বছরজুড়ে সুবিধার পরও ৪ ব্যাংকের খেলাপি ঋণ বাড়লো
মহামারির অভিঘাত মোকাবেলায় গেল বছর জুড়ে ঋণের কিস্তি পরিশোধ না করার সুবিধা এবং ঋণ শ্রেণিকরণ বন্ধ ছিল। এরপরও, বছর শেষে রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক, বেসরকারি খাতের এবি ব্যাংক, সাউথ বাংলা এগ্রিকালচার এন্ড কমার্স ব্যাংক এবং ইউনিয়ন ব্যাংকের খেলাপি ঋণ বেড়েছে।
এর মাঝে সবচেয়ে বেশি বেড়েছে রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকের খেলাপি ঋণ। প্রতিষ্ঠানটির খেলাপি ঋণ বেড়েছে ৮ শতাংশের বেশি। কেন্দ্রীয় ব্যাংক সূত্রে পাওয়া খেলাপি ঋণের হালনাগাদ পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করে করে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
এদিকে গেল বছর ঋণ শ্রেণিকরণ না করার সুবিধার ফলে, ব্যাংকগুলোর প্রভিশন ঘাটতিও ব্যাপক কমে এসেছে। ২০১৯ সাল শেষে যেখানে ব্যাংকগুলোর প্রভিশন ঘাটতি ছিল ৬,৬৫৫ কোটি টাকা, গেল বছর শেষে তা কমে দাঁড়িয়েছে মাত্র ১২৩ কোটি টাকা।
প্রভিশন ঘাটতি কম হওয়ায়, ২০২০ সালে ব্যাংকগুলোর কর পরবর্তী মুনাফার পরিমাণ অনেক বাড়বে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
এ প্রসঙ্গে এসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স (এবিবি) এর সাবেক সভাপতি ও মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের এমডি সৈয়দ মাহবুবুর রহমান- দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, প্রভিশন ঘাটতি কম হওয়ায় নি:সন্দেহে ব্যাংকগুলোর মুনাফায় ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে।
তবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পক্ষ থেকে ব্যাংকগুলোর ব্যালেন্স শিট এখনো চূড়ান্ত নিরীক্ষা করা হয়নি। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অডিট শেষ হওয়ার পরই প্রকৃত চিত্র বোঝা যাবে, বলে তিনি জানান।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরিসংখ্যানে দেখা যায়, গেল বছর শেষে মোট খেলাপি ঋণের পরিমাণ কমেছে সাড়ে পাঁচ হাজার কোটি টাকার বেশি।
২০২০ সালের ৩১ ডিসেম্বর খেলাপি ঋণের হার মোট বিতরণ করা ঋণের ৭.৬৬ শতাংশে নেমে এসেছে, যা ২০১৯ সালের ৩১ ডিসেম্বর নাগাদ ছিল ৯.৩২ শতাংশ।
এ প্রসঙ্গে সৈয়দ মাহবুবুর রহমান, কিস্তি পরিশোধ না করার সুবিধা, নতুন করে ঋণ শ্রেণিকরণ না করার পাশাপাশি রিশিডিউল ও অবলোপন সুবিধার কারণে ২০২০ সালে খেলাপি ঋণের পরিমাণ কমেছে।
রাষ্ট্রায়ত্ব ৬টি ব্যাংকের খেলাপির পরিমাণ কমেছে ৩ শতাংশের মত। এখনো এসব ব্যাংকেই খেলাপির পরিমাণ সবচেয়ে বেশি। মোট খেলাপির ৪৭.৬৪ শতাংশই রাষ্ট্রায়ত্ত ৬টি ব্যাংকের।
অন্যদিকে বেসরকারি ব্যাংকগুলোর খেলাপির পরিমাণও কমেছে। তবে মোট খেলাপির ৪৫.৫ শতাংশ এসব ব্যাংকের। দেশে কার্যক্রম চালানো ৯টি বিদেশি ব্যাংকের খেলাপিও কমেছে।
ঋণের কিস্তি পরিশোধ না করার সুবিধা পুরোপুরি বাতিল না করে, মেয়াদী ঋণের কিস্তি পরিশোধে ব্যাংক গ্রাহক সম্পর্কের ভিত্তিতে আরো ২ বছর সময় দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। তবে গত জানুয়ারি থেকে ঋণ শ্রেণিকরণ শুরু হয়েছে।
এদিকে, মেয়াদী ঋণের ক্ষেত্রে সময় আরো ৩ বছর বাড়ানো এবং চলতি/তলবি ঋণের ক্ষেত্রে ডাউন পেমেন্ট ছাড়াই রিসিডিউল সুবিধা দিয়ে ৩ বছরে পরিশোধের দাবী জানিয়েছে ব্যাংক মালিকদের সংগঠন-বিএবি।
এই দাবি নিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নরের সাথে গত সোমবার বৈঠকও করেছে বিএবি নেতারা। ওই বৈঠকে কেন্দ্রীয় ব্যাংক দাবিটি যাচাই-বাছাই করার আশ্বাস দিয়েছে বলেও তারা জানান।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ এ প্রসঙ্গে দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংক যদি এসব দাবী মেনে না নেয়, তাহলে আগামীতে খেলাপি ঋণ বাড়বে।
কারণ হিসেবে তিনি বলেন, ব্যাংকগুলোর ব্যবস্থাপনা অতটা দক্ষ হয়নি এবং সুশাসনও সেই পর্যায়ে বাড়েনি যে, সুযোগ-সুবিধা বন্ধ করে দিলে খেলাপি বাড়বে না।