আন্তর্জাতিক বাজারে চিনির দাম কমলেও, কমেনি চট্টগ্রামের পাইকারি বাজারে
দেশের সবচেয়ে বড় পাইকারি বাজার চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জে চিনি বিক্রি হচ্ছে মণ প্রতি (প্রায় ৪০ কেজি) ২ হাজার ৬৬০ টাকায়। আন্তর্জাতিক বাজারে চিনির দাম আগের চেয়ে কিছুটা কমলেও, দেশীয় বাজারে চিনি বিক্রি হচ্ছে আগের সেই বর্ধিত দামেই।
ইনভেস্টিং ডট কমের তথ্যমতে, গত চার দিনে আর্ন্তজাতিক বাজারে প্রতিটন চিনির দাম কমেছে ১৩ ডলার বা ১ হাজার ১৭০ টাকা। ফলে ১২ নভেম্বর প্রতিটন চিনির দাম নেমে আসে ৫২৬ ডলারে। এর সঙ্গে ১০ হাজার টাকা খরচ যোগ করে প্রতিটন চিনির মূল্য দাঁড়ায় ৪৮ হাজার ৩৪০ টাকা। এবং মণ প্রতি চিনি আমদানি করা হয় ১ হাজার ৮০৪ টাকায়।
আন্তর্জাতিক বাজারে গত ১৬ নভেম্বর প্রতিটন চিনি বিক্রি হয়েছে ৫১৩ ডলারে। ১০ হাজার টাকা খরচসহ বাংলাদেশি টাকায় প্রতিটন চিনির ক্রয়মূল্য দাঁড়ায় ৪৭ হাজার ১৭০ টাকা এবং মণ প্রতি (৩৭ দশমিক ৩২ কেজি) মূল্য দাঁড়ায় ১ হাজার ৭৬০ টাকায়।
এদিকে, দেশের ভোগ্যপণ্যের সবচেয়ে বড় পাইকারি বাজার চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জে গত দুই সপ্তাহ ধরে প্রতিমণ চিনি বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার ৬৬০ টাকায়। সেই হিসেবে, আন্তর্জাতিক বাজারের ক্রয়মূল্যের চেয়ে ৯০০ টাকা বেশি দামে চিনি বিক্রি হচ্ছে দেশীয় বাজারে।
খাতুনগঞ্জের পাইকারি চিনি ব্যবসায়ী মেসার্স ইসমাইল ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী মো. ইসমাইল হোসেন বলেন, "দীর্ঘ ৭ থেকে ৮ মাস ধরে পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জে চিনির দাম উর্ধ্বমুখী। এই সময়ে প্রতিমণ চিনির দাম ২ হাজার ২০০ টাকা থেকে দফায় দফায় বেড়ে ২ হাজার ৮৫০ টাকায় পৌঁছাছে।"
বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) গত ১১ অক্টোবর থেকে চিনির নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক (আরডি) ৩০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২০ শতাংশে নিয়ে আসে। এরপর থেকে প্রায় ২০০ টাকা কমে, ২ হাজার ৬৫০ থেকে ২ হাজার ৬৬০ টাকা দরে চিনি বিক্রি হচ্ছে দেশীয় বাজারে।
এরমধ্যে আন্তর্জাতিক বাজারে চিনির দামে উত্তান-পতন দেখা দিলেও দেশের বাজারে নিত্য প্রয়োজনীয় এই পণ্যের দাম কমেনি, বরং আন্তর্জাতিক বাজারের তুলনায় প্রতিমণ চিনিতে ৫০০ থেকে এক হাজার টাকা বেশি দামে চিনি বিক্রি করেছেন আমদানিকারকরা।
ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করেন, আমদানিকৃত মূল্যের চেয়ে প্রতিমণ চিনিতে ২০০ টাকা মুনাফা করাই যথেষ্ট। কিন্তু আমদানিকারকরা সিন্ডিকেট করে চিনিসহ ভোগ্যপণ্যের বাজার অস্থিতিশীল করে তুলছে। ফলে দেশীয় বাজারে প্রায় প্রতিটি ভোগ্যপণ্যের দাম উর্ধ্বমুখী।
ভোগ্যপণ্য আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান মেসার্স আর এম ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী আলমগীর পারভেজ বলেন, "শুধু দেশীয় বাজার নয়, আর্ন্তজাতিক বাজারেও চিনিসহ বেশিরভাগ পণ্যের দাম উর্ধ্বমুখী।"
দীর্ঘদিন ধরে আর্ন্তজাতিক বাজারে নিত্যপণ্যের দাম উর্ধ্বমুখী থাকায় দেশীয় বাজারে এসব পণ্যের দাম বেড়েছে। তবে সরকার শুল্ক কমিয়ে আনায় চিনির দাম কিছুটা কমেছিল। কিন্তু আর্ন্তজাতিক বাজারে হঠাৎ কিছুটা দাম কমলেও দেশীয় বাজারে এর প্রভাব পড়তে বা দাম কমতে মাসখানেক সময় লাগবে বলে জানান এই ব্যবসায়ী।
প্রতিমণ চিনিতে ৯০০ টাকা মুনাফা করার বিষয়ে পারভেজ বলেন, "শুধুমাত্র আন্তর্জাতিক বাজার নয়, দেশীয় বাজারে পণ্যের চাহিদা ও সরবরাহের ওপর নির্ভর করছে পণ্যের দাম। চাহিদার চেয়ে বাজারে পণ্যের সরবরাহ কম থাকলে পণ্যের দাম বৃদ্ধি পায়। একইভাবে চাহিদার চেয়ে সরবরাহ কম হলে বাজারে পণ্যের দাম কমতে শুরু করে।"
এদিকে খুচরা বাজারে দীর্ঘদিন ধরে চিনি বিক্রি হচ্ছে ৭৫ থেকে ৮০ টাকা দরে। এনবিআর-এর শুল্ক কমানোর পর পাইকারি বাজারে দাম কিছুটা কমলেও তেমন প্রভাব নেই খুচরা বাজারে।