উচ্চ রিটার্নের সুযোগ বাংলাদেশকে বিনিয়োগের আকর্ষণীয় গন্তব্যে পরিণত করেছে
বিনিয়োগের ক্ষেত্রে কিছু চ্যালেঞ্জ থাকলেও তা অতিক্রম করে দীর্ঘমেয়াদে বিনিয়োগের জন্য বাংলাদেশ ভালো গন্তব্য বলে মনে করছেন বিদেশি বিনিয়োগকারীরা। তারা জানান, দীর্ঘমেয়াদে এখানে বিনিয়োগের রিটার্ন অপেক্ষাকৃত বেশি। অতীতের তুলনায় এদেশে ব্যবসায়ের সুযোগ আরো ভালো হয়েছে বলেও মনে করেন তারা।
আজ বুধবার (২৭ অক্টোবর) 'বাংলাদেশ ও ইউরোপের অর্থনৈতিক সম্পর্ক: নতুন নিয়ন্ত্রক বিধিমালার শাসন' শীর্ষক এক ওয়েবিনারে বাংলাদেশে বৃহৎ দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীদের প্রতিনিধিরা এখানে ব্যবসায়ের এমন সম্ভাবনার কথা তুলে ধরেন।
বুধবার ছিল বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ইনভেস্টমেট সামিটের দ্বিতীয় দিন, যা বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও ঢাকা চেম্বার অব কমার্স (ডিসিসিআই) যৌথভাবে আয়োজন করেছে।
ওয়েবিনারে প্রধান অতিথি ছিলেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুন্সী। সঞ্চালক ছিলেন ডিসিসিআই এর সভাপতি রিজওয়ান রহমান।
এতে বক্তব্য প্রদানকালে ইউনিলিভার বাংলাদেশ লিমিটেডের প্রধান নির্বাহী ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) জাভেদ আখতার বাংলাদেশে দিনে দিনে তাদের ব্যবসায়ের প্রসারিত হওয়ার গল্প তুলে ধরেন। এ সময় বিদেশী বিনিয়োগকারীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, কয়েক বছরের জন্য নয়, 'এদেশে সবাই দীর্ঘমেয়াদে ব্যবসা করার উদ্দেশ্য নিয়ে আসবেন।'
স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক, বাংলাদেশের প্রধান নির্বাহী নাসের এজাজ বিজয় ইউনিলিভার বাংলাদেশের সিইও'র বক্তব্য সমর্থন করে বলেন, '২০০৮ সালে বুঝেছি, এই বাজার সম্ভাবনাময়। স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক ব্যাপক লাভবান হয়েছে।'
তিনি বলেন, যে কোন উদীয়মান বাজারে কিছু চ্যালেঞ্জ থাকে, তবে এখানে রিটার্ন অপেক্ষাকৃত বেশি।
গ্রামীণফোন লিমিটেডের সিইও ইয়াসির আজমান বলেন, বাংলাদেশে সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণের ব্যাপক সুযোগ রয়েছে এবং বিদ্যমান চ্যালেঞ্জগুলি মোকাবিলায় আমরা মিলিতভাবে কাজ করছি।
আলোচনায় স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণ পরবর্তী চ্যালেঞ্জ এবং তা মোকাবেলায় কী ধরনের উদ্যোগ নেওয়া যায়, তা নিয়ে বক্তারা নিজেদের পরামর্শ তুলে ধরেন।
ডিসিসিআই প্রেসিডেন্ট রিজওয়ান রহমান তাঁর বক্তব্যে বাংলাদেশ ও ইউরোপের মধ্যে বাণিজ্য বাড়ানোর ক্ষেত্রে বিদ্যমান চ্যালেঞ্জ ও তা উত্তরণের উপায় তুলে ধরেন।
বিদেশি বিনিয়োগকারীদের উদ্দেশ্যে মোহাম্মদী গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও বিজিএমইএ'র সাবেক সভাপতি রুবানা হক বলেন, 'কেবল বলা হয়, বাংলাদেশ শুল্কমুক্ত সুবিধায় রপ্তানি করছে। কিন্তু এতে কি কেবল আমরাই উপকৃত হই? আপনি কিংবা আপনার দেশের (যেসব দেশে বাংলাদেশ এ সুবিধা পায়) কনজ্যুমার উপকৃত হচ্ছে না? বাংলদেশ যে সবচেয়ে কম কার্বন নিঃসরণকারী দেশ, সেটি কেন আলোচনায় আসে না?'
তিনি বলেন, 'সোর্সিংয়ে টেকসইতা প্রয়োজন। কিন্তু আমরা মোটেই টেকসই মূল্য পাচ্ছি না।' আলোচনায় রপ্তানি পণ্যসম্ভার বৈচিত্র্যকরণে গুরুত্ব দেন রুবানা হক।
এ সময় এলডিসি গ্রাজুয়েশন পরবর্তীতে বাংলাদেশের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ সংকেত রয়েছে উল্লেখ করে, বাংলাদেশকে কৌশল ঠিক করার অংশ হিসেবে আঞ্চলিক বিভিন্ন জোটে যুক্ত হওয়ার পরামর্শও দেন তিনি।
সম্প্রতি ইউরোপীয় ইউনিয়নের জেনারেলাইজড স্কিম অব প্রেফারেন্স (জিএসপি) প্লাস খসরা প্রস্তাবনার আওতায় শুল্কমুক্ত সুবিধা পেতে নানান সুবিধা ও চ্যালেঞ্জের কথাও আলোচনা করেন বিজিএমইএ'র সাবেক সভাপতি।
ওয়েবিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেন, 'আমাদের কাছ থেকে ন্যায্য ব্যবহার না পেলে ইউরোপীয় উদ্যোক্তারা এদেশে ব্যবসা করতে কেন আসবেন? বাণিজ্য ক্ষেত্রে বিভিন্ন ধরনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে বাংলাদেশ ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে বাণিজ্য আলোচনা অব্যাহত রেখেছে, যাতে বাংলাদেশে ব্যবসা করতে আসা ইউরোপীয়রা যেসব চ্যালেঞ্জের মুখে পরেন সেগুলো যেন দূর করা যায়। তাদের সমস্যাগুলো নিয়ে সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলোয় নিয়মিত আলোচনা হচ্ছে।'
তিনি আরও বলেন, 'এদেশে ব্যবসা করতে আমাদের বিদেশি অংশীদাররা যেন স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন, এজন্য চূড়ান্তভাবে সবার জন্যই সমান সুযোগের পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে।'
বিদেশে বাংলাদেশকে ভুলভাবে উপস্থাপন করা হচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, 'মিথ্যে তথ্য ও অপপ্রচারের কারণে প্রায়শই বিদেশি ব্যবসায়ীরা আমাদের ভুল বুঝে থাকেন। আমি বিদেশি বন্ধু ও ব্যবসায়ীক সহকর্মীদের বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উন্নয়নে একযোগে কাজ করার অনুরোধ করছি।'
জিএসপি নিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের গত মাসে প্রকাশিত খসরা প্রস্তাবনা বাংলাদেশের জন্য লাভজনক হবে উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, প্রস্তাবিত নুতন নীতিমালায় 'ইমপোর্ট-শেয়ার ক্রাইটেরিয়া' বাদ দেওয়া হয়েছে। এর মাধ্যমে বাংলাদেশ সরাসরিভাবে উপকৃত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
'বাংলাদেশ ২০২৬ সালে এলডিসি গ্রাজুয়েশন করে উন্নয়নশীল দেশে পরিণত হবে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন এভরিথিং বাট আর্মস নীতির আওতায় বাংলাদেশের ৯৭ ভাগ রপ্তানি পণ্যের উপর জিএসপি সুবিধা দিচ্ছে। গ্রাজুয়েশনের পরও ৩ বছর অর্থাৎ ২০২৯ সাল পর্যন্ত শুল্কমুক্ত বাণিজ্য সুবিধা অব্যাহত রাখতে সম্মত হয়েছে ইইউ।'
তবে দীর্ঘমেয়াদে বাংলাদেশকে জিএসপি প্লাস নীতিমালার ব্যাপারে আরও সতর্ক থাকবে বলেও উল্লেখ করেন টিপু মুনশি।
'নতুন জিএসপি প্লাস সুবিধা পেতে আমাদেরকে সুষ্ঠু শ্রম পরিবেশ, সুশাসন এবং প্রাকৃতিক পরিবেশ রক্ষায় উদ্যোগী হতে হবে। কারণ, ইইউ জিএসপি সুবিধার ক্ষেত্রে প্যারিস জলবায়ু চুক্তি, আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার আইন ও জাতিসংঘের বেশকিছু কনভেনশন ও চুক্তি সংযোজনের প্রস্তাব দিয়েছে।
ওয়েবিনারে ইওন গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোমিন উদ দৌলাসহ অনান্যরাও বক্তব্য দেন ।