এডিআর না কমালে ঋণ দিতে পারবে না ন্যাশনাল ব্যাংক
ঋণ-আমানত অনুপাত (অ্যাডভান্স ডিপোজিট রেশিও-এডিআর) কমিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্ধারিত মাত্রায় নামিয়ে আনতে না পারলে নতুন করে ঋণ দিতে পারবে না ন্যাশনাল ব্যাংক।
সোমবার (৩ মে) ন্যাশনাল ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বরাবর পাঠানো এক চিঠিতে এই নিষেধাজ্ঞার কথা জানিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
পাশাপাশি বৃহৎ ঋণ ও একক গ্রাহক ঋণ সীমা নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে। অন্যদিকে, সিনিয়র কর্মকর্তা নিয়োগে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অনুমতি নেওয়ার বাধ্যবাধকতা দেওয়া হয়েছে। এছাড়া শীর্ষ গ্রাহকদের ঋণ আদায় পরিস্থিতিও জানতে চেয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
বাংলাদেশ ব্যাংকের ডিপার্টমেন্ট অব অফ-সাইট সুপারভিশন (ডিওএস)-এর মহাব্যবস্থাপক মো. আনোয়ারুল ইসলাম স্বাক্ষরিত ওই চিঠিতে বলা হয়, ব্যাংকের এডিআর বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্ধারিত সীমা ৮৭ শতাংশে নামিয়ে না আনা পরযন্ত নতুন কোন ঋণ বিতরণ করা যাবে না।
বর্তমানে ন্যাশনাল ব্যাংকের আমানত প্রায় ৪৩ হাজার কোটি টাকা এবং ঋণ ৪১ হাজার কোটি টাকা। ঋণ আমানত অনুপাত দাঁড়ায় ৯২ শতাংশ। অর্থাৎ ব্যাংকটি ১০০ টাকার বিপরীতে ৯২ টাকা ঋণ দিয়ে ফেলেছে।
নির্ধারিত সীমার বাইরে ঋণ দিলে আমানত ঝুঁকির মধ্যে পড়ে যায়। তাই আমানতকারীদের স্বার্থ সুরক্ষায় ন্যাশনাল ব্যাংকের ঋণ প্রদান বন্ধ করা হয়েছে বলে জানিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। মূলত ন্যাশনাল ব্যাংকের বেনামী ঋণ বিতরণ ঠেকাতেই এমন নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
গত ১০ ফেব্রুয়ারি ন্যাশনাল ব্যাংকের চেয়ারম্যান জয়নুল হক সিকদারের মৃত্যুর পর তার স্ত্রী মনোয়ারা সিকদার নতুন চেয়ারম্যানের দায়িত্ব নেন। এরপর কোনো পর্ষদ সভা না হলেও প্রায় ৫০০ কোটি টাকা ঋণ দিয়েছে ব্যাংকটি। বিতরণ করা ঋণের সুবিধাভোগী নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
চেয়ারম্যানের মৃত্যুর পর সিকদার পরিবারের মধ্যেই ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে ক্ষমতার দ্বন্দ্ব শুরু হয়। ব্যাংকটির কিছু শীর্ষ কর্মকর্তাও অনিয়মে জড়িয়ে পড়েন। সব মিলিয়ে প্রথম প্রজন্মের এই ব্যাংকটি সমস্যাগ্রস্ত ব্যাংক হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনায় আরও বলা হয়েছে, ঋণ বিতরণের প্রবৃদ্ধি ১০ শতাংশের বেশি হতে পারবে না। এছাড়া বৃহৎ ঋণের পরিমাণ পরিশোধিত মূলধনের ৫ শতাংশের বেশি বা ১৫৩.৩২ কোটি টাকার বেশি হতে পারবে না। ব্যাংকটির বর্তমান পরিশোধিত মূলধন ৩,০৬৬.৪২ কোটি টাকা।
অন্যদিকে একক গ্রাহক ঋণ সীমা (সিঙ্গের বরোয়ার এক্সপোজার লিমিট) ৩০৬.৬৪ কোটি (ফান্ডেড ও নন-ফান্ডেডসহ) টাকার বেশি হতে পারবে না। তবে ঋণ নবায়ন করার ক্ষেত্রে এই শর্ত প্রযোজ্য হবে না।
ন্যাশনাল ব্যাংক অন্য কোন ব্যাংকের ঋণ কিনতে পারবে না। ব্যাংকের শীর্ষ ২০ ঋণ গ্রহিতার ঋণ আদায়ের তথ্য প্রতি মাসে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ডিওএস কে জানাতে হবে। এছাড়া ব্যাংকের উপদেষ্টা, পরামর্শক কিংবা সিনিয়র কর্মকর্তাদের পুনঃনিয়োগ বা চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অনুমোদন নিতে হবে।