গ্রাহকদের অভিযোগের তোড়ে ভেসে গেল ইভ্যালির প্রধান নির্বাহীর ফেসবুক পোস্ট
ইভ্যালির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী মোহাম্মদ রাসেলের একটি ফেসবুক পোস্টে অভিযোগের বন্যা বয়ে গেছে। ই-কমার্স সাইটটি সময়মতো পণ্য সরবরাহ বা অর্থ ফেরত দিতে ব্যর্থ হওয়ায় মন্তব্যের ঘরে ক্ষোভ উগড়েছেন বেশিরভাগ গ্রাহক।
মাহবুবুর ইসলাম নামে ইভ্যালির এক গ্রাহক পোস্টটিতে অভিযোগ করে মন্তব্য করেছেন, 'একটি পণ্য ডেলিভারি দিতেই যদি আপনাদের ১২০ দিন লাগে, তাহলে ৪৫ দিনে ডেলিভারি দেবেন বলে কথা দিয়েছিলেন কেন?
'কথা যদি না-ই রাখতে পারেন, তাহলে কথা দিয়েছিলেন কেন?'
ইভ্যালি লাভ করছে বলে প্রতিষ্ঠানটির প্রধান নির্বাহী মোহাম্মদ রাসেল ফেসবুক পোস্টে দিলে সেখানে অভিনন্দন জানানোর বদলে ক্ষোভ ও হতাশা প্রকাশ করেন মাহবুবুর ইসলামসহ আরও অনেকে।
অনেক মন্তব্যকারী কোম্পানির লাভের কথা ফেসবুকে বলে বেড়ানো বন্ধ করে সময়মতো পণ্য সরবরাহ করতে বলেন মোহাম্মদ রাসেলকে।
রুবেল আহমেদ নামে এক গ্রাহক মন্তব্য করেন, তিনি ২০২০ সালের জুলাইয়ে একটি বাজাজ মোটরসাইকেল অর্ডার করেছিলেন। সেই অর্ডার বাতিল হয়ে যাওয়ার ১১ মাস পর তিনি তার পরিশোধকৃত টাকা ফেরত পান।
রুবেল জানান, ২০২১ সালের ২২ জানুয়ারি ইভ্যালি থেকে তাকে ফোন করে জানানো হয় যে ৭ দিনের মধ্যে তিনি রিফান্ড পেয়ে যাবেন। কিন্তু ১০দিন পেরিয়ে গেলেও তিনি টাকা ফেরত পাননি। এরপর তিনি ইভ্যালিতে ইমেইল পাঠান। কিন্তু তাও কোনো প্রতিকার পাননি। তারপর তিনি প্রতিষ্ঠানটির ফেসবুক পেজে এ নিয়ে পোস্ট করেন।
রুবেল লেখেন, 'গত ফেব্রুয়ারিতে ওরা আমাকে ফোন করে জানায় যে আমার টাকা রিফান্ড করে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু আমি এসএসএলকমারজ-এর সাথে যোগাযোগ করলে সেখান থেকা জানায় যে তারা কোনো রিফান্ড পায়নি।'
খায়ের সরকার নামে আরেকজন গ্রাহক চারটি ইনভয়েসের বিস্তারিত দিয়েছেন। ১৪৫ দিন পেরিয়ে গেলেও তাকে পণ্য সরবরাহ করা হয়নি।
খায়ের লেখেন, 'আমি এখন পর্যন্ত পাঁচবার এ সমস্যা নিয়ে রিপোর্ট করেছি। কিন্তু গত ৩৯ দিন ধরে কোনো খবর পাইনি।'
বর্তমান পরিস্থিতে মনে হচ্ছে, ইভ্যালির প্রধান নির্বাহী বারবার আশ্বস্ত করার পরও সময়মতো পণ্য সরবরাহ ও রিফান্ড না করায় প্রতিষ্ঠানটির ওপর গ্রাহকদের বিশ্বাস কমে গেছে।
আনিসুজ্জামান রাসেল নামে আরেকজন ক্ষুব্ধ গ্রাহক লিখেছেন, 'আমার এপ্রিল মাসের অর্ডারের সমস্যার সমাধান করতে পারেননি এখনও। তারপরও নিজেদের কীভাবে বাংলাদেশের সেরা ই-কমার্স সাইট দাবি করেন?'
আহসানুল কবির দিদার নামে আরেক গ্রাহক ২০২০ সালের ২২ জুনের একটি ইনভয়েস পোস্ট করে বলেন, 'ঠিক এক বছর আগে এই অর্ডার করেছিলাম। কিন্তু সেটি বাতিল হয়ে যায়। তাই আমার রিফান্ড পাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু এক বছর পরও আমি কোনো রিফান্ড পাইনি।'
আরও অনেক গ্রাহক ইনভয়েসের ছবি দিয়ে জানতে চেয়েছেন তারা পণ্য কবে পাবেন। কিংবা রিফান্ড কবে দেওয়া হবে।
কিন্তু এসব মন্তব্যের বেশিরভাগেরই উত্তর দিয়েছেন ইভ্যালির কর্মচারীরা। ক্ষুব্ধ গ্রাহকদের ধৈর্য ধরতে বলে লিখেছেন সমস্যাগুলো নিয়ে তারা কাজ করছেন।
মামুনুর রশিদ নামে এক গ্রাহক রাসেলের পোস্টের নিচে মন্তব্য করেছেন, 'একের পর এক অর্ডার নেওয়ার নাম ব্যবসা না। পণ্য ডেলিভারি না দিয়ে শুধু টাকা নেওয়ার নাম ব্যবসা না। ব্যবসা নির্ভর করে ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়ের সন্তুষ্টির ওপর। সেটা নিশ্চিত করতে না পারলে ইভ্যালি শীঘ্রই হোঁচট খাবে।'
প্রথমে সময়মতো পণ্য না পাওয়ার ব্যাপারে শত শত গ্রাহকদের অভিযোগ, তারপর ইভ্যালির ধসে পড়ার অনিবার্য ঝুঁকির ব্যাপারে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিপোর্ট। এর মধ্যে ব্র্যাক ব্যাংক তাদের কার্ড ব্যবহার করে ইভ্যালি ও আরও কয়েকটি ই-কমার্স সাইট থেকে কেনাকাটা করতে নিষেধ করেছে।
তবে ইভ্যালিতে ধস নামার সম্ভাবনা অস্বীকার করেছেন রাসেল। তিনি আশ্বস্ত করে বলেছেন যে ইভ্যালি সঠিক পথেই আছে এবং তারা প্রাথমিক দেনা শোধ করে শীঘ্রই ক্ষতি পুষিয়ে নেবেন।