এক দশকে দেশে তেল পরিশোধনের ব্যয় বেড়েছে ৮২ শতাংশ
দেশের একমাত্র রাষ্ট্রায়ত্ত তেল শোধনাগার ইস্টার্ন রিফাইনারি লিমিটেডের (ইআরএল) প্রতি লাখ টন তেল শোধনের খরচ এক দশকে ৮২ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি পাওয়ায় বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) ব্যয় বাড়ছে।
কর্তৃপক্ষের মতে, পুরোনো যন্ত্রপাতির কারণে দীর্ঘ সময় ধরে পরিশোধন এবং ইউটিলিটি খরচ বৃদ্ধি পাওয়ায় তেল শোধনের খরচ বাড়ছে।
পরিশোধিত তেল আমদানির ব্যয় অনেক বেশি। বিকল্প না থাকায় বিপিসিকে ১৯৬৮ সালে প্রতিষ্ঠিত পুরোনো এবং একমাত্র সরকারি তেল শোধনাগারটির ওপর নির্ভর করতে হচ্ছে।
তেল শোধনে দীর্ঘ সময় লেগে যাওয়ার সঙ্গে পরিশোধন খরচ বাড়ার সম্পর্কের কথা স্বীকার করেন শোধনাগারের কর্মকর্তারা।
ইআরএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী মোহাম্মদ লোকমান দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "প্রতিবছর প্ল্যান্টের মেরামত, যন্ত্রাদি প্রতিস্থাপন এবং রক্ষণাবেক্ষণের খরচ বাড়ছে।"
"এছাড়া গ্যাস, পানি ও বিদ্যুৎ খরচ বেড়ে যাওয়ায় ইউটিলিটি খরচও বাড়ছে। ফলে তেল পরিশোধনের ব্যয়ও বাড়ছে," বলেন তিনি।
২০১০-১১ অর্থবছরে ইআরএল ৮৯.৮ কোটি টাকায় ১৩.৪২ লাখ টন খনিজ তেল পরিশোধন করে। ২০১৯-২০ অর্থবছরে খনিজ তেলের পরিমাণ ১০.৭৮ লাখ টন কমলেও পরিশোধন খরচ বেড়ে ১৩১ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে। অর্থাৎ, এক বছরে পরিশোধন খরচ ৮১ দশমিক ৬১ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।
ইআরএল বিপিসির অঙ্গসংগঠন। প্রকৌশলী লোকমান বলেন, সার্বিক খরচ বিবেচনায় বিপিসি তেল পরিশোধন খরচ নির্ধারণ করে।
তবে, ২০২০-২১ সালে ইআরএল ১৫ লাখ টন তেল শোধনের নতুন রেকর্ড গড়ায় তেল শোধনাগারের সক্ষমতা এখনও যথেষ্ট বলে দাবি করেন তিনি।
বিপিসির চেয়ারম্যান এবিএম আজাদ বলেন, "তেল পরিশোধন খরচ কেবল প্ল্যান্টের সক্ষমতার ওপর নির্ভর করে না। সরকারি নীতিমালা এবং খনিজ তেলের যোগানও পরিশোধন খরচ ওঠানামার জন্য দায়ী।"
ডিজেল, পেট্রোল, অক্টেন এবং বিমানের জ্বালানিসহ ১৬ ধরনের জ্বালানি উৎপাদনের মাধ্যমে ইআরএল দেশের মোট জ্বালানি চাহিদার ২০ শতাংশ পূরণ করে থাকে।
২০১৯-২০ অর্থবছরে বিপিসি পরিশোধিত ডিজেল, জেট-১ জ্বালানি ও ফার্নেস তেল আমদানিতে ১৭ হাজার ৭৩২ কোটি টাকা ব্যয় করে।
আগাচ্ছে না দ্বিতীয় পরিশোধন ইউনিটের কাজ
৩০ লাখ টন তেল পরিশোধন ক্ষমতাসম্পন্ন আরেকটি রিফাইনারি ইউনিট স্থাপনের পরিকল্পনা করছে বিপিসি।
২০১৭ সালের জানুয়ারিতে ফ্রান্সের টেকনিপ এবং মালেশিয়ার টেকনিপ জিওপ্রোডাকশনের সঙ্গে কাজ করতে বিপিসি চুক্তি স্বাক্ষর করে।
চুক্তির বিধি অনুসারে, ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বরে ফ্রন্ট-এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং ডিজাইন সম্পন্ন হয় এবং বিপিসি ফ্রান্সের টেকনিপের কাছে বিড ডকুমেন্ট পাঠায়। টেকনিপ ২০১৯ এ ৬১১টি বিড কোয়ারি জমা দেয়।
পরবর্তীতে সংশোধিত কারিগরি প্রস্তাবনা টেকনিপে না পাঠানোয় তখন থেকেই আটকে রয়েছে প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ।