বৃষ্টির দিনে যেভাবে গাড়ি চালাবেন, গবেষণা কী বলছে?
বৃষ্টির সময় গাড়ি চালানো কত কঠিন- তা চালকমাত্রই জানেন। বৃষ্টিতে কমে আসে দৃষ্টিসীমা, তুমুল বর্ষণ হলে দুহাত দূরের রাস্তাও দেখা যায় না। হঠাৎ করে ব্রেক চেপে গাড়ি থামানোও কঠিন- কারণ বৃষ্টির কারণে টায়ারের 'গ্রিপ' পিছলে যায়। শুকনো মৌসুমের পর হঠাৎ করে যখন বৃষ্টি আসে তখন রাস্তায় এতদিন থেকে জমে থাকা তেল ও গ্রিজ বৃষ্টির পানিতে ভিজে আরও পিচ্ছিল করে তোলে পথকে।
চালককে শুধু রাস্তার দিকে নজর রাখলেই চলে না, যাত্রীদের বিড়ম্বনাও থাকে। যেমন ধরুন বৃষ্টির দিনে গাড়িতে করে পরিবার নিয়ে বেড়াতে যাচ্ছেন। পিছনের সিটে আপনার বাচ্ছারা কখনো উচ্ছ্বসিত, উত্তেজনায় কখনো বা শোরগোলও করছে। এমন হাজার রকম ঘটনায় চালকের মনঃসংযোগ নষ্ট হতে পারে। আর তাতে ঘটতে পারে দুর্ঘটনা। বৃষ্টিতে যার ঝুঁকি অনেক বেড়ে যায়।
এজন্য বৃষ্টির সময় বেশিরভাগ চালক বাড়তি সতর্ক থেকে কম গতিতে গাড়ি চালান, ওভারটেকিং বা সামনের গাড়িকে পাশ কাটানোও কমান।
তবে কিছু বাজে ড্রাইভার—যারা নিজেকে রাস্তার রাজা ভাবেন—থোড়াই কেয়ার করেন সতর্কতার। বৃষ্টির দিনে তাদের মাধ্যমেই দুর্ঘটনার ঝুঁকি থাকে সবচেয়ে বেশি। আসুন জেনে নেওয়া যাক এনিয়ে গবেষণা কী বলে-
বিপদকে অবহেলা
গবেষণা বলে, সাধারণত বৃষ্টির দিনে বেশিরভাগ মানুষ সাবধানেই গাড়ি চালায়। তবে কেউ কেউ বিপদকে খাটো করে দেখে, আর তাতে দুর্ঘটনার ঝুঁকিই বাড়ে কেবল।
সড়কে চালকদের আচরণ নিয়ে এপর্যন্ত যত গবেষণা হয়েছে, তার বেশিরভাগই জরিপ-ভিত্তিক। এছাড়া রয়েছে ড্রাইভিং সিম্যুলেশন ও গবেষকদের দ্বারা একটি নির্দিষ্ট মেয়াদে চালকদের মনিটর করার পদ্ধতিমূলক গবেষণা।
বৃষ্টির সময়ে চালকদের আচরণ নিয়ে গবেষণার সংখ্যা বেশ সীমিত। ফলে গবেষণার ধরনের ওপর ভিত্তি করে নানান রকম মিশ্র ফলাফলই আপনি খুঁজে পাবেন।
ইরানের চালকদের নিয়ে করা এক গবেষণায় উঠে এসেছে বয়সের ভূমিকা। এতে দেখা যায়, মধ্যবয়সী ইরানি চালকেরা বৃষ্টির সময় তরুণ চালকদের থেকে কম সাবধান থাকেন। এ থেকে ধারণা করা হয়, তরুণদের থেকে বেশি অভিজ্ঞতা থাকার কারণেই তাদের আত্মবিশ্বাস বেশি, ফলে তারা বাদলা দিনের ঝুঁকি নিয়ে চিন্তিত কম হন।
একই গবেষণায় আরও দেখা গেছে লিঙ্গ-ভিত্তিক পার্থক্য। যেমন পুরুষের চেয়ে বেশি সতর্ক থাকেন নারী চালকেরা। বৃষ্টির সময়ে তাদের ক্ষেত্রে গাড়ির গতি বাড়ানোর নজির কম, ট্রাফিক আইনও তারা কম লঙ্ঘন করেন।
এতে আরও উল্লেখ করা হয় যে, বৃষ্টির সময় গাড়ি চালানোর ক্ষেত্রে সিঙ্গেলদের চেয়ে কম ট্র্যাফিক আইন লঙ্ঘন করেন বিবাহিতরা।
অনেক গাড়ি চালককেই বিকট শব্দে লাগাতার হর্ন বাজিয়ে গাড়ি ছোটাতে দেখা যায়। কিন্তু, এসব চালকের মধ্যে নারীর সংখ্যা খুবই কম বলে উল্লেখ করেছেন গবেষকরা। তবে বিভিন্ন গবেষণায় বৃষ্টির সময়ে তরুণ চালকদের গাড়ি চালানোর বিষয়ে ভিন্ন ভিন্ন তথ্য উঠে এসেছে।
যুক্তরাষ্ট্রে করা এক গবেষণায় দেখা গেছে, মধ্যবয়সী বা আরও বেশি বয়সের চালকেরা (তরুণ চালকদের তুলনায়) ধীর গতিতে গাড়ি চালান, আর বৃষ্টির সময়ে তাদের মধ্যে গতিসীমা মেনে চলার হারও বেশি। এ গবেষণায় বলা হয়েছে, তরুণদেরই আসলে বেশি জোরে গাড়ি চালানোর সম্ভাবনা বেশি, আর তাতে তাদের দুর্ঘটনাগুলিও মারাত্মক হয়।
আরেকটি বিষয় হলো, উইন্ডশিল্ড ওয়াইপারের সঠিক ব্যবহার করতে না পারা। এজন্য অনেক চালকের দৃষ্টিসীমা আরও সীমিত হয়ে পড়ে।
ঝুঁকি যেভাবে কমাবেন
বৃষ্টির সময়ে চালকদের আচরণ সম্পর্কে ভালোমতো জানাশোনা থাকলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ যথাযথ ব্যবস্থা নিয়ে সড়কে ঝুঁকি কমাতে পারবেন। যেমন- বৃষ্টির সময়ে কোনো সড়কে স্বাভাবিকের চেয়ে কম গতি সীমা আরোপ, বা সতর্কতার সাইন দিয়ে চালকদের অবহিত করা।
এবিষয়ে চালকদের যথাযথ শিক্ষাদানের দরকারও আছে। যেহেতু কম বয়সী পুরুষ তথা তরুণেরা বেপড়োয়া চালক বেশি হন—তাই তাদের খারাপ আবহাওয়ার ঝুঁকি সম্পর্কে সঠিকভাবে বোঝাতে হবে।
সহায়তা করতে পারে নতুন প্রযুক্তিও। অ্যাডাপটিভ ক্রুইজ কন্ট্রোলের মতো স্বয়ংক্রিয় গতি ব্যবস্থাপক পদ্ধতি ব্যবহারকে উৎসাহিত করতে পারে গাড়ি প্রস্তুতকারকেরা। এই পদ্ধতি সামনের গাড়ির সাথে চালকের বাহনের নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখে। তবে সবচেয়ে বড় কথা, যেকোনো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা এড়াতে বৃষ্টির দিনে ড্রাইভারদের একটু বাড়তি সতর্ক থাকাই উচিত।
গাড়ি চালানোর মৌলিক জ্ঞানই এক্ষেত্রে প্রধান ভূমিকা রাখতে পারে। যেমন গতি কম রাখা, হেডলাইট জ্বালিয়ে রাখা এবং আপনার ও সামনের গাড়িটির মধ্যে কমপক্ষে তিন থেকে পাঁচ সেকেন্ডের দূরত্ব বজায় রাখা। ধীরে গতি বাড়াতে বা কমানোর চেষ্টা করবেন, আর খারাপ আবহাওয়ায় অখণ্ড মনোযোগ রাখুন ড্রাইভিং- এই।
সূত্র: স্ক্রোল ডটইন