এডিপি বাস্তবায়নে গতি ফিরেছে
কোভিড পরবর্তী পরিস্থিতে সরবরাহ ব্যবস্থা ব্যাহত হওয়া ও বিদেশি দক্ষ জনবল সংকটের কারণে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি( এডিপি) বাস্তবায়ন ধীরগতির হয়ে পড়েছিল। কিন্তু, কোভিডের পরিস্থিতি উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে এডিপি বাস্তবায়নেও গতি ফিরেছে। চলতি অর্থবছরের প্রথম চার মাসে (জুলাই থেকে অক্টোবর) এডিপি বরাদ্দের ১৩.০৬ শতাংশ অর্থ ব্যয় করতে সক্ষম হয়েছে মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলো।
কোভিড পরিস্থিতিতে গত অর্থবছরের একই সময়ে এডিপি বাস্তবায়ন হার ছিল ১২.৭৯ শতাংশ। কোভিড পূর্ব ২০১৯-২০ অর্থবছরে এ হার ছিল ১৪.২৫ শতাংশ। বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) হালনাগাদ প্রতিবেদনে এই তথ্য উঠে এসেছে।
আইএমইডির প্রতিবেদনে দেখা গেছে, মহামারি আসার আগে ২০১৯-২০ অর্থবছরের সরকারি তহবিলের অর্থায়ন থেকে যে বরাদ্দ ছিল তার ১৭ শতাংশ অর্থ ব্যয় হয়েছিল প্রথম চার মাসে। সে তুলনায় চলতি অর্থবছরে প্রথম চার মাসে সরকারি তহবিলের অর্থ ব্যয় হয়েছে ১৪.২৮ শতাংশ। তবে এ সময়ে বৈদেশিক তহবিল ও বাস্তবায়নকারী সংস্থারগুলোর নিজস্ব তহবিল থেকে অর্থ ব্যয়ের হার কোভিড পূর্ব হারের চেয়ে কিছুটা বেড়েছে।
বাংলাদেশ সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী এবং সাসেক-২: এলেঙ্গা-হাটিকুমরুল-রংপুর মহাসড়ক চার লেনে উন্নীতকরণ প্রকল্প পরিচালক ড. মো. ওয়ালিউর রহমান জানান, "কোভিডের কারণে নির্মাণ সামগ্রীর সরবরাহ ব্যাহত হওয়ায় প্রকল্প বাস্তবায়নে ধীরগতি ছিল। যেমন- ভারতীয় পাথর আমদানি বন্ধ থাকায় এলেঙ্গা-হাটিকমরুল-রংপুর মহাসড়ক চারলেনে উন্নীতকরণের কাজেও সমস্যা হয়েছিল। কিন্তু এখন এ সমস্যা কমে আসছে, ফলে বাস্তবায়ন কাজেও আগের গতি ফিরতে শুরু করেছে। আবার অবকাঠামো খাতের অনেক প্রকল্পে বিদেশি পরামর্শক ও দক্ষ শ্রমিকের কিছু ঘাটতি ছিল, কিন্ত এখন আর সে সমস্যা নেই।"
এপ্রসঙ্গে, সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিং (সানেম) এর গবেষণা পরিচালক ড. সায়মা হক বিদিশা বলেছেন, "বাংলাদেশে বরাবরই একইভাবে এডিপি বাস্তবায়ন হচ্ছে। দেখা যায়, অর্থবছরের শুরুতে অর্থ ব্যয় কম থাকে। মোট বরাদ্দের বেশিরভাগ অর্থই ব্যয় হয় অর্থবছরের শেষ দুই–তিন মাসে। কোভিড আসার পর এডিপি বাস্তবায়ন বাধাগ্রস্ত হলেও বাস্তবায়ন হারে তেমন কোনো পার্থক্য তৈরি হয়নি। তবে এডিপি বাস্তবায়নে মূল সমস্যা থেকে বের হতে পারছেনা মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলো। এ কারণে অর্থবছরের শুরু থেকে লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী ও গুণগত মান বজায় রেখে বাস্তবায়ন করা যাচ্ছে না।
এ লক্ষ্যে মনিটরিং ব্যবস্থা জোরদার এবং প্রয়োজনীয় সংস্কারের দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার পরামর্শ দেন তিনি।
এদিকে বরাবরের মতো এডিপিতে সর্বোচ্চ বরাদ্দ পাওয়া ১৫ মন্ত্রণালয় বা বিভাগের মধ্যে অর্থব্যয়ে সবচেয়ে পিছিয়ে আছে স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ। অর্থবছরের প্রথম চার মাসে (জুলাই-অক্টোবর) স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ খরচ করতে পেরেছে বরাদ্দের মাত্র ৩.৯৯ শতাংশ অর্থ। শুরুতেই বাস্তবায়নের এ গতি নিয়ে অর্থবছরের শেষে গিয়ে বরাদ্দের উল্লেখযোগ্য অংশ ব্যয় করা যাবে কিনা- তা নিয়েও শঙ্কা তৈরি হয়েছে।
কোভিড পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্য খাতের বেহালদশা ফুটে উঠলেও গত ২০২০-২১ অর্থবছর শেষে স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ বরাদ্দের ৪২ শতাংশ অর্থ ব্যয় করতে পারেনি।
বাস্তবায়নে পিছিয়ে আছে স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগও। অর্থবছরের প্রথম চার মাসে এ বিভাগের অর্থ ব্যয় ৬ শতাংশ।
স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, কিছু প্রকল্প বাস্তবায়নে জটিলতা তৈরি হয়েছে। প্রকল্প বাস্তবায়নের সঙ্গে যুক্তদের বেশির ভাগই চিকিৎসক। অর্থব্যয় বা ভৌত অবকাঠামো নির্মাণে তাদের অভিজ্ঞতা কম থাকায়, যথাসময়ে প্রকল্প বাস্তবায়ন এবং অর্থব্যয় করা সম্ভব হয় না।
দেশের সবচেয়ে বড় ব্যয়ের প্রকল্প, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়। লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী, অর্থব্যয় করতে না পারার কারণে এ মন্ত্রণালয়ের এডিপি বাস্তবায়ন হারও কম। অর্থবছরের প্রথম চার মাসে বরাদ্দের মাত্র ৯.৫০ শতাংশ অর্থব্যয় করেছে মন্ত্রণালয়টি।
সর্বোচ্চ বরাদ্দ থাকার পরও বাস্তবায়নে পিছিয়ে থাকা অন্যান্য মন্ত্রণালয় ও বিভাগের মধ্যে রয়েছে; নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়, বেসামরিক বিমান ও পর্যটন মন্ত্রণালয় এবং গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়।