বিক্রি কমায় লকডাউনে দাম কমেছে কয়েকটি নিত্যপণ্যের
চলমান লকডাউনে এবং রমজান মাসের শুরুতে নিত্যপ্রয়োজনীয় শাকসবজিসহ অধিকাংশ পণ্যের দাম বেড়ে গেলেও সপ্তাহ পেরোতেই কয়েকটি পণ্যের দাম কমেছে।
গত ১৪ এপ্রিল থেকে শুরু হওয়া সর্বাত্মক লকডাউন ও রমজান শুরু হওয়াও বেগুন, শশাসহ শাক-সবজির সরবরাহ কমে যাওয়ায় এগুলোর দাম দ্বিগুণেরও বেশি হয়ে যায়। তবে গত কয়েকদিন ধরে সরবরাহ স্বাভাবিক থাকায় নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যগুলোর দাম সহনীয় পযায়ে রয়েছে বলে দাবি ব্যবসায়ীদের।
এদিকে রমজানে ক্রেতাদের সবচেয়ে চাহিদাসম্পন্ন তরমুজ, বাঙ্গি, লেবুসহ ফলের দাম বেড়েই চলছে। ব্যবসায়ীদের দাবি সরবরাহ কম থাকায় এবং ক্রেতাদের চাহিদা বেশি থাকায় এগুলোর দাম বেড়েছে।
বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, রমজানের আগে মানুষ চাল, ডাল, পেঁয়াজ, চিনি, তেল প্রয়োজনের চেয়ে বেশি করেই কিনেছেন। ফলে রমজানের শুরুতে বাজারে নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য বেড়ে গিয়েছিল।গত সপ্তাহের তুলনায় দাম কমেছে মুরগির কিন্তু বেড়েছে ফলের। বাকি সব পণ্যের দাম আগের মতোই রয়েছে।
ক্রেতাদের অভিযোগ, লকডাউনের শুরুতে যেভাবে দ্বিগুণ, তিনগুণ করে শাক-সবজির দাম বেড়েছিল এরপরে সরবরাহ বাড়ার পরে দাম সেভাবে কমেনি বরং বেশকিছু পণ্যের দাম বেড়েই চলছে।
শুক্রবার রাজধানীর কারওয়ান বাজার, হাতিরপুল, কাঁঠাল বাগান, ফার্মগেট, মগবাজারসহ বেশ কয়েকটি বাজার ঘুরে দেখা যায়, এসব বাজারে প্রতি কেজি বেগুন ৭০ থেকে ৮০ টাকা, শসা ৪০ থেকে ৫০ টাকা, গাজর ৩০ থেকে ৪০ টাকা, শিম ৩০ থেকে ৪০ টাকা, করলা ৫০ থেকে ৬০ টাকা, মুলা ৪০ টাকা, ঢেঁড়শ ৫০ টাকা, টমেটো ৩০ থেকে ৪০ টাকা, বরবটি ৬০ টাকা, চিচিঙ্গা ৬০ থেকে ৭০ টাকা, পটল ৫০ থেকে ৬০ টাকা, কচুর লতি ৬০ টাকা, কাঁচা মরিচ ৬০ টাকা এবং লেবু ৫০ থেকে ১৫০ টাকা হালি বিক্রি হচ্ছে।
এর মধ্যে দাম বেড়েছে লেবু, কাঁচামরিচ, চিচিঙ্গাসহ কয়েকটি পণ্যের।
গত সপ্তাহের বাড়তি দাম কমেনি আলু, পিয়াজ ও রঅসুনের। পিঁয়াজের কেজি ৪০ টাকা, আলু ২০ টাকা, রসুন ১২০ টাকা, আদা দেশি ৭৫-৮০, চায়না ১৩০, মশুর ডাল ৬০-১০০ টাকট, ছোলা ৭০-৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া শুকনা মরিচ ২০০ টাকা কেজি, হলুদ ১৮০ টাকা থেকে ২৪০ টাকা, মরিচ গুঁড়া ২২০ টাকা, হলুদের গুঁড়া ১৪০ টাকা, জিরা ৩২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
মাংসের বাজার রয়েছে স্থিতিশীল। গরুর মাংসের কেজি ৫৮০ টাকা, খাসির মাংস বিক্রি হচ্ছে ৮০০ থেকে ৮৫০ টাকায়।
এদিকে মুরগির দাম আগের থেকে আরও কমে ব্রয়লার ১৩০ টাকা কেজি, পাকিস্তানি ২৪০ টাকা, লেয়ার ২০০ টাকা এবং দেশি ৫৫০-৬০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
ডিমের দাম কমে এক ডজন লাল ডিম বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকায়। হাঁসের ডিম ডজন এখন ১২০ টাকা এবং দেশি মুরগির ডিমের ডজন বিক্রি হচ্ছে ১৪০ টাকায়।
মুদি বাজারের তেমন কোনো পণ্যেরই দাম বাড়েনি। বাজারে প্রতি কেজি চিনি বিক্রি হচ্ছে ৭০ টাকায়। প্রতি কেজি বিআর-২৮ চাল ৪৫ থেকে ৪৮ টাকা, মিনিকেট ৬৫ টাকা, নাজির ৬৫ থেকে ৭০ টাকা, স্বর্ণা চাল ৪৮ থেকে ৫০ টাকা, পোলাও চাল ৯০ থেকে ১০০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। খোলা ভোজ্যতেলের লিটার বিক্রি হচ্ছে ১৩৫ থেকে ১৩৯ টাকা দরে।
চাল ব্যবসায়ীরা বলছেন, আগামী মাসে কিংবা রোজার শেষে নতুন চাল বাজারে আসায় চালের দাম কিছুটা কমবে। এছাড়া লকডাউনের কারণে চালের সরবরাহ কম থাকায় বাজার একই অবস্থায় আছে।
কারওয়ান বাজারে সাপ্তাহিক বাজার একসাথে করতে আসা ইদ্রিস আলী টিবিএসকে বলেন, 'লকডাউনের অযুহাত দিয়ে যেসব পণ্যের দাম কমানো হয়েছিল সেগুলোর দাম কমেনি। কোনো পণ্যের দাম হুট করে দ্বিগুণ করে ফেলতে পারে ব্যবসায়ীরা কিন্তু কমানোর সময় দেখা যায় ৫/১০ টাকা কমে। এটা সাধারণ মানুষের উপর একধরনের জুলুম'।
সবজির দাম স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে দ্বিগুণেরও বেশি উল্লেখ করে ক্রেতা তাসনুভা খানম বলেন, 'রমজান আর লকডাউন শুরু হওয়ার পরেই সবকিছর দাম বেড়ে গিয়েছে। ২/৪ টাকা কমলে সেটা আর কি কমলো। লেবু, তরমুজ, ফলের দাম তো বেড়েই যাচ্ছে। শুধু কমের মধ্যে মুরগি আর ডিমের দামই কমছে'।
কারওয়ান বাজারে সবজি বিক্রেতা জসিম টিবিএসকে বলেন, 'গত সপ্তাহের চেয়ে এ সপ্তাহে শসা, টমেটো, বেগুনসহ কয়েকটির দাম কমেছে। কাঁচা বাজারের দাম একেকদিন একেক রকম থাকে। আমরা যেভাবে আড়ৎ থেকে ক্রয় করি সেভাবেই কেজিতে ৫/১০ টাকা বেশি রেখে বিক্রি করি'।
মাংসের বাজারে ক্রেতাদের উপস্থিতি একেবারেই কম। দোকানীদের দাবি লকডাউনের কারণে তাদের দোকানে মানুষ আসতে পারছেন না।
কারওয়ান বাজারের পাইকারি ব্যবসায়ীরা জানান, রাস্তার অবস্থা ভালো থাকলে, ট্রাক যথাসময়ে আসতে পারলে দাম একটু কম থাকে। অনেক সময় দেখা যায় ঢাকায় দাম বেশি কিন্তু কৃষক হয়তো বিক্রিই করতে পারছে না।
সততা মুরগির আড়ৎ এর জাহাঙ্গীর আলম টিবিএসকে বলেন, 'গত দুই তিনদিন ধরে দাম কমেছে। লকডাউনের মধ্যে কয়েকবার দাম কমেছে। দূরের গ্রাহকরা আসে না এজন্য বিক্রি কম তাই দামও কম। যদি লকডাউন শেষ হয় তবে দাম বাড়বে তা না হলে আরও কমবে। রমজানের প্রথম দিকে দাম বেশি ছিল ও বিক্রি ভালো হত। এখন বিক্রি ভালো না'।
বাদশাহ রাইস এজেন্সির নূর হোসেন টিবিএসকে বলেন, 'কাস্টমার নেই তাই চাল আনছিও কম। এছাড়া দাম আগের মতোই। লকডাউন শেষ হলে দাম কমবে'।
এদিকে রমজান শুরুর আগে থেকেই বেড়েছে সব ধরনের ফলের দাম। সে দাম আরও বেড়েছে। বেশি বেড়েছে তরমুজ, আপেল, কমলা, আঙ্গুর ও কলার দাম। সাগরকলার ডজন ১৩০-১৪০ টাকা, চম্পাকলা ৬০-৭০, বাংলাকলা ৭৫, বেল আকারভেদে প্রতিটি ৮০-১৪০ টাকা, পেয়ারা কেজি ৭০ থেকে ১০০ টাকা, আনারস প্রতিটি ২৫ থেকে ৬০ টাকা।
সবচেয়ে বেশি দাম বেড়েছে তরমুজের। রমজানের আগে প্রতিকেজি তরমুজ ২৫ থেকে ৩৫ টাকা দরে বিক্রি হলেও এখন বিক্রি হচ্ছে ৫৫ থেকে ৬৫ টাকা কেজি দরে। বাঙ্গির কেজি ৭০ থেকে ৮০ টাকা।
এছাড়া সবুজ আপেল বিক্রি হচ্ছে ২০০ টাকা কেজি, আঙ্গুর ২০০ থেকে ৩০০ টাকা, মাল্টা ১৫০ টাকা এবং কমলা বিক্রি হচ্ছে ৩০০ টাকা কেজি দরে।
তরমুজ বিক্রেতা সামিউল টিবিএসকে বলেন, 'এখন চালান কম তাই দাম বেড়েছে। এদিকে আবার ক্রেতাও কমে গেছে দাম বেড়ে যাওয়ায়'।
মাছের বাজারও অনেকটা স্থিতিশীল আছে। তবে কমেছে ক্রেতা। মাছ বিক্রেতা শহিদুল আলম বলেন, 'বিক্রি একেবারে কম। লোকজনই আসে না৷ দাম আগের মতোই আছে'।