বিদেশি ফলের দাম কমাতে শুল্ক হ্রাসের সুপারিশ
আমদানিতে উচ্চ শুল্কহার এবং তুলনামূলক কম উৎপাদনের কারণে অধিকাংশ বিদেশি ফলই সারা বছর চড়া দামে বিক্রি হয়। এসব ফল সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে আনতে আসন্ন বাজেটে আমদানি শুল্ক অন্তত দুই-তৃতীয়াংশ কমানোর সুপারিশ করেছে বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন।
জানা গেছে, কমলা, আপেল, মাল্টা ও আঙ্গুর আমদানিতে মোট ৮৯.৩২ শতাংশ শুল্ক দিতে হয়। বাজারে এই চার ফলের দাম কমাতে আসন্ন ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেটে আমদানি শুল্ক ৩১ শতাংশ করার সুপারিশ করেছে কমিশন। এ সুপারিশ জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের কাছে পাঠিয়েছে কমিশন।
ফলের আমদানিকারক ও উৎপাদনকারীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কমলা, আপেল, আঙ্গুর, মাল্টা, বেদানা, নাশপাতি বিদেশি ফল হিসেবেই পরিচিত। এসব ফলের বেশ কিছু দেশে উৎপাদন শুরু হয়েছে। যদিও এসব ফলে আমদানি নির্ভরতা এখনো ৯০ শতাংশের বেশি।
ফল আমদানিকারক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সিরাজুল ইসলাম দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, আমদানি শুল্ক কমালে ফলের দামও অনেক কমবে। তখন নিম্ন আয়ের মানুষও এসব ফল খেতে পারবে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিদেশি জাতের ফলগুলো এখন দেশেও উৎপাদন শুরু হয়েছে। কিন্তু পরিমাণ কম থাকায় এগুলো বাজারে দামের ক্ষেত্রে খুব বেশি প্রভাব ফেলতে পারছে না। অন্যদিকে আমদানি করা ফলগুলোর ওপর উচ্চহারে শুল্ক থাকায় সারাবছর এগুলো বাড়তি দামে বিক্রি হয়।
কৃষি বিপনন অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, আপেল, কমলা, মাল্টা ও আঙ্গুরের দাম বছরের বেশির ভাগ সময়ই ১৫০-২০০ টাকার মধ্যে থাকে। মৌসুম শেষে অবশ্য এর চেয়েও বাড়তি দামে বিক্রি হয়।
এদিকে পরিমাণে অল্প হলেও কমলা, মাল্টা, আঙ্গুরের চাষ হচ্ছে দেশে। কিন্তু তাতেও দামে খুব একটা প্রভাব ফেলতে পারে না। এজন্য এসব ফল এখনো অনেক মানুষ নিয়মিত খাওয়ার সুযোগ পায় না। অথচ ফলগুলো পুষ্টির একটা বড় উৎস।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের (ডিএই) মহাপরিচালক মো. আসাদুল্লাহ টিবিএসকে বলেন, আমদানি নির্ভর নির্দিষ্ট কিছু ফলে শুল্ক কমালে তার প্রভাব দেশি ফলের বাজারে পড়বে না।
ডিএই, কমলা চাষী ও আমদানিকারদের কাছ থেকে জানা গেছে, আমদানির তুলনায় দেশে কমলার উৎপাদন এখনো এক-চতুর্থাংশের নিচে। তবে মৌসুমে ঢাকায় দেশে উৎপাদিত কমলা বিক্রি করতে দেখা যায়। কমলার চেয়েও দ্রুতগতিতে মাল্টার চাষ বাড়ছে বলেও জানা গেছে।
ডিএই'র হর্টিকালচার উইংয়ের পরিচালক মো. কবির হোসেন টিবিএসকে বলেন, 'সারা দেশেই এখন কমলার উৎপাদন ছড়িয়ে পড়েছে। ধীরে ধীরে এর উৎপাদন বাড়ছে। এই পরিস্থিতিতে আমদানিতে ছাড় দিলেও একটা পর্যায়ে গিয়ে দেশি উৎপাদিত ফলের বাজার ঠিক রাখতে এই সুবিধা তুলে দিতে হবে।'
ডিএই'র হর্টিকালচার উইং ও উদ্ভিদ সংগনিরোধ কেন্দ্রের তথ্য বলছে, প্রতি বছর প্রায় ২ লাখ টনের বেশি আপেল, ১.৫-২ লাখ টন কমলা, ৫০ হাজার টনের বেশি আঙ্গুর আমদানি হয়। তবে মাল্টার আমদানিতে কোনো ধারাবাহিকতা লক্ষ্য করা যায়নি।
এদিকে দেশি উৎপাদনে ক্ষেত্রে দেখা গেছে, ২০১৯-২০ অর্থবছরে দেশে কমলার উৎপাদন হয়েছে ৪০,৩১৭ টন। যা প্রতি বছর ৫ শতাংশ হারে বাড়ছে। একই সময়ে ২৮,০৪১ টন মাল্টা উৎপাদন হয়েছে। চলতি বছর মাল্টার উৎপাদন ১৫-২০ শতাংশ বৃদ্ধি পাবে বলে জানা গেছে।
জানা গেছে, ২০১৯-২০ অর্থবছরে দেশে উৎপাদিত দেশি বিদেশি জাত মিলিয়ে ফলের পরিমাণ ১ কোটি ২৩ লাখ ৮৯ হাজার টন। দেশি ফলের পাশাপাশি এর মধ্যে বিভিন্ন জাতের বিদেশি ফলও রয়েছে। এরমধ্যে রয়েছে রকমেলন, মাস্কমেলন, হানিডিউ ও আইসবক্স ইয়েলো, ড্রাগন ফল, আপেল, কমলা, আঙ্গুরসহ বিভিন্ন বিদেশি ফল।
২০১৯-২০ অর্থবছরে ৬ লাখ ২৬ হাজার ৮২১ টন ফল আমদানি হয়েছে। এরমধ্যে আপেল কমলা, আঙ্গুর, আনার, আমলকি, কাচা খেজুর, চেরি, নাশপাতি, পারসিমম, আম উল্লেখযোগ্য।