দশ টাকার হিসাবধারীদের স্বল্প সুদে ৫ লাখ টাকার ঋণ

করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাবে দেশের প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর আয়-উৎসারী কর্মকাণ্ড বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। তাদেরকে আর্থিক সেবাভুক্তির আওতায় নিয়ে আসতে দশ টাকার হিসাবধারীদের জন্য ৫০০ কোটি টাকার তহবিল গঠন করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
তফসিলি ব্যাংকগুলো একক গ্রাহককে সর্বোচ্চ ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণ দিতে পারবে। তবে ২-৫ সদস্যের সমন্বয়ে গঠিত গ্রুপকে সদস্যপ্রতি সর্বোচ্চ চার লাখ টাকা করে সর্বোচ্চ ২০ লাখ টাকা ঋণ দিতে পারবে। গ্রুপ ঋণ পরিশোধের ক্ষেত্রে গ্রুপের সব সদস্যই ব্যক্তিগত ও যৌথভাবে ব্যাংকের কাছে দায়বদ্ধ থাকবেন।
রোববার (০৫ আগস্ট) বাংলাদেশ ব্যাংকের ফাইন্যান্সিয়াল ইনক্লুশন ডিপার্টমেন্ট থেকে এ বিষয়ে একটি সার্কুলার জারি করা হয়েছে। তফসিলি ব্যাংকগুলো বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে বার্ষিক ১ শতাংশ সুদে ঋণ নিয়ে গ্রাহক পর্যায়ে সর্বোচ্চ ৭ শতাংশ সুদে ঋণ দেবে।
সার্কুলারে বলা হয়েছে, স্কিমের অধীনে ঋণ সুবিধা গ্রহণকারী সব গ্রাহকই হবেন ১০/৫০/১০০ টাকার হিসাবধারী। একইসঙ্গে এই স্কিমের আওতায় ঋণ সুবিধা পাওয়ার জন্য নতুন গ্রাহকদের একই টাকার হিসাব খুলতে হবে। কোনো খেলাপি ঋণগ্রহীতা এ স্কিমে ঋণ সুবিধা পাবে না। একইসঙ্গে বাংলাদেশ সরকার কিংবা বাংলাদেশ ব্যাংকের সুদ ভর্তুকির আওতায় অন্য কোনো স্কিমের অধীন ঋণগ্রহীতা ঋণ নিতে পারবে না।
ঋণগ্রহীতাদের কাছ থেকে নিরাপত্তা জামানত নেওয়া যাবে না। তবে, প্রত্যেক ঋণগ্রহীতার ঋণের বিপরীতে ঋণগ্রহীতাসহ অনধিক দুইজনের ব্যক্তিগত গ্যারান্টি গ্রহণ করতে হবে। তিন লাখ টাকা ও তার চেয়ে বেশি ঋণ সুবিধা প্রদানের ক্ষেত্রে ব্যাংক নিজস্ব বিবেচনায় সম্পূর্ণ ঋণের বিপরীতে ক্রেডিট গ্যারান্টি স্কিমের সুবিধা গ্রহণ করতে পারবে। এক্ষেত্রে, ব্যাংক নিজস্ব উৎস হতে গ্যারান্টি ফি পরিশোধ করবে।
ব্যাংক ও গ্রাহক পর্যায়ে উভয় ক্ষেত্রে গ্রেস পিরিয়ড হবে সর্বোচ্চ ৬ মাস। গ্রেস পিরিয়ড শেষে ঋণের মেয়াদ হবে সর্বোচ্চ ৩ বছর। বাংলাদেশ ব্যাংক তিন মাসিক কিস্তিতে তফসিলি ব্যাংকগুলো থেকে সুদ ও আসল আদায় করবে এবং তফসিলি ব্যাংকগুলো তিন মাসিক কিস্তিতে গ্রাহকের কাছ থেকে ঋণের টাকা আদায় করবে।
খেলাপি ঋণগ্রহীতার অনুকূলে ঋণ প্রদান না করার বিষয়টি নিশ্চিত করতে সিআইবি রিপোর্ট গ্রহণ করতে হবে। এ স্কিমের আওতায় তিন লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণ প্রদানের সিআইবি রিপোর্ট গ্রহণের জন্য কোনো চার্জ/ ফি প্রযোজ্য হবে না।
তফসিলি ব্যাংকগুলো এই স্কিমের আওতায় ঋণ বিতরণের ক্ষেত্রে তার নিজস্ব শাখা/উপশাখা/এজেন্ট ব্যাংকিং শাখা থেকে ঋণ বিতরণ করতে পারবে।
এছাড়া শরীয়াহ্ভিত্তিক ব্যাংকগুলো একই নিয়মের অধীনে ৭ শতাংশ মুনাফায় ঋণ দিতে পারবে। গ্রেস পিরিয়ড বাদে তিন মাস পর পরবর্তী মাসের ১৫ তারিখের মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংকের ফাইন্যান্সিয়াল ইনক্লুশন ডিপার্টমেন্ট মহাব্যবস্থাপক বরাবর বিবরণী দাখিল করতে হবে।
এ ঋণের আওতাধীন হবেন পাড়া/মহল্লা অথবা গ্রাম ভিত্তিক ক্ষুদ্র/অতিক্ষুদ্র উদ্যোক্তা ও পেশাজীবীরা। যেমন: স্বর্ণকার, কুমার, জেলে, দর্জি, হকার/ফেরিওয়ালা, রিক্সাচালক/ভ্যানচালক, ইলেক্টিক্র /ইলেকট্রনিক যন্ত্র মেরামতকারী, ইলেক্ট্রিশিয়ান, কাঠমিস্ত্রি, রাজমিস্ত্রী, রংমিস্ত্রী, গ্রিলমিস্ত্রী, প্লাম্বার, আচার/পিঠা প্রস্তুতকারী, ক্ষুদ্র তাঁতী, পশু চিকিৎসক ইত্যাদি।
একইসঙ্গে চর ও হাওর এলাকায় বসবাসকারী স্বল্প আয়ের জনগোষ্ঠী অগ্রাধিকার ভিত্তিতে এ ঋণ সুবিধা পাবে। বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন ব্যক্তি এবং অসচ্ছল স্কুল ব্যাংকিং হিসাবধারীদের (শিক্ষাজীবন থেকে ঝরে পড়া শিক্ষার্থী) এ ঋণ সুবিধা দেওয়া হবে। স্কুল ব্যাংকিং হিসাব ছিল, এমন শিক্ষার্থীদের উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় শিক্ষা উপকরণ ক্রয়ের জন্য অভিভাবকের পরিশোধ গ্যারান্টির ভিত্তিতে উক্ত স্কিমের আওতায় ব্যাংকগুলো ঋণ বিতরণ করতে পারবে।