চট্টগ্রাম বন্দরে কন্টেইনার ডেলিভারি স্বাভাবিক হতে ১ সপ্তাহ লাগবে
পণ্য পরিবহন মালিকদের টানা ৪ দিনের ধর্মঘটের কারণে তিন দিনে ৩ হাজার ৭০০ কন্টেইনার না নিয়ে চট্টগ্রাম বন্দর ছেড়েছে ১০টি জাহাজ।
পরিবহন সংকটে আইসিডি থেকে জাহাজীকরণের জন্য বন্দরে নেওয়া যায়নি রপ্তানি পণ্যবাহী কন্টেইনার। ডেলিভারি হয়নি প্রায় ১০ থেকে ১২ হাজার আমদানি পণ্যের কন্টেইনার।
তবে ধর্মঘট স্থগিতের পর সোমবার রাত থেকেই বাড়তে শুরু করেছে কন্টেইনার ডেলিভারি। আইসিডি থেকে বন্দরে যাচ্ছে রপ্তনি পণ্যের কন্টেইনার। বন্দর কর্তৃপক্ষ এবং ব্যবসায়ীরা বলছে আগামী ১ সপ্তাহের মধ্যে বন্দরের কার্যক্রম পুরোপুরি স্বাভাবিক হবে।
তৈরি পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ ও আইসিডি মালিকদের সংগঠন বিকডা সূত্র জানায়, ধর্মঘটের কারণে গত ৭ নভেম্বর ১ হাজার ৯০০ কন্টেইনার রেখে ৩ টি জাহাজ চট্টগ্রাম বন্দর ছাড়ে। এরপর ৮ নভেম্বর ১৫ হাজার ৫০০ কন্টেইনার রেখে ৩টি জাহাজ এবং ৯ নভেম্বর ৩০০ কন্টেইনার রেখে ৪টি জাহাজ বন্দর ত্যাগ করে।
বিকডার মহাসচিব রুহুল আমিন শিকদার দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, 'একটি ২০ ফুট সাইজের কন্টেইনারে প্রায় ৪০ লাখ টাকার রপ্তানি পণ্য থাকে। সেই হিসেবে ৩ হাজার ৭০০ কন্টেইনারের প্রায় ১ হাজার ৪৮০ কোটি টাকার পণ্য সঠিক সময়ে জাহাজীকরণ সম্ভব হয়নি।'
বিকডা সূত্র জানায়, মঙ্গলবার (৯ নভেম্বর) ১৯টি আইসিডিতে ৯ হাজার ৫০০ রপ্তানি পণ্যের কন্টেইনার ছিলো। বুধবার (১০ নভেম্বর) এই সংখ্যা কমে দাঁড়িয়েছে ৮ হাজার ৩ কন্টেইনারে। ১৯টি আইসিডিতে কন্টেইনার ধারণক্ষমতা ৭৮ হাজার ৭০ টিইইউ (টুয়েন্টি ফুট ইকুইভ্যালেন্ট ইউনিট)। মঙ্গলবার কন্টেইনার ছিল ৫৪ হাজার টিইইউ। বুধবার আইসিডিগুলোতে কন্টেইনার রয়েছে ৪৮ হাজার ৭৫০ টিইইউ।
চট্টগ্রাম বন্দরের তথ্যমতে, ৮ নভেম্বর ডেলিভারি হয়েছিল ১ হাজার ৭১৩টি কন্টেইনার। ৯ নভেম্বর ডেলিভারি হয় ৩ হাজার ১১টি কন্টেইনার। ১০ নভেম্বর সকাল ৮টা পর্যন্ত গত ২৪ ঘণ্টায় ডেলিভারি হয় ৪ হাজার ১০৮ টিইইউ।
কন্টেইনার ডেলিভারি বাড়ায় বন্দরের ইয়ার্ডে কমেছে কন্টেইনারের পরিমাণ। ৪৯ হাজার ১৮ টিইইউ কন্টেইনার ধারণক্ষমতার বন্দরের ইয়ার্ডে ১০ নভেম্বর সকাল ৮টা পর্যন্ত কন্টেইনার ছিল ৩৭ হাজার ১১১ টিইইউ। ৯ নভেম্বর ছিল ৩৭ হাজার ৩১৬ টিইইউ।
বিকেএমইএর পরিচালক শামছুল আজম বলেন, 'চট্টগ্রাম বন্দর থেকে কাভার্ড ভ্যানে হাটহাজারীর বড় দীঘির পাড় এলাকায় আমার কারখানায় পণ্য নিয়ে আসতে ৫ হাজার টাকা ভাড়া আসত । ধর্মঘট স্থগিতের পর এই ভাড়া নেওয়া হচ্ছে ৬ হাজার ৫০০ টাকা। চাহিদামতো ট্রাকও পাওয়া যাচ্ছে না।'
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব মো. ওমর ফারুক বলেন, 'ধর্মঘটে চট্টগ্রাম বন্দরে কন্টেইনার ডেলিভারি প্রায় বন্ধ থাকলেও বন্দরের ইয়ার্ডে খুব বেশি কন্টেইনার জমেনি। তাই বন্দরের সার্বিক কার্যক্রম স্বভাবিক বলা যায়। ধর্মঘট শেষে পুরোদমে কন্টেইনার ডেলিভারি হচ্ছে। আগামী সাপ্তাহে পণ্য ডেলিভারির চাপ পুরোপুরি স্বাভাবিক হয়ে যাবে।'
বিজিএমইএর ফার্স্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট সৈয়দ নজরুল ইসলাম বলেন, 'গত শুক্রবার থেকে সোমবার পর্যন্ত টানা চার দিনের পণ্য পরিবহন ধর্মঘটের কারণে চলতি নভেম্বর মাসে ৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের রপ্তানি লক্ষ্যমাত্রা অর্জন ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।'
আমদানিকৃত পণ্য চালানের প্রায় ১০ থেকে ১২ হাজার টিইইউ কন্টেইনার ডেলিভারি নেওয়া সম্ভব হয়নি। বন্দরের স্বাভাবিক কার্যক্রমের সাথে জমে থাকা এসব কন্টেইনার ডেলিভারি দিতে আরো এক সপ্তাহ সময় লাগবে।