কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সাহায্য নিয়ে তোলা ছবির পুরস্কার জয়, আলোকচিত্রীর প্রত্যাখ্যান
বরিস এলডাগসেন নামের এক আলকচিত্রীর কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (এআই) সাহায্যে তৈরি একটি ছবি সম্প্রতি 'সনি ওয়ার্ল্ড ফটোগ্রাফি অ্যাওয়ার্ডস' এ প্রথম পুরষ্কার লাভ করেছে। কিন্তু এআইয়ের ছবির জন্য অ্যাওয়ার্ডে আলাদা বিভাগ না থাকায় শিল্পী পুরস্কারটি প্রত্যাখ্যান করেছেন।
এলডাগসন 'ওয়ার্ল্ড ফটোগ্রাফি অর্গানাইজেশন' কর্তৃক আয়োজিত অ্যাওয়ার্ডে ক্রিয়েটিভ ক্যাটাগরিতে 'দ্য ইলেক্ট্রিশিয়ান' নামের ছবিটি জমা দিয়েছিলেন। ঐ ছবিতে এআইয়ের সাহায্যে বিংশ শতাব্দীর দুইজন নারীকে সাদাকালো ফ্রেমে খুবই চমৎকারভাবে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে।
অ্যাওয়ার্ডে পুরস্কার হিসেবে ছিল নগদ ৫ হাজার ডলার, সনি ক্যামেরার যন্ত্রপাতি ও লন্ডন ভ্রমণের সুযোগ। এছাড়াও বই প্রকাশ ও প্রদর্শনীর মাধ্যমে এলডাগসনের বিশ্বব্যাপী নিজের খ্যাতি অর্জনের সুযোগও ছিল। কিন্তু তবুও পুরষ্কার নিতে রাজি হননি বার্লিন ভিত্তিক এই ফটোমিডিয়া শিল্পী।
এলডাগসন মূলত 'সুডোমনেশিয়া: ফেইক মেমোরিস' নামের ফটোসিরিজের অংশ হিসেবে ছবিটি এঁকেছিলেন। সুডোমনেশিয়া একটি ল্যাটিন শব্দ যার অর্থ মিথ্যা স্মৃতি।
২০২২ সাল থেকে তৈরি করা ফটো সিরিজটিতে এলডাগসন মূলত এআইয়ের সাহায্যে কাল্পনিক ঘটনাকে ইমেজের মাধ্যমে ফুটিয়ে তুলেছিলেন। একইসাথে ছবিগুলো তৈরির ক্ষেত্রে যে এআই টুলের সাহায্য নেওয়া হয়েছে, সেটাও প্রজেক্টের পেইজে উল্লেখ করেছেন।
প্রজেক্ট পেইজে বলা হয়, "ভিজুয়াল ল্যাঙ্গুয়েজ ব্যবহার করে এলডাগসন ১৯৪০ এর দশকের কাল্পনিক ছবিগুলো তৈরি করেছেন। সূক্ষ্মতা আনতে এআই ইমেজ জেনারেটর দিয়ে ছবিগুলো ২০ থেকে ৪০ বার এডিট করা হয়েছে। ফটোগ্রাফি যেমন পেইন্টিং এর জায়গা দখল করেছে ঠিক তেমনি ভবিষ্যতে এআইও ফটোগ্রাফির জায়গা দখল করে নেবে।"
গত ১৪ মার্চ এলডাগসনের ছবিটিকে ক্রিয়েটিভ ক্যাটাগরির শটলিস্টে বিজয়ী হিসেবে ঘোষণা করা হয়। এরপর শিল্পী নিজের ব্লগে পুরষ্কার ও এআই নিয়ে নিজের ভাবনা প্রকাশ করেন।
এলডাগসন বলেন, "সনি ওয়ার্ল্ড ফটোগ্রাফি অ্যাওয়ার্ডস ২০২৩ এর ক্রিয়েটিভ ক্যাটাগরিতে পুরষ্কার জিতে আমি খুবই আনন্দিত। ছবিটি এআই ও আমার ফটোগ্রাফি জ্ঞানের সংমিশ্রণে সৃষ্টি করা হয়েছে। এআই ইমেজ জেনারেটরের সাহায্য কাজটি করার ক্ষেত্রে আমি মূলত নির্দেশক হিসেবে কাজ করেছি।"
ব্লগে এলডাগসন আরও বলেন, "বিষয়টা এমন নয় যে, বাটনে চাপ দিলাম আর ছবি তৈরি হয়ে গেল। বরং প্রযুক্তিটিকে টেক্সট আঁকারে সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা প্রদান এবং বিভিন্ন প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার ও কৌশলের প্রয়োগ করে ছবিগুলো তৈরি করতে হয়।"
এলডাগসন জানান, এইআইয়ের সাহায্য তৈরি করা এই ছবিগুলোকে তিনি 'ফটোগ্রাফ' নয়, বরং ইমেজ হিসেবে উল্লেখ করতে চান। কেননা এগুলো ভিজুয়াল ল্যাঙ্গুয়েজের সাহায্যে কৃত্রিমভাবে তৈরি করা হয়েছে।
পুরষ্কার প্রত্যাখ্যানের ইস্যুতে আলোকচিত্রী এলডাগসন বলেন, "আমি সাধারণ ছবি আর এআই নির্মিত ইমেজের মধ্যেকার পার্থক্যের বিষয়টিকে সকলের সামনে আনতে চাই। যাতে করে এআইয়ের তৈরি ইমেজের জন্যও অ্যাওয়ার্ডে পুরষ্কারের আলাদা বিভাগ তৈরি করা হয়।"
অন্যদিকে এলডাগসনের এআইয়ের সাহায্যে বানানো ছবিটি পুরষ্কার পাওয়ায় ব্যাপক বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে। ক্যামেরার ব্যবহার না করেও অন্য ফটোগ্রাফারদের তোলা ছবিকে পেছনে ফেলে পুরষ্কার জিতে নেওয়ায় বেশ কয়েকজন শিল্পী এর সমালোচনাও করেছেন।
নিজের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা নোটে অ্যাওয়ার্ড প্রত্যাখ্যানের সিদ্ধান্ত জানিয়ে এলডাগসন প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়ার বিষয়টিকে একটি 'এক্সপেরিমেন্ট' এর অংশ হিসেবে অভিহিত করেছেন। একইসাথে একটি স্বনামধন্য আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় এআইয়ের তৈরি ইমেজের পুরষ্কার প্রাপ্তিকে 'ঐতিহাসিক মুহূর্ত' বলেও দাবি করেছেন।
নোটে আরও বলা হয়, "অ্যাওয়ার্ড অনুষ্ঠানে এআই ইমেজ আর ফটোগ্রাফিকে একই ক্যাটাগরিতে রাখা উচিত নয়। কেননা দুটি ভিন্ন সত্ত্বা। এআই আর ফটোগ্রাফি এক নয়। তাই আমি পুরস্কারটি গ্রহণ করবো না।"
দ্য ওয়ার্ল্ড ফটো অর্গানাইজেশনের কাছে ফটোগ্রাফি নিউজ মিডিয়া পেটাপিক্সেলের পক্ষ থেকে এ সম্পর্কে জানতে চাওয়া হলেও এখন পর্যন্ত কোন মন্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে অ্যাওয়ার্ডের ওয়েবসাইট থেকে এলডাগসনের সকল ছবি ইতোমধ্যেই সরিয়ে ফেলা হয়েছে। এছাড়াও ক্রিয়েটিভ ক্যাটাগরির বিজয়ীর তালিকায়ও বর্তমানে কোনো নাম দেখা যাচ্ছে না।
সূত্র: পেটাপিক্সেল