আশুগঞ্জে ধানের বাজারে বেচাকেনা অর্ধেকে নেমেছে
দেশে ধানের অন্যতম বৃহৎ পাইকারি বাজার আশুগঞ্জের জেলার ভিওসি ঘাট ধানের মোকাম। আশুগঞ্জ বিদ্যুৎকেন্দ্র সংলগ্ন মেঘনা নদীর পাড়ে এই বাজারে প্রতিদিন প্রায় এক লাখ মণ ধান বেচা-কেনা হয়ে থাকে।
২৫০ টি চালকল এখানকার ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে ধান কিনে নিয়ে যান।
তবে গত এক সপ্তাহ ধরে অর্ধেকেরও নিচে নেমে এসেছে এখানকার বেচা-কেনা। এক সপ্তাহ ধরে অন্যতম বৃহৎ এই মোকামে ধানের ক্রেতা কমেছে বলেও জানান ব্যবসায়ীরা।
চালকল মালিকদের দাবি, চালের দাম না বাড়লে ধানের দামও বাড়বে না। কারণ চালকল এবং বাজারে পর্যাপ্ত চালের মজুদ থাকায় আগের কেনা ধান এখনও চালকলেই পড়ে রয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, কিশোরগঞ্জ, নেত্রকোণা, ময়মনসিংহ, সুনামগঞ্জ, সিলেট ও হবিগঞ্জসহ বিভিন্ন জেলার হাওরাঞ্চলে উৎপাদিত ধান কৃষক ও ব্যবসায়ীরা নৌপথে আশুগঞ্জ মোকামে নিয়ে আসেন। প্রতিদিন ভোরে ভিওসি ঘাটে ভিড়ে ধান-বোঝাই শতাধিক নৌকা। সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত চলে মোকামের ধান বেচা-কেনা কার্যক্রম। সেখান থেকে ট্রাকে করে সেই ধান পৌঁছে যায় চালকলগুলোতে। আশুগঞ্জের আড়াইশ চালকলের ধানের যোগান দেয় এই মোকাম। পর্যাপ্ত পরিমাণ ধান মোকামে থাকলেও দাম কম হওয়ায় বেচা-কেনার হার কমেছে। আগে প্রতিদিন প্রায় এক লাখ মণ ধান বেচা-কেনা হলেও গত এক সপ্তাহ ধরে মাত্র ২৫ থেকে ৩০ হাজার মণ ধান বেচা-কেনা হচ্ছে।
বর্তমানে আশুগঞ্জ মোকামে বিআর-২৮ ও বিআর-২৯ জাতের ধান বেশি নিয়ে আসছেন ব্যবসায়ীরা। প্রতি মণ বিআর-২৮ ধান বিক্রি হচ্ছে ৮০০ থেকে ৮৫০ টাকা ও বিআর-২৯ ধান বিক্রি হচ্ছে ৭৫০ থেকে ৭৬০ টাকায়। আর বাজারে প্রতি বস্তা (৫০ কেজি) বিআর-২৮ ধান বিক্রি হচ্ছে ১৬৫০ থেকে ১৭০০ টাকা ও বিআর-২৯ চাল বিক্রি হচ্ছে ১৫৮০ থেকে ১৬০০ টাকায়।
তবে মোকামে যে দামে ধান বিক্রি হচ্ছে ব্যবসায়ীরা এর বেশি দাম দিয়ে ধান ক্রয় করার কথা জানিয়েছেন। কিন্তু চাতালকল মালিকদের চাহিদা কম থাকায় বাধ্য হয়েই লোকসান দিয়ে ধান বিক্রি করতে হচ্ছে তাদের। এর ফলে ধান বিক্রি নিয়ে ব্যবসায়ীদের পাশাপাশি কৃষকরাও বিপাকে পড়েছেন ।
কিশোরগঞ্জের মিঠামইন উপজেলার কৃষক জাহাঙ্গীর আলম জানান, চলতি মৌসুমে তিনি ১২ কানি (১২০০ শতাংশ) জমিতে বিআর-২৯ ধানের চাষ করেছেন। ঘরে তুলতে পেরেছেন ৫০০ মণ ধান। সবকিছু মিলিয়ে প্রতি মণ ধানে তার খরচ পড়েছে ১০০০ টাকা। কিন্তু মোকামে দাম জানতে এসে দেখেন ৮০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে ধান। তাই আর ধান বিক্রি না করে ঘরেই ফেলে রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তিনি। কৃষি কার্ড না থাকায় সরকারের কাছেও ধান বিক্রি করার উপায় নেই তার।
আশুগঞ্জ উপজেলার সোহাগপুর গ্রামের ধান ব্যবসায়ী উজ্জ্বল খান জানান, ২০ বছর ধরে তিনি ধান ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। বিভিন্ন জায়গা থেকে ধান কিনে এনে আশুগঞ্জ মোকামে বিক্রি করেন। মোকামে পর্যাপ্ত পরিমাণ ধান থাকলেও গত এক সপ্তাহ ধরে ধানের দাম কম। কৃষকদের কাছ থেকে ধান কেনার পর মোকাম পর্যন্ত নিয়ে আসতে যে খরচ হয়েছে তার চেয়ে কম দামে ধান বিক্রি করতে হচ্ছে তাদের।
সরাইল উপজেলার বিটঘর গ্রামের আরেক ধান ব্যবসায়ী বিল্লাল মিয়া জানান, “কৃষকদের কাছ থেকে আমি বিআর-২৮ ধান ৯০০ টাকা মণ এবং বিআর-২৯ ধান কিনেছি ৮০০ টাকায়। এর সাথে আরও অনেক খরচ আছে। কিন্তু মোকামে এনে বিআর-২৮ বিক্রি করতে হয়েছে ৮০০ টাকা ও বিআর-২৯ বিক্রি করতে হয়েছে ৭৬০ টাকায়। এক হাজার মণ ধান বিক্রি করে আমার ৫০ হাজার টাকা লোকসান হবে।”
কাউসার আহমেদ নামে আশুগঞ্জের এক চালকল মালিক জানান, চালের দাম কম হওয়ায় ধানের দামও কমে গেছে। মোকামে যে পরিমাণ ধান নিয়ে আসেন ব্যবসায়ীরা সেই পরিমাণ চাহিদা নেই। বাজারে চালের পর্যাপ্ত মজুদ রয়েছে। চালের দাম না বাড়া পর্যন্ত ধানের দাম বাড়বে না। চাতালকলে আগের কেনা অনেক ধান এবং চাল পড়ে আছে। লোকসান হবে বলে সেগুলো বিক্রি করা হচ্ছে না।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে আশুগঞ্জ চালকল মালিক সমিতির সভাপতি জোবায়ের হায়দার বুলু বলেন, এক সপ্তাহ আগেও ধানের দাম ভালো ছিল। কিন্তু ধানের সাথে সামঞ্জস্য রেখে চালের দাম বাড়েনি। এর ফলে ধানের দাম এখন নিম্নমুখী। ধানের সাথে চালের দামের সামঞ্জস্য রাখতে হবে। এছাড়া ধানের দাম বাড়ানো সম্ভব নয়।
তিনি জানান, কাঙ্ক্ষিত দাম না পাওয়ায় অনেক চাতালেই আগের চাল অবিক্রিত রয়েছে। তিনি দাবি করেন, চলতি মূল্যে চাল বিক্রি করলে চাতাল মালিকদের লোকসান গুণতে হবে।