ইপিজেডে বিনিয়োগে সবার চেয়ে এগিয়ে দক্ষিণ কোরীয়রা
বাংলাদেশ রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চলগুলোতে (ইপিজেড) বিনিয়োগকারী দেশের তালিকায় সবার উপরে রয়েছে এশিয়ার দেশ দক্ষিণ কোরিয়া। দেশটির ৭১ জন বিনিয়োগকারী তাদের অর্থ ঢেলেছেন এই ইপিজেডগুলোতে।
এছাড়াও বাংলাদেশের রপ্তানি আয়, বৈদেশিক বিনিয়োগ এবং কর্মসংস্থানে ব্যাপক অবদান রাখা এসব ইপিজেডে বিনিয়োগ রয়েছে চীনের ৫৬ জন, হংকংয়ের ২৮ জন, জাপানের ৩১ জন, তাইওয়ানের ২৫ জন এবং ভারতের ২০ জন বিনিয়োগকারীর।
ইপিজেডগুলোতে বিনিয়োগের অনুকূল পরিবেশ আরও বিদেশী কোম্পানিকে আকর্ষণ করছে। তাদের মধ্যে একটি হল- দক্ষিণ কোরিয়াভিত্তিক বিখ্যাত পোশাক প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান কিডো ইন্ডাস্ট্রিয়াল কোম্পানি।
নতুন একটি কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করতে এবং সম্প্রতি অধিগ্রহণ করা একটি ফার্ম সংস্কার করতে আদমজী ইপিজেডে ৩৬.১৭ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের ঘোষণা দিয়েছে এ প্রতিষ্ঠানটি।
কোম্পানিটি মোটরসাইকেল সেফটি জ্যাকেট, লেদার জ্যাকেট এবং ফাইবার জ্যাকেটসহ উচ্চ মূল্যের পণ্য তৈরি করবে।
কিডো ঢাকা কোম্পানি লিমিটেডের পরিচালক জোসেফ আহন বলেন, বাংলাদেশে এই সেক্টরে প্রচুর দক্ষ শ্রমিক রয়েছে।
কিডো ঢাকা কোম্পানি লিমিটেডের জেনারেল ম্যানেজার হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন বাংলাদেশি নাগরিক মো. জহিরুল ইসলাম।
দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে তিনি বলেন, "আমি বিদেশি প্রতিষ্ঠানে কাজ করে অভ্যস্ত। ইপিজেডে আমার প্রায় ১২ বছর কাজের অভিজ্ঞতা। আমার এ অভিজ্ঞাতা আমি কিডো ঢাকা কোম্পানি লিমিটেডে প্রয়োগ করতে পারবো। আসলে ইপিজেড সুযোগ করে দিয়েছে বিদেশি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কাজ করার।"
বাংলাদেশ ছাড়া বিশ্বের ৩৮টি দেশের শিল্পপ্রতিষ্ঠানের বিনিয়োগ রয়েছে ইপিজেডগুলোতে। বিনিয়োগ করা দেশগুলোর মধ্যে রয়েছে চীন, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ভারত, শ্রীলংকা, কানাডা, মালয়েশিয়া, জার্মানি, নেদারল্যান্ড, সিঙ্গাপুর, পাকিস্তান, ডেনমার্ক, ফ্রান্স।
অর্থনীতিবিদরা ইপিজেডের এই সাফল্যের জন্য সস্তা শ্রমিকের সহজলভ্যতা এবং সরকারের সময়োপযোগী সিদ্ধান্তের কথা বলেছেন।
এছাড়াও, কাজের ভালো পরিবেশ ইপিজেডগুলোকে দেশি এবং বিদেশি বিনিয়োগকারীদের জন্য বিনিয়োগের জন্য একটি আকর্ষণীয় জায়গা করে তুলেছে।
বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ এর (সিপিডি) গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার মোয়াজ্জেম হোসেন দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, অন্যান্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশের ইপিজেড গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।
"এটা মডেল হিসেবে দেখানো হয়। বিশেষ করে ঢাকা, চট্টগ্রাম ইপিজেডে অনেক বড় বিনিয়োগ এসেছে। বিদেশি বিনিয়োগকারীরা যেহেতু নতুন আইডিয়া ও টেকনোলজি নিয়ে আসে তাই তাদের কাছ থেকে আমাদের উদ্যোক্তারা শিখতে পারে। সেগুলো পরে রিফর্ম করতে পারে। আমাদের কর্মীরা বিদেশি শিল্প প্রতিষ্ঠানে কাজ করছে সেখান থেকে তারা বিভিন্ন প্রযুক্তি সম্পর্কে জানছে। এর ফলে টেকনোলজি ট্রান্সফর্ম হচ্ছে।"
তিনি বলেন, "কর্মপরিবেশ ভালো থাকায় ইপিজেড এলাকায় উদ্যোক্তাদের জমি চাহিদা রয়েছে। তাই দ্রুত নতুন ইপিজেড যেন ডেভলপ করা হয়। যেখানে দেশি বিদেশি বিনিয়োগকারীরা সুযোগ পাবে।"
বাংলাদেশ অর্থনৈতিক প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল কর্তৃপক্ষের (বেপজা) ব্যবস্থাপনা পরিচালক (জনসংযোগ) নাজমা বিনতে আলমগীর দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, চট্টগ্রাম ইপিজেড, ঢাকা ইপিজেড, কুমিল্লা ইপিজেড, কর্ণফুলী ইপিজেড এবং আদমজী ইপিজেডে কোনো প্লট খালি নেই।
"অন্য ইপিজেড এ দুই একটা প্লট খালি রয়েছে। সেটা এমনভাবে রয়েছে, দেখা যায় কোন বিনিয়োগকারী বড় আকারের বিনিযোগ করবে বলে ১০টি প্লট নিয়ে রেখেছে। আমরা যখন বলি আপনার প্রতিষ্ঠান এখন এক্সপানশনে না গেলে দুই একটা প্লট ছাড়তে পারেন। তখন হয়তো তিনি একটি প্লট ছেড়ে দেন, এভাবে।"
তিনি আরও বলেন, "দেশে নতুন নতুন বিদেশি বিনিয়োগ আসছে যেটা প্রমাণ করে বাংলাদেশে এখন বিনিয়োগের সুবাতাস বইছে। বিনিয়োগকারীদের চাহিদার জন্য নতুন আরও ৩ টি ইপিজেড নির্মাণ করা হবে। পটুয়াখালী, যশোর ও গাইবান্ধায় হবে এ তিনটি নতুন রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল।"
এছাড়াও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্প নগরে ১১৫০ একর জমিতে হচ্ছে 'বেপজা ইকোনোমিক জোন'। সেখানে ২৫০টির বেশি প্লট পেতে ৭৮টি প্রতিষ্ঠান আবেদন করেছে। প্রাথমিকভাবে ১১৯ টি প্লট বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। এখানে ৫৩৯টি প্লট হবে। এটা চালু পুরোপুরি চালু হলে প্রায় ৫ লাখ কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে বলে জানান বেপজার এই কর্মকর্তা।
নাজমা বিনতে আলমগীর বলেন, দেশের ৮টি ইপিজেডে প্রায় ৪ লাখ ৬০ হাজার কর্মী কাজ করছেন। যেখানে অক্টোবর পর্যন্ত ৪৫৯টি ফ্যাক্টরি চালু আছে। এখন পর্যন্ত প্রায় ৯০ হাজার মিলিয়ন ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছে।
এই কর্মকর্তা জানান, এই অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোতে ৪ লাখ ৪৬ হাজার নারী কর্মী আছেন, যা মোট কর্মীর ৬৭ শতাংশ।
তিনি বলেন, "বাংলাদেশের ৫০ শতাংশ নারী। এদের প্রডাকটিভ ওয়ার্ক ফোর্সে না আনলে দেশের অর্থনীতির অগ্রগতি হবে না। তাই শুরু থেকেই বেপজার টার্গেট ছিল এই গ্রুপটাকে প্রডাকটিভে নিয়ে আসার। প্রতিটি ইপিজেডে হাসপাতাল রয়েছে। শ্রমিকদের পরিবহনের ব্যবস্থা রয়েছে। তাদের সন্তানদের জন্য ডে কেয়ার রয়েছে। শ্রমিকদের জন্য পুষ্টিকর খাবারের ব্যবস্থা রাখা হয়।"