করোনা মহামারিতে পিছিয়েছে আইপিও প্রকল্প বাস্তবায়ন
কোভিড-১৯ মহামারির মধ্যে পুঁজিবাজারে নতুন তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর আইপিও (ইনিশিয়াল পাবলিক অফারিংস) প্রকল্প বাস্তবায়নে চরম নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। মহামারির কারণে কোম্পানিগুলো ব্যবসায়িকভাবে মার খাচ্ছে, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে এসব প্রকল্পের কাজ সম্পন্ন করতে পারছে না।
ফলে প্রকল্প ব্যয় বেড়ে যাচ্ছে। অন্যদিকে বাস্তবায়ন কাজ পিছিয়ে যাওয়ায় ওই সব প্রকল্পগুলো থেকে রিটার্ন পাওয়ার বিষয়টিও পিছাচ্ছে। বিনিয়োগকারীরা এসব প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগ করে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।
দেখা গেছে কোম্পানিগুলোর মধ্যে অনেকে কোভিডের কারণে নতুন প্রকল্পের মেশিনারি আমদানি করতে পারেনি। আবার অনেকে মেশিনারি আমদানি করলেও মহামারির কারণে স্থাপন করতে পারছে না।
অনেকের ভবন নির্মাণের কথা থাকলেও মহামারির মধ্যে তা এগিয়েছে ধীর গতিতে। অনেকে আবার ব্যবসায়িক পরিকল্পনা পরিবর্তন করে মহামারির কবলে পড়েছে।
অনেকে টাকা ব্যবহার করতে না পেরে এফডিআর করে রেখেছেন। সব মিলিয়ে প্রকল্প বাস্তবায়ন পিছিয়ে গেছে।
২০১৮ সালের ১৭ মে ইন্ট্রাকো রিফুয়েলিং স্টেশন লিমিটেড শেয়ারবাজার থেকে ৩০ কোটি টাকা উত্তোলন করেছিল এলপিজি বোতলজাতকরণ ও ডিস্ট্রিবিউশন প্ল্যান্ট স্থাপন করার জন্য। প্রকল্পটি ১৫ মাসের মধ্যে বাস্তবায়ন করতে চেয়েছিল কোম্পানিটি।
পরবর্তী সময়ে কোম্পানিটি তার আইপিও পরিকল্পনা পরিবর্তন করে এলপিজি কারখানা কেনার সিদ্ধান্ত নেয়। কিছু মেশিনারি আমদানি করলেও কোভিডের মধ্যে তা স্থাপন করতে পারছে না। যাদের মাধ্যমে মেশিনগুলো স্থাপন করা হবে তারা কোভিডের কারণে চীন চলে গেছেন। এখনও ফেরেনি। এর ফলে প্রকল্পের কাজ থমকে গেছে।
ইন্ট্রাকো রিফুয়েলিং স্টেশন লিমিটেডের সচিব জি.এম সালাহউদ্দিন বলেন, 'করোনার আগেই আমরা মেশিনারি আমদানি সম্পন্ন করতে পেরেছিলাম। তবে তা আর স্থাপন সম্পন্ন করতে পারিনি'।
'চীন থেকে যাদের মাধ্যমে আমদানি করা হয়েছে তারাই মেশিনারি স্থাপন করে দেয়ার কথা। তবে করোনার কারণে তারা যে চলে গেছে, এখন পর্যন্ত ফিরে আসে নি। এখন অপেক্ষা করা ছাড়া আর উপায় নেই'।
একই অবস্থা দেখা গেছে নিউ লাইন ক্লথিংস লিমিটেডের ক্ষেত্রে। কোম্পানিটি ২০১৯ সালের এপ্রিল মাসে ৩০ কোটি টাকা উত্তোলন করে ভবন নির্মাণ ও মেশিনারি স্থাপনের জন্য। তবে এ সময়ের মধ্যে কোম্পানিটি উত্তোলিত টাকার ৩০ ভাগ ব্যবহার সম্পন্ন করতে পেরেছে।
করোনা মহামারির কারণে কোম্পানিটিও আমদানি করা মেশিনারি স্থাপন সম্পন্ন করতে পারছে না।
এদিকে করোনা মহামারির কারণে প্রকল্পের কাজ এগিয়ে নিতে পারছে না এডিএন টেলিকম লিমিটেড। ২০১৯ সালে কোম্পানিটি ৫৭ কোটি টাকা সংগ্রহ করেছিল অবকাঠামো উন্নয়ন, ব্যাংক ঋণ পরিশোধ ও ডাটা সেন্টার স্থাপনের জন্য। ব্যাংক ঋণ পরিশোধ করলেও প্রকল্প বাস্তবায়ন সম্পন্ন করছে না মহামারির কারণে।
সম্প্রতি কোম্পানিটি নিয়ন্ত্রণ সংস্থার কাছ থেকে আইপিও প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য চলতি বছরের ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সময় বাড়িয়ে নিয়েছে।
এডিএন টেলিকমের সচিব মো. মনির হোসেন বলেন, 'করোনার মধ্যে প্রকল্প বাস্তবায়নকে ফলপ্রসূ মনে করছেন না কোম্পানির ম্যানেজমেন্ট। তবে পরিস্থিতি স্বাভাবিকের আগেই কাজ সম্পন্ন হবে'।
রানার অটোমোবাইলস লিমিটেড তাদের আইপিও পরিকল্পনা পরিবর্তন করে নতুন প্রকল্পে বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করলেও কোম্পানিটি গবেষণা ও উন্নয়ন, যন্ত্রপাতি ক্রয় ও ব্যাংক ঋণ পরিশোধ করার জন্য শেয়ার বাজার থেকে ১০০ কোটি টাকা উত্তোলন করেছিল । তবে পরবর্তীতে কোম্পানিটি আইপিও পরিকল্পনা পরিবর্তন করে ভারতের বাজাজের থ্রি হুইলার উৎপাদন ও বাজারজাত করার নতুন সিদ্ধান্ত নেয়।
ময়মনসিংহের ভালুকায় নতুন কারখানা করতে ৩০০ কোটি টাকা বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত নেয় প্রতিষ্ঠানটি। তবে করোনার কারণে তাতে কোন উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়নি বরং আইপিও অর্থ এফডিআর করে রেখেছে প্রতিষ্ঠানটি।
করোনার কারণে রানার অটোমোবাইলসের মতো ডমিনেজ স্টিল বিল্ডিং সিস্টেমস লিমিটেডও রেগুলেটরের অনুমতি নিয়ে আইপিওর টাকা এফডিআর রেখেছে।
রেগুলেটর সূত্র বলছে, করোনার কারণে কোম্পানিগুলো নির্ধারিত সময়ে আইপিও প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে পারছে না। অনেকে সময় বাড়ানোর আবেদন করেছে। অনেকে আবার অনুমতি নিয়ে এফডিআর করে রেখেছে আইপিও অর্থ।
এদিকে তালিকাভুক্তির ৩ বছরেও আইপিওর টাকা ব্যবহার করতে পারেনি আমান কটন ফাইব্রাস লিমিটেড। এরা বিনিয়োগকারীদের ৭২ কোটি টাকা এফডিআর করে গ্রুপের অন্য প্রতিষ্ঠানকে সুবিধা দিচ্ছে বলে রেগুলেটর সূত্রে জানা গেছে।
ইতোমধ্যে কোম্পানিটির আইপিওর টাকা ব্যবহার বিষয়ে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিশেষ নিরীক্ষা করিয়েছে।