পরিবহন ধর্মঘটে ব্যাহত চট্টগ্রাম বন্দরের আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম
ডিজেল ও কেরোসিনের আকস্মিক মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে দেশব্যাপী চলছে পরিবহন ধর্মঘট। এর অংশ হিসেবে শুক্রবার সকাল থেকে চট্টগ্রাম বন্দরেও পণ্য পরিবহন বন্ধ থাকায় ব্যাপক প্রভাবিত হয়েছে বন্দরের আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম। মহামারির অভিঘাত থেকে ব্যবসাবাণিজ্য যখন ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে তার মধ্যেই দেখা দিল এ স্থবিরতা।
চট্টগ্রাম বন্দরের কর্মকর্তা ও ব্যবসায়ীদের আশঙ্কা, ধর্মঘট অব্যাহত থাকলে ভয়াবহ কন্টেইনার জট বাঁধবে।
এতে বন্দরের স্বাভাবিক কার্যক্রম মারাত্মক ব্যাহত হবে উল্লেখ করে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের (সিপিএ) সচিব ওমর ফারুক বলেন, 'এ অবস্থা চলতে থাকলে বন্দরে কন্টেইনার জট দেখা দেবে।'
আকস্মিক এ ধর্মঘটকে অবৈধ বলে মন্তব্য করেছেন ব্যবসায়ী নেতারা। তারা বলছেন, এটি তৈরি পোশাকসহ আমদানি-রপ্তানির অন্যান্য খাতের জন্যও হুমকি।
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, তাদের কন্টেইনার হ্যান্ডলিংয়ের ক্ষমতা ৪৯,০১৮ টিইউই এবং সঠিকভাবে কার্যক্রম পরিচালনার জন্য ১৫ শতাংশ ফাঁকা জায়গা প্রয়োজন। গতকাল বৃহস্পতিবার পর্যন্ত কন্টেইনারের সংখ্যা ছিল ৩৪,৭৩৮ টিইউই। গত ২৪ ঘণ্টায় বন্দরটি ৩,৪১৬ টিইউই আমদানিকৃতকৃত কন্টেইনার পেয়েছে এবং জাহাজীকরণ করেছে ৩,৭০৯ টিইউই। তবে এরমধ্যে কিছু খালি কন্টেইনারও ছিল।
এ বন্দর থেকে মোট কন্টেইনারের ৮০ শতাংশ সড়কপথে, ১৮ শতাংশ সমুদ্রপথে এবং মাত্র ৪ শতাংশ রেলপথে দেশের বিভিন্ন অংশে পৌঁছে দেওয়া হয়। প্রতিদিন ৮ থেকে সাড়ে ৮ হাজার যানবহনে বন্দর থেকে পণ্য আনা-নেওয়ার কাজ করে।
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সেক্রেটারি ওমর ফারুক বলেন, বন্দরটি আজ শুক্রবার এক থেকে দেড় হাজার টিইউই কন্টেইনার হ্যান্ডল করেছে, তবে শনিবার ৩,০০০-৪,০০০ টিইউই হ্যান্ডল করতে হবে।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, ধর্মঘটের ফলে ট্রাফিক জটও সৃষ্টি হবে, ফলে নির্ধারিত সময়ে আমদানি করা পণ্য খালাস করাও ব্যাহত হবে।
তৈরি পোশাক খাত (আরএমজি) এতে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হবে উল্লেখ করে বিজিএমইএর প্রথম সহ-সভাপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, 'কোভিড-১৯ এর আঘাত থেকে এই খাত কেবল ঘুরে দাঁড়ানো শুরু করেছে, তার মধ্যেই এ সংকট।'
বন্দরে রপ্তানির জন্য অনেক পণ্য এখনও জাহাজীকরণের অপেক্ষা করছে, ধর্মঘটের কারণে সেগুলো শিপমেন্ট করতে বাড়তি এক বা দুদিন সময় লাগবে। ধর্মঘট আরও এক বা দুইদিন চললে বন্দর পুরো অচল হয়ে পড়বে, বলে মনে করছেন তিনি।
নজরুল ইসলাম আরও বলেন, 'শিডিউল মিস করলে পণ্যবাহী জাহাজ যদি চলে যায়, তাহলে রপ্তানিকারকদের আরও এক সপ্তাহ অপেক্ষা করতে হবে। ক্রেতারাও তখন এয়ার শিপমেন্ট কিংবা মূল্য হ্রাসের দাবি জানাবেন।'
দেশের আমদানি-রপ্তানি খাতে বিরূপ প্রভাব ফেলা এ সর্বাত্মক পরিবহন ধর্মঘটকে অন্যায্য বলে উল্লেখ করেছে চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (সিসিসিআই)।
সিসিসিআই সভাপতি এম মাহবুবুল আলম মন্তব্য করেন যে, 'ডিজেলের দাম বাড়ানোর পর পরিবহন মালিকরা চাইলে আগে তিন-পাঁচদিনের একটি আল্টিমেটাম দিতে পারতেন। কিন্তু, কোনো ধরনের আলাপ-আলোচনা ছাড়াই তারা কার্যক্রম বন্ধ করে দেওয়ায় বন্দরের সব ধরনের পণ্য পরিবহন ব্যাহত হয়েছে।'
বঙ্গবন্ধু ও মুক্তারপুর সেতুর টোল বৃদ্ধির পর জ্বালানি তেলের মূল্য বাড়ানোর প্রতিবাদে বাংলাদেশ ট্রাক-কাভার্ড ভ্যান, ট্যাঙ্ক লরি, প্রাইম মুভার্স মালিক ও শ্রমিক সমন্বয় পরিষদও অনির্দিষ্টকালের জন্য ধর্মঘট ডেকেছে। সরকারের এসব সিদ্ধান্ত মহামারিতে বিপুল লোকসানের শিকার পরিবহন খাতে দুর্দশা আরও বাড়বে বলেই জানিয়েছে এ পরিষদ।
ঢাকা-চট্টগ্রাম কিংবা অন্য যেকোনো রুটে, কাভার্ড ভ্যান সাড়ে ১৯ হাজার টাকায় এবং প্রাইম মুভার্স ২১ হাজার টাকায় ভাড়া করা হয় বলে জানান কাভার্ডভ্যান-ট্রাক-প্রাইম মুভার্স পণ্য পরিবহন মালিক অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব চৌধুরী জাফর আহমেদ।
তিনি আরও জানান, প্রতিদিন প্রায় ২০,০০০ পণ্যবাহী যান চট্টগ্রাম শহরে প্রবেশ করে ও শহর ছেড়ে বেরিয়ে যায়। বঙ্গবন্ধু ও মুক্তারপুর সেতুর টোল এবং জ্বালানির মূল্য কমানোর আগপর্যন্ত ধর্মঘট অব্যাহত থাকবে।