চট্টগ্রামে জমজমাট শীতবস্ত্রের বাজার
প্রকৃতির রূপ বদলে দুয়ারে কড়া নাড়ছে শীত। বন্দরনগরীতে সন্ধ্যা নামতেই বদলে যাচ্ছে তাপমাত্রা। তাতেই গরম হয়ে উঠেছে শীতবস্ত্রের বাজার। চট্টগ্রামে কাপড়ের পাইকারি বাজারগুলো চলতি দুই সপ্তাহ ধরে জমজমাট। ক্রেতাদের আনাগোনা বেড়েছে খুচরা দোকানগুলোতেও।
ব্যবসায়ী সংগঠনগুলোর তথ্যমতে, পাইকারি ও খুচরা মিলিয়ে এবারে চট্টগ্রামে হাজার কোটি টাকার শীতবস্ত্রের বিকিকিনি হবে।
চট্টগ্রামের মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত মানুষের কাছে অতি পরিচিত নাম জহুর হকার্স মার্কেট। গরম কাপড়ের পাইকারি ও খুচরা মার্কেট হিসেবে ঐতিহ্য রয়েছে এই মার্কেটের।
হকার্স মার্কেটের বিনিময় স্টোরের স্বত্বাধিকারী টিপু সুলতান টিবিএসকে বলেন, "শীত আসার আগে এই দোকানে শার্ট-প্যান্ট ও টি-শার্ট বিক্রি হতো। কিন্তু শীতের সময় আমরা গরম কাপড় বিক্রি শুরু করেছি।"
তিনি জানান, হকার্স মার্কেটে মেয়েদের সোয়েটার ও জ্যাকেটের দাম মানভেদে ২০০ থেকে ৮০০ টাকা, ছেলেদের সোয়েটার ১০০ থেকে ৫০০ টাকা, ছেলেদের জ্যাকেট ৩০০ থেকে ৩০০০ টাকা, বাচ্চাদের সোয়েটার ৫০ থেকে ৬০০ টাকা, মাফলার ৪০ থেকে ২০০ টাকায় এবং গরম টুপি ৫০ থেকে ২৫০ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে।
জহুর হকার্স ব্যবসায়ী সমিতির সাবেক অফিস সচিব ইলিয়াস উদ্দিন দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "জহুর হকার্সের তিনটি মার্কেটে ৮০০ এর বেশি দোকান আছে। এর মধ্যে বড় দোকানের সংখ্যা ২০০, মাঝারি ৩৫০ এবং এর বাইরের দোকানগুলো ছোট।"
"এই শীতে প্রতিদিন ছোট দোকানে ৫ থেকে ৮ হাজার, মাঝারিতে ১৫ থেকে ২০ হাজার ও বড় দোকানে ৪০ থেকে ৪৫ হাজার টাকার ব্যবসা চলবে। সব মিলিয়ে এই মার্কেটে আগামী তিনমাসে ১০০ কোটি টাকার ব্যবসার আশা করছি," বলেন ইলিয়াস উদ্দিন।
তবে তার সঙ্গে কিছুটা ভিন্নমত পোষণ করেছেন নগরীর সবচেয়ে বড় ব্যবসা কেন্দ্র তামাকুমন্ডি লেইন বনিক সমিতির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোজাম্মেল হক।
তিনি বলেন, "আমাদের তামাকুমন্ডি লেইনে ১১০টি মার্কেটে প্রায় ১৫ হাজার দোকান রয়েছে। এর মধ্যে ৩৫ শতাংশ দোকান শীতের কাপড়ের ব্যবসা করছে। বিশাল এই আয়োজনে কত টাকার ব্যবসা হচ্ছে তা বলা মুশকিল, তবে প্রতিদিন ১ কোটি টাকার বেশি ব্যবসা হয় বলে আমাদের ধারণা।"
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক তামাকুমন্ডি লেইনের এক ব্যবসায়ী টিবিএসকে বলেন, "১১০টি মার্কেটের প্রায় ৫০ শতাংশ দোকান এই শীতে ব্যবসা করছে। সে হিসেবে, প্রায় সাড়ে ৭ হাজার পাইকারি ও খুচরা দোকান যদি দৈনিক ১০ হাজার টাকার ব্যবসাও করে, তিন মাসে এ পরিমাণ দাঁড়ায় ৪৫০ কোটি টাকা।"
"আমাদের ধারণা দেশে কাপড়ের অন্যতম প্রধান পাইকারি এই বাজারে আগামী তিনমাসে অন্তত ৭০০ কোটি টাকার ব্যবসা হবে।"
এদিকে চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জে ব্যবসায়ীরা সারা বছরই যুক্ত থাকেন ভোগ্যপণ্যের পাইকারি ব্যবসার সাথে। তবে শীতকাল এলেই এখানকার আমিন মার্কেটের ৫০ থেকে ৬০টি দোকানের ব্যবসায়ীরা আমদানি করেন পুরনো শীতের কাপড়।
ব্যবসায়ীরা জানান, বন্দর দিয়ে তাইওয়ান, কোরিয়া, জাপান প্রভৃতি থেকে নিয়ে আসা হয় পুরাতন কাপড়ের গাঁট। নগরীর হকার্স মার্কেটসহ বৃহত্তর চট্টগ্রামের ব্যবসায়ীরা এখান থেকে আমদানিকৃত গাঁট কিনে নিয়ে যায়। মূলত নিম্ন আয়ের মানুষদের টার্গেট করে এসব কাপড় আনা হয়। চলতি মৌসুমে তারা ৫০ কোটি টাকার ব্যবসার কথা জানিয়েছেন।
প্রতিদিন সন্ধ্যায় এখান থেকেই কেনা কাপড়ের পসরা বসছে নগরীর ফুটপাতে। বিশেষ করে নিউমার্কেট, কেসিদে রোড, লালদীঘির পাড়, আন্দরকিল্লা, বন্দরটিলা, দুই নম্বর গেট, বহদ্দারহাট, আগ্রাবাদ, বায়েজিদ বোস্তামি এলাকার ফুটপাতে আমদানি করা পুরনো শীতের পোশাকের জমজমাট বিকিকিনি চলছে।
চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী কাপড়ের বাজার টেরিবাজার। এখানে মোট ৮২টি মার্কেটে প্রায় তিন হাজার দোকান আছে।
টেরিবাজার ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবদুল মান্নান টিবিএসকে বলেন, "টেরিবাজার মূলক পোশাক ও প্রসাধনীর জন্য বিখ্যাত। এখানে গরম কাপড়ের মধ্যে শিশুদের কাপড়ই বেশি পাওয়া যায়। তবে এই বাজার কত টাকার তা বলা যাচ্ছে না।"
এদিকে আসন্ন শীতকে সামনে রেখে লেপ-তোশকের দোকানে কারিগরেরা ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন। ফুটপাতে বিক্রি হচ্ছে আমদানি করা নতুন-পুরনো কম্বলও।
রিয়াজউদ্দিন বাজারের পাইকারি কম্বল বিক্রেতা জান্নাত স্টোরের সিরাজুল ইসলাম বলেন, "বিভিন্ন ব্রান্ডের কম্বল ৪৫০ টাকা থেকে ৫ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া পুরোনো কম্বল মিলছে ২০০ থেকে হাজার টাকায়। প্রতিদিন ব্যবসায়ীরা অন্তত লাখ টাকার ব্যবসা করছেন।"
বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সভাপতি সালেহ সোলাইমান জানান, পাইকারি বাজারগুলোর বাইরে চট্টগ্রাম শহরে ১৫টি অভিজাত ও ৫৮টি সাধারণ বিপণিকেন্দ্র রয়েছে। শীতকে কেন্দ্র করে এসব মার্কেটের ২০ হাজারের বেশি দোকানে শীতের পোশাক, জুতা ও মোজা বেচাকেনা হচ্ছে।
চট্টগ্রাম চেম্বার সভাপতি মাহবুবুল আলম বলেন, "যেহেতু চট্টগ্রামের টেরিবাজার, জহুর হকার্স ও তামাকুমন্ডি লেইন থেকে বিভাগের সব বাজারে কাপড় যায়, সেই হিসাব বিবেচনায় নিলে চট্টগ্রামে হাজার কোটি টাকার বেচাকেনা অমূলক নয়।"