নির্ধারিত দামের বেশি মূল্যে বিক্রি করা যাবে না সয়াবিন তেল
ভোজ্যতেলের বাজারের অস্থিরতা দূর করতে এবার সয়াবিন ও পাম ওয়েলের সর্বোচ্চ দাম নির্ধারণ করে দিয়েছে সরকার। এখন থেকে প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেল ১৩৫ টাকা এবং খোলা সয়াবিন তেল ১১৫ টাকার বেশি দামে বিক্রি করা যাবে না।
অত্যাবশ্যকীয় পণ্য বিপণন ও পরিবেশক বিষয়ক 'জাতীয় কমিটির' এক সভায় এই দাম নির্ধারণ করা হয়। বুধবার বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
জানা গেছে, বর্তমানে এক লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে সর্বোচ্চ ১৪০ টাকায়, যা ৫ টাকা কমিয়ে ১৩৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়। প্রতি লিটার খোলা সয়াবিন তেল ১২০ টাকা দরে বিক্রি করতে দেখা গেছে। যা সর্বোচ্চ ১১৫ টাকা বিক্রি করতে হবে। ৫ লিটারের বোতলের সর্বোচ্চ দাম ৬৩০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। এছাড়া, প্রতি লিটার খোলা পাম ওয়েল ১০৪ টাকা বেশি দাম নেয়া যাবে না।
বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেন, অত্যাবশ্যকীয় পণ্য বিপণন সংক্রান্ত সরকারি ও ব্যবসায়ী সংগঠনের সমন্বয়ে গঠিত জাতীয় কমিটি ভোজ্য তেলের মূল্য নির্ধারণ করেছে। নির্ধারিত মূল্যে ভোজ্য তেল বিক্রয় নিশ্চিত করা হবে।
জানা গেছে, আন্তর্জাতিক বাজারে ভোজ্য তেলের মূল্য গত ছয় মাসে ৬৫ শতাংশ বেড়েছে। এ পরিস্থিতিতে দেশের বাজারেও তেলের দাম হু হু করে বাড়ছিল। এই অবস্থা বিবেচনায় নিয়ে জাতীয় কমিটি ভোজ্য তেলের প্রতি লিটার সয়াবিন মিলগেট, পরিবেশক ও সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য নির্ধারণ করে দিল। দেশে ব্যবহৃত ভোজ্যতেলের ৯০ শতাংশের বেশি আমদানি করতে হয়। প্রতি বছর প্রায় ২০ লাখ টন ভোজ্যতেলের চাহিদা রয়েছে বলে জানা গেছে।
জাতীয় কমিটির সভায় বাংলাদেশ ট্রেড এন্ড ট্যারিফ কমিশনের সহকারী প্রধান মো. মাহমুদুল হাসান ভোজ্যতেলের সামগ্রিক পরিস্থিতি ও দাম নির্ধারণ প্রক্রিয়া নিয়ে একটি উপস্থাপনা তুলে ধরেন। এতে ভোজ্য তেলের অভিন্ন মূল্য নির্ধারণ পদ্ধতি তুলে ধরা হয়। যে পদ্ধতিতে সবসময় ভোজ্যতেলের দাম নির্ধারণ করা হবে।
এই পদ্ধতি অনুসারে পূর্ববর্তী এক মাসের এলসি খোলার মূল্য এবং বন্ডেড ওয়্যারহাউজে তালিকভুক্তির ও সরবরাহের ৭ দিনের গড় মূল্যের সাধারন গড় করতে হবে। এই দামের উপর সকল প্রকার শুল্ককর ও পরিশোধন ব্যয় যোগ করে মিলগেট মূল্য নির্ধারণ করতে হয়।
উৎপাদনকারী ২ শতাংশ, পরিবেশক পর্যায়ে ৪ টাকা এবং খুচরা ব্যবসায়ী পর্যায়ে প্রতি লিটারে ৮ টাকা পর্যন্ত মুনাফা নির্ধারণ করার কথা বলা হয়েছে। এর সঙ্গে উৎপাদকরা এক লিটার বোতলের ক্ষেত্রে ১৫ টাকা এবং ৫ লিটারের ক্ষেত্রে ৫০ টাকা যোগ করতে পারবে।
টিপু মুনসি বলেন, 'আসন্ন পবিত্র রমজান মাসকে সামনে রেখে পর্যাপ্ত মজুত সৃষ্টি করতে হবে, যাতে কোন অবস্থাতেই নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের সংকট না হয়। এজন্য সরকার প্রয়োজনীয় সব ধরনের সহযোগিতা প্রদান করবে। এছাড়া আন্তর্জাতিক বাজার দরের সাথে সামঞ্জস্য রেখে নিয়মিত ভাবে সভা করে ভোজ্য তেলের মূল্য পুনঃ নির্ধারণ করা হবে'।
জানা গেছে, অত্যাবশ্যকীয় পণ্যের বাজারদর ও সরবরাহ স্থিতিশীল রাখতে বাংলাদেশ ট্রেড এন্ড ট্যারিফ কমিশনের চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে জাতীয় মূল্য পর্যবেক্ষণ ও নির্ধারণ কমিটি কাজ করছে। এই কমিটি অভিন্ন মূল্য নির্ধারণ পদ্ধতি অনুযায়ী জাতীয় কমিটিকে তেলের মূল্য নির্ধারণের সুপারিশ করেছে।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সভায় জানানো হয়, পার্শ্ববর্তী দেশ অপেক্ষা বাংলাদেশের বাজারে ভোজ্যতেলের মূল্য যথেষ্ট কম। এই দামের পার্থক্য বেশি হলে চোরাই পথে তেল পাচার হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। অন্যদিকে রমজান সামনে রেখে যৌক্তিক মূল্যে যেন বাজারে সরবরাহ করা যায় তা নিশ্চিত করতে সরকার কাজ করছে বলে জানা গেছে।