বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৪৬ বিলিয়ন ডলার ছাড়ালো
করোনায় স্বাভাবিকের তুলনায় আমদানি ব্যয় কম হওয়া, রেমিটেন্সের উল্লম্ফন, বিদেশ যাত্রা সীমিত হয়ে পড়া-সব মিলিয়ে ডলারের চাহিদা কম। ফলাফল হিসেবে বেড়েই চলেছে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ।
৪৫ বিলিয়ন ডলারের পর রিজার্ভ এখন ৪৬ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে গেছে। ২৮ জুন রিজার্ভের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৪৬.০৮ বিলিয়ন ডলার। কেন্দ্রীয় ব্যাংক সূত্রে এই তথ্য পাওয়া গেছে।
এর আগে গেল ৩ মে রিজার্ভের পরিমাণ দাঁড়িয়েছিল ৪৫.১১ বিলিয়ন ডলার। গেল বছর থেকেই রিজার্ভ বেড়ে চলেছে। গেল বছরের ৮ অক্টোবর রিজার্ভ ৪০ বিলিয়ন ডলারের মাইলফলক ছুঁয়েছিল। এরপর চলতি বছরের ২৪ ফেব্রুয়ারি রিজার্ভ ৪৪ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যায়।
গেল বছরের নভেম্বরে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল আশা প্রকাশ করে বলেছিলেন, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ চলতি বছর ৫০ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যাবে।
আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে কোন দেশের তিন মাসের আমদানি ব্যয়ের সমপরিমাণ রিজার্ভ থাকতে হয়। বাংলাদেশে এখন যে পরিমাণ রিজার্ভ আছে তা দিয়ে ১০ মাসের বেশি আমদানি ব্যয় পরিশোধ করা সম্ভব।
রিজার্ভ বাড়াতে অন্যতম ভূমিকা রাখছে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্সের উচ্চ প্রবাহ। জুনের ২৮ দিনে রেমিটেন্স এসেছে ১.৭৫ বিলিয়ন ডলার, যা গেল বছরের একই সময়ে ছিল ১.৬৬ বিলিয়ন ডলার।
অন্যদিকে চলতি অর্থবছরের ১ জুলাই থেকে ২৮ জুন পর্যন্ত রেমিটেন্স আয় হয়েছে ২৪.৫৯ বিলিয়ন ডলার, যা গেল অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ৩৬.৪০ শতাংশ বেশি।
রিজার্ভ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) এর ডিস্টিংগুইশড ফেলো ড. মুস্তাফিজুর রহমান বলেন, রিজার্ভ বৃদ্ধিকে দুই আঙ্গিকে বিশ্লেষণ করা যায়।
তিনি বলেন, বেশি রিজার্ভ মানেই হচ্ছে অর্থনীতির জন্য একটা বড় শক্তি। কখনো আমদানি ব্যয় বেড়ে গেলে এই রিজার্ভ দিয়ে যেমন তা সামাল দেয়া যাবে, তেমনি উচ্চ রিজার্ভ বলে দিচ্ছে বাংলাদেশের বৈদেশিক ঋণ পরিশোধের সক্ষমতা বাড়ছে। এতে আরো বেশি বিদেশি ঋণ প্রাপ্তি সহজ হবে। অর্থাৎ বাংলাদেশের সামষ্টিক অর্থনীতির স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে উচ্চ রিজার্ভের ভূমিকা আছে।
তবে যে কারণে আমাদের রিজার্ভ বাড়ছে তা অর্থনীতির জন্য নেতিবাচক বার্তা দেয়। তিনি বলেন, মূলত করোনার প্রভাবে আমদানি হ্রাস পাওয়া, বিশেষ করে মূলধনী যন্ত্রপাতি আমদানি কমে যাওয়ায় রিজার্ভ বাড়ছে। অর্থাৎ এই রিজার্ভ বলে দিচ্ছে আমাদের বিনিয়োগ হ্রাস পেয়েছে। আর বিনিয়োগ কম হলে কর্মসংস্থানও হ্রাস পায়, এতে মানুষের আয় কমে, বাড়ে দারিদ্রতা।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, চলতি অর্থবছরের জুলাই-এপ্রিল এই ১০ মাসে মূলধনী যন্ত্রপাতি আমদানি ব্যয় গেল অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় প্রায় সাড়ে ৭ শতাংশ কমেছে।
ড. মুস্তাফিজুর রহমান বলেন, বিশ্বের অনেক দেশের চেয়ে বাংলাদেশের রিজার্ভ এখন শক্তিশালী অবস্থানে আছে। এই উচ্চ রিজার্ভের সঠিক ব্যবস্থাপনা আগামীতে চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা দিতে পারে।
উদাহরণ হিসেবে তিনি বলেন, অতিরিক্ত রিজার্ভ কোথায় বিনিয়োগ করলে ভালো রিটার্ন পাওয়া যাবে, রিজার্ভের নিরাপত্তা কিভাবে নিশ্চিত হবে, বেশি রিজার্ভের কারণে টাকা-ডলার বিনিময় হার কিভাবে স্থিতিশীল করা যাবে এসব বিষয় সামনে চলে আসবে।
উল্লেখ্য, রিজার্ভের পরিমাণ বাড়ায় চলতি বছরের মার্চের মাঝামাঝি রিজার্ভ থেকে বার্ষিক ২ বিলিয়ন ডলার অর্থ নিয়ে অবকাঠামো উন্নয়ন তহবিল গঠন করে সরকার। প্রথম ধাপে এই তহবিল থেকে প্রায় সাড়ে ৫ হাজার কোটি টাকা ঋণ পেয়েছে পায়রা বন্দর কর্তৃপক্ষ।