করোনার বছরে ব্যবসায়ীদের আমানত বেড়েছে ১২.৬ শতাংশ
করোনায় স্থবির অর্থনীতিতে ব্যবসা-বাণিজ্য ভালো না হলেও ব্যবসায়ী ও শিল্পপতিদের আমানতের পরিমাণ বেড়েছে। ২০১৯ সালের তুলনায় ২০২০ সালে ব্যবসায়ী ও শিল্পপতিদের ব্যাংকে রাখা আমানতের পরিমাণ বেড়েছে ১৭ হাজার কোটি টাকার বেশি যা প্রায় ১২.৬ শতাংশ।
২০১৯ সাল জুড়ে স্বাভাবিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতেও অবশ্য আমানতের পরিমাণ এতটা বাড়েনি। ২০১৮ সালের তুলনায় ওই বছর (২০১৯) আমানত বেড়েছিল প্রায় ১৩ হাজার কোটি টাকা বা ১০.৪ শতাংশ।
বৃহস্পতিবার কেন্দ্রীয় ব্যাংক প্রকাশিত শিডিউলড ব্যাংক স্ট্যাটিসটিকস প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করে এই তথ্য পাওয়া গেছে।
ব্যবসায়ী ও শিল্পপতিদের আমানতের পরিমাণ বাড়ার প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ঢাকা চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রিজ (ডিসিসিআই) এর সাবেক সভাপতি আবুল কাশেম খান দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, গেল বছর জুড়েই করোনার অনিশ্চিত পরিস্থিতিতে ব্যবসায়ীরা নতুন কোন বিনিয়োগে যেতে পারেনি, যার ফলে তাদের জমানো টাকা বেড়েছে। অন্যদিকে ২০১৯ সালে স্বাভাবিক পরিস্থিতি থাকায় বিনিয়োগ বেড়েছিল, ফলে ওই বছর আমানতের পরিমাণও অতটা বাড়েনি।
এর সাথে ২০২০ সাল জুড়ে রেমিটেন্স এর ব্যাপক প্রবৃদ্ধি ব্যবসায়ী ও সার্বিকভাবে ব্যাংকিংখাতে আমানত বাড়ার অন্যতম কারণ বলে মনে করেন মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মাহবুবুর রহমান।
তিনি বলেন, রেমিটেন্সের একটি অংশ ব্যবসায়ীদের আমানত বাড়াতেও সহায়তা করেছে। এছাড়া গেল বছর জুড়ে আমদানি কম হওয়ার প্রভাবেও তাদের আমানত বেড়েছে।
ব্যবসায়ীরা প্রতিদিন যে ব্যাংক একাউন্টের মাধ্যমে লেনদেন করে থাকেন সেটি কারেন্ট বা চলতি একাউন্ট নামে পরিচিত।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, ২০১৯ সালে কারেন্ট একাউন্টে টাকার পরিমাণ ১৫.১৫ শতাংশ কমে গেলেও ২০২০ সালে করোনার প্রকোপে ব্যবসা-বাণিজ্যে ভাটা পড়ার পরেও এর পরিমাণ ২২ শতাংশের বেশি বেড়েছে।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে সৈয়দ মাহবুর রহমান বলেন, ব্যবসা-বাণিজ্য সংক্রান্ত লেনদেন বাড়লে কারেন্ট একাউন্টে টাকা কম থাকে। এছাড়া আমানতের সুদহার ও এই ধরনের একাউন্টের খরচ কম হওয়ায় ব্যাংকগুলো ব্যবসায়ীদের কারেন্ট একাউন্ট খুলতে বেশি উৎসাহী করেছে হয়তো।
এর বাইরে গেল বছর করোনাকে কেন্দ্র করে নতুন ধরনের অনেক ব্যবসা চালু হওয়ায় অনেক ছোট ছোট উদ্যোক্তারা যে কারেন্ট একাউন্ট খুলেছিলেন তারও একটা প্রভাব পড়েছে।
তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, গেল বছর ব্যবসায়ীদের আমানতের সিংহভাগই ছিল সেভিংস ও ফিক্সড ডিপোজিট হিসেবে। মোট দেড় লাখ কোটি টাকার বেশি আমানতের মধ্যে ৮৩ হাজার কোটি টাকার বেশি ছিল ফিক্সড ডিপোজিট ও সাড়ে ৩৩ হাজার কোটি টাকার বেশি সেভিংস ডিপোজিট।
সার্বিকভাবে গেল বছর ২০১৯ সালের তুলনায় ব্যাংক একাউন্ট সংখ্যা ৯২ লাখের বেশি বেড়ে ১১ কোটি ৫৮ লাখ ছাড়িয়েছে। এসব একাউন্টে আমানতের পরিমাণ ১ লাখ ৬৪ হাজার ৬৯৫ কোটি টাকা বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় ১৩ লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকা।
বরাবরের মতই আমানতের দিক থেকে সবচেয়ে এগিয়ে আছে ঢাকা বিভাগ। এই বিভাগে মোট আমানতের পরিমাণ ৮ লাখ কোটি টাকার বেশি। আর সবচেয়ে পিছিয়ে থাকা ময়মনসিংহ বিভাগে আমানতের পরিমাণ মাত্র ২০ হাজার কোটি টাকা।