করোনাকালেও ইতিবাচক প্রবৃদ্ধির আশা করছে গার্মেন্টস শিল্প
গণটিকাদান কর্মসূচীর মধ্য দিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করায় ২০২১-২২ অর্থবছরে দেশের প্রধান রপ্তানি আয়ের খাতটির মাধ্যমে প্রায় ৩৩.৭ বিলিয়ন ডলার আয়ের আশা করছে বাংলাদেশ গার্মেন্ট ম্যানুফ্যাকচারার্স এন্ড এক্সপোর্টার্স এসোসিয়েশন (বিজিএমইএ)।
অবশ্য নিটওয়্যার রপ্তানিকারকদের সংগঠন বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স এন্ড এক্সপোর্টার্স এসোসিয়েশনের (বিকেএমইএ) প্রাক্কলন আমলে নিলে নতুন অর্থবছর তৈরি পোশাক রপ্তানি আয় ৩৫ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছবে।
চলতি অর্থবছরের ১১ মাসে ২৮.৫৬ বিলিয়ন ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি করেছে বাংলাদেশ, যা চলতি জুন শেষে ৩১.২ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত হতে পারে বলে মনে করছে বিজিএমইএ। এর মধ্যে প্রায় ৫৪ শতাংশ নিটওয়্যার ও ৪৬ শতাংশ ওভেন।
গত জুলাই থেকে ১১ মাসে নিটওয়্যার রপ্তানিতে ২০.৫ শতাংশের বেশি এবং ওভেন রপ্তানিতে ২ শতাংশের কম হারে প্রবৃদ্ধি হয়েছে।
আগামী অর্থবছর নিটওয়্যার রপ্তানিতে ১৫% প্রবৃদ্ধি অর্জিত হবে বলে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে লিখিতভাবে বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স এন্ড এক্সপোর্টার্স এসোসিয়েশনের (বিকেএমইএ) প্রথম সহ-সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেছেন, করোনা মহামারি সত্ত্বেও চলতি অর্থবছরের মে পর্যন্ত নিটওয়্যার রপ্তানিতে ২০.৫ শতাংশের বেশি প্রবৃদ্ধি হয়েছে।
চলতি অর্থবছর শেষে নিটওয়্যার রপ্তানির পরিমাণ ১৬.৭৭ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত হওয়ার আশা প্রকাশ করে রপ্তানিকারকরা বলছেন, আগামী অর্থবছর এর পরিমাণ ১৯ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যাবে বলে মনে করছে বিকেএমইএ।
অবশ্য বিজিএমইএ মনে করছে, আগামী বছর ওভেন রপ্তানিতে ৭ শতাংশ ও নিটওয়্যার রপ্তানিতে ৯ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হবে। অর্থাৎ, সব মিলিয়ে পোশাক রপ্তানিতে ৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধি আশা করছেন সংগঠনটির নেতারা।
চলতি জুন শেষে ওভেন রপ্তানি আয় প্রায় ১৪.৫ বিলিয়ন ডলার হতে পারে জানিয়ে বিজিএমইএ নেতারা বলছেন, আগামী অর্থবছর অতিরিক্ত এক বিলিয়ন ডলার রপ্তানির সম্ভাবনা রয়েছে। আগামী অক্টোবর থেকে পোশাক রপ্তানি পূর্ণমাত্রা পাবে বলে মনে করছেন তারা।
অর্থবছরের শুরুতে রপ্তানির লক্ষমাত্রা নির্ধারণ করে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি)। সেজন্য এবারও রপ্তানিমুখী বিভিন্ন খাতের এসোসিয়েশনগুলোর কাছে রপ্তানি লক্ষমাত্রার প্রাক্কলন চেয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।
নতুন অর্থবছরের জন্য ইপিবি তৈরি পোশাক খাতে ১০ শতাংশ প্রবৃদ্ধি প্রাক্কলন করার প্রস্তাব করেছে, যেখানে নিটওয়্যার রপ্তানিতে ১১ শতাংশ এবং ওভেন রপ্তানিতে ৯ শতাংশ প্রবৃদ্ধি আশা করা হয়েছে।
বিকেএমইএ'র প্রথম সহ-সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, 'পোশাক শিল্পের প্রধান বাজার উন্নত বিশ্বের দেশগুলো করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ অনেকাংশে নিয়ন্ত্রণে সক্ষম হয়েছে। এসব দেশের অর্থনীতি ক্রমান্বয়ে ঘুরে দাঁড়াচ্ছে। এই অবস্থায় দেশের ও রপ্তানি বাজারগুলোর করোনা নিয়ন্ত্রণ রাখা গেলে পোশাক রপ্তানি বাড়বে বলে আমরা আশাবাদী'।
'সামগ্রিক দিক বিবেচনা করে বিকেএমইএ মনে করে আগামী অর্থবছর নিটওয়্যার রপ্তানিতে ১৫% প্রবৃদ্ধি অর্জিত হবে', যোগ করেন তিনি।
অবশ্য নিটওয়্যার রপ্তানিতে এতো বেশি প্রবৃদ্ধি হবে না বলে মনে করছেন বিজিএমইএ'র সহ-সভাপতি মোঃ শহীদুল্লাহ আজিম। টিবিএসকে তিনি বলেন, আগামী অর্থবছর ৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধি ধরে পোশাক রপ্তানি হতে পারে ৩৩.৭ বিলিয়ন ডলার। এর মধ্যে নিটওয়্যার ৯ শতাংশ আর ওভেন ৭ শতাংশ বাড়তে পারে।
তিনি বলেন, 'কোভিডের আগের (২০১৮-১৯) অর্থবছরের চেয়ে পরের বছর পোশাক রপ্তানি কমেছিল প্রায় ৬ বিলিয়ন ডলার। আমরা আশা করছি চলতি অর্থবছর শেষে পোশাক রপ্তানি ৩১.২ বিলিয়ন ডলার হবে'।
'বাজার এখনো অস্থিতিশীল। চলতি অর্থবছর পোশাক রপ্তানি হতে পারে ৩১.২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। আশা করছি আগামী অক্টোবর থেকে বাজার পিক করতে শুরু করবে। তাতে আমরা হিসাব করে দেখেছি চলতি বছরের চেয়ে ৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হবে।'
ইপিবির পরিসংখ্যান অনুযায়ী, করোনা ভাইরাস আঘাতের বছর অর্থাৎ ২০২০-২১ অর্থবছরে বাংলাদেশ বিশ্ববাজারে পোশাক রপ্তানি করেছিলো ২৭.৯৫ বিলিয়ন ডলার, যা আগের অর্থবছরের চেয়ে ১৮.১২ শতাংশ কম।
এর আগের অর্থাৎ স্বাভাবিক অর্থনীতির বছর ২০১৮-১৯ এ পোশাক রপ্তানি হয়েছিলো ৩৪.১৩ বিলিয়ন ডলার। বিজিএমইএ মনে করছে, আগামী অর্থবছরে পরিস্থিতির আর অবনতি না হলে রপ্তানি ২০১৮-১৯ অর্থবছরের কাছাকাছি হবে।
ইপিবির প্রাক্কলন সম্পর্কে শহীদুল্লাহ আজিম বলেন, 'ইপিবির প্রাক্কলন অনুযায়ী রপ্তানি হওয়ার সম্ভাবনা কম। আমরা বাস্তবতার ভিত্তিতে প্রাক্কলন করেছি'।
বিকেএমইএ'র সঙ্গে বিজিএমইএ'র প্রাক্কলনে এত ব্যবধান কেন- এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, এতদিন ধরে নিটওয়্যার রপ্তানি বেড়েছে। এখন নিটওয়্যার রপ্তানি খুব বেশি হারে বাড়বে না। বাজার খোলায় ওভেন রপ্তানি বাড়তে পারে।
বিকেএমইএ'র পরিচালক ফজলে শামীম এহসান টিবিএসকে বলেন, 'আমরা মনে করছি, আগামী বছরও নিটওয়্যারের ভালো চাহিদা থাকবে। আর সার্বিক বিবেচনায় বায়ারদের কাছে এই পোশাকের জন্য অপেক্ষাকৃত ভালো বিকল্প এখনো বাংলাদেশ'।