পাহাড়ে বছরে বিক্রি হয় ৩০০ কোটি টাকার কলা
পাহাড়ে দুই জাতের কলা বেশি দেখা যায়। একটি বাংলা কলা। রাঙামাটির স্থানীয় ভাষায় এর নাম কাত্তলি কলা। অন্যটি চাপা কলা, যার স্থানীয় নাম চম্পা কলা। উঁচু পাহাড়ের মাটিতে জন্মায় বলে এগুলোকে পাহাড়ি কলাও বলা হয়।
পুষ্টিগুণ বেশি হওয়ায় চাপা কলার চেয়ে দ্বিগুণ দামে বিক্রি হয় বাংলা কলা।
সারা বছর এসব কলার ফলন পাওয়া গেলেও আগস্ট থেকে অক্টোবর মাসে ফলন মেলে সবচেয়ে বেশি। এ সময় পাওয়া কলাগুলো আকারেও হয় বড়।
এসব কলা নিতে বিভিন্ন এলাকা থেকে ব্যবসায়ীরা ভিড় করেন পাহাড়ের কলা বাজারগুলোতে। এ বছরও এর ব্যাতিক্রম হয়নি।
কৃষি বিভাগের তথ্যমতে, রাঙামাটিতে প্রতি বছর প্রায় ৩০০ কোটি টাকার কলা কেনা-বেচা হয়। ২০১৯-২০ অর্থবছরে এ জেলার ১১ হাজার ৭৭৫ হেক্টর এলাকায় কলার আবাদ হয়েছে। যার উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে দুই লাখ ১৫ হাজার ২৫০ টন। গত অর্থবছরে ছিল দুই লাখ ১১ হাজার ২৪৫ টন। আবাদকৃত এলাকা ছিল ১১ হাজার ৫৫৭ হেক্টর।
রাঙামাটির কলা চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় নেওয়া হয়।
জেলা শহরের বনরূপা বাজারের সমতাঘাট কলাহাটে কুমিল্লা থেকে আসা ব্যবসায়ী মো. জামাল (৪৫) জানান, সারা বছর তিনি রাঙামাটি থেকে ঢাকা, চট্টগ্রাম ও কুমিল্লায় কলা নিয়ে যান।
সমতল এলাকায় এসব পাহাড়ি কলার চাহিদা বেশি উল্লেখ করে তিনি বলেন, 'প্রতি বছর কলার দাম বাড়ে। এ বছরও বেড়েছে। প্রতি ছড়া (কমপক্ষে ১০০ পিস) কলা মানভেদে ১০০ থেকে ২ হাজার টাকায় কিনেছি। কিছু কিছু এলাকার কলার ছড়া এত বড় হয়, সেগুলো ৫ থেকে ৬ হাজার টাকায় কিনতে হয়।'
চট্টগ্রাম থেকে আসা ব্যবসায়ী রফিক উদ্দিন (৫০) বলেন, 'সমতল এলাকার কলা আর পাহাড়ের কলার মধ্যে পার্থক্য অনেক। রাঙামাটি থেকে কলা নিয়ে বাজারে বসে থাকতে হয় না। এগুলো সবাই লুফে নেয়।'
এদিকে, অনেক ব্যবসায়ী চুক্তিভিত্তিক বাগান কিনে পরিচর্যা করে ফলন ফলান। এতে বেশ লাভবান হন তারা। এমনই এক ব্যবসায়ী, মোহাম্মদ ইসমাইল (৩৮) জানান, বাঘাইছড়ি মারিশ্যায় তিনি চুক্তিভিত্তিক ২ লাখ টাকার বাগান পরিচর্যা করে এ বছর ৬ লাখ টাকার কলা বিক্রি করতে পারবেন বলে আশা করছেন।
রাঙামাটি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালকের কার্যালয়ের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ তপন কুমার পাল বলেন, 'পাহাড়ে মাটিভেদে বিভিন্ন জাতের কলার আবাদ হয়। এ এলাকায় কলা আবাদে কীটনাশক ব্যবহার হয় না বললেই চলে। কলা এমনিতেই পুষ্টিসমৃদ্ধ ফল। তার ওপর বালাইনাশক ব্যবহার না হওয়ায় এ এলাকার কলা পুষ্টিগুণে পরিপূর্ণ।'
তিনি আরও বলেন, 'এসব কলার চামড়া মোটা হয়। তাই পরিবহনে তেমন অসুবিধা হয় না। এ জাতের কলা বারো মাস ফলন দেয়। তাই কৃষকরা সারাবছর এ কলা আবাদ করে আয় করতে পারেন। স্বাদ বেশি ও রসালো বলে এ কলার বাজারমূল্য বেশি।'
কৃষি বিভাগ বলছে, বিগত বছরের চেয়ে এ বছর কলার ফলন ভালো হয়েছে। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক পবন কুমার চাকমা বলেন, 'চাপা ও বাংলা কলা পাহাড়ের মাটিতে ভালো হয়। সমতল বা স্যাঁতস্যাতে মাটিতে এগুলোর ফলন হয় না।'
তিনি বলেন, 'পাহাড়ের মাটিতে এসব কলা আপনাআপনি বেড়ে ওঠে। তেমন পরিচর্যারও প্রয়োজন পড়ে না। শুধু কলা চারার আশপাশে জঙ্গল পরিষ্কারসহ মরা পাতা ও অতিরিক্ত চারা কেটে ফেলে দিলেই হয়।'