছিল মোট ঋণের ৭.৬৬ শতাংশ।
এপ্রসঙ্গে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন, প্রদত্ত ঋণের পরিমাণ বাড়ায় খেলাপি ঋণও কিছুটা বেড়েছে। তবে তা খুব বেশি বাড়েনি। 'আগামীতে খেলাপি ঋণ বাড়বে না কমবে তা সেপ্টেম্বরের হিসাব ধরে বলা সম্ভব নয়, তবে এ বছরের ডিসেম্বরের শেষে কমার সম্ভাবনা রয়েছে।'
উল্লেখ্য, ২০১৯ সালে যেসব ঋণখেলাপি ব্যবসায়ী এককালীন টাকা জমা দেওয়ার আশ্বাসে ঋণ নিয়মিত করেছিলেন, ঋণ পরিশোধে তাদের নতুন করে আবারও সময় দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। তারা আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে ঋণ পরিশোধের সুযোগ পাবেন। এ সময় নতুন করে খেলাপি করা যাবে না।
এপ্রসঙ্গে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাবেক গভর্নর সালেহ উদ্দিন আহমেদ টিবিএসকে বলেন, 'বাণিজ্যিক ব্যাংকের পরিচালক বোর্ড এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নজরদারির অভাবে ব্যাংক খাতে নন-পারফর্মিং লোনের পরিমাণ বেড়েই চলেছে। প্রায় সকল বড় ঋণ বিতরণে রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা থাকায়; ঋণগ্রহীতারা খেলাপি হওয়ার পরোয়া করেন না। কারণ, তাদের জানা আছে আদালত তাদের ঋণ আদায়ে কোনো ব্যবস্থা নেবে না।'
তিনি আরও বলেন, ঋণ খেলাপিরা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বিভিন্ন প্যাকেজ ও সুবিধা ঘোষণার অপেক্ষা করছেন। মহামারির কারণে কেন্দ্রীয় ব্যাংক অনেক ধরনের সুবিধা ঘোষণা করেছিল। এবছর অনেক সুবিধা প্রত্যাহার করা হয়। কিন্তু, ঋণ খেলাপিরা মনে করছেন, তারা পরিশোধ না করলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক আরও ছাড় দেবে।